স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গিয়ে আমার দৃষ্টিগোচর হয় "সবিনয় নিবেদন" পত্র উপন্যাসটি। বই এর নামটায় আমাকে কাছে টেনেছে। কয়েকবার পড়েছি। কেন পড়েছি তা আমি শিওর না। রাজর্ষি আর ঋতি রায়ের আচমকা দেখা হওয়া; কারো মুখোমুখি না হওয়ার উষ্ণতা খুব কাছে টানবে টিনএজদের। পড়তে পড়তে তারসাথে কিছু ব্যাপারে আমার একাত্বতা আর অন্য কিছু ব্যাপারে বৈপরিত্ব তৈয়ার হয়েছে।
"আরেকজাতের দু পেয়ে ধেড়ে ইঁদুর। যাদের বাস শহরে।"
বুদ্ধদেব গুহ এখানে ঈর্ষাকাতর মানুষদের তুলনা করেছেন ইঁদুরের সাথে। মানুষের সাথে ঈর্ষা করাটাই যাদের মন-মগজে গেঁতে বসে তাদের। ইঁদুর যেমন কিছু একটা তার দাতে কাটা চায়। নতুবা তার সেই বিরহে মরতে হয়। হিংসুটে মানুষগুলোও তেমনই।
উনার এই উপমাটা আমার দারুণ লেগেছে। কারণ আমরা এখন যে পরিস্থতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার জন্যে। এই যে দেখুন; আমাদের সমাজ এমন কিছু ধেড়ে ইঁদুরের হাতে যারা আমাদের কুটে খাওয়া ছাড়া থাকতেই পারছেনা। পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে, আমাদের মদের মতো গিলতে না পারলে বুঝি তেনাদের প্রাণ যায় যায় করে।
..." বাঘিনী খোঁজে বাঘ এখন। ওদের মিলনকাল এই সময়টি। শুধু বাঘের বেলাতেই বা কেন, মানুষের এই প্রখর গ্রীষ্ম আদর্শ মিলনকাল।..."
বুদ্ধদেব গুহের এই কম্পিয়ারটা আমার ভাল লাগেনা। অযৌক্তিক আর গাজা খোরি কথা মনে হয়েছে। কারণ মানুষের বেলাতে আদর্শ মিলনকাল শীতকাল নতুবা বৃষ্টির কাল। গরমের দিনে ঘুমানোর সময় মানুষ তার শরীরে সাথে বেডসিট লাগলেও ধুর করে উঠে সেখানে মিলনের কাছে কেমনে ঘেসে? কড়া রোদের দিনে মানুষ খোলা বারান্দায় ঘুমায়। আর মানুষ অনেকটা হাইড-সেক্সই পছন্দ করে।
তবে এসব কিছু বাদ দিয়ে আমার সবচে বিরক্ত লেগেছে তার রবিন্দ্রনাথ আর আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ের তসবিহ পাঠ। কোন বর্ণনা দিতে যাচ্ছে তো ওখানে মনে হচ্ছে রবিন্দ্রনাথের কবিতাংশ না আওড়ালে মহা অন্যায় হয়ে যাবে। আর যতসব যুক্তিকে আর্নেস্টের কষ্টিপাথরে ঘষা-মাঝা করিয়ে উপস্থাপন না করলে সে যুক্তি অগ্রাহ্য হবে। এই ব্যাপারটা "সবিনয় নিবেদন" গ্রন্থের অনেকটা ক্ষতি করেছে। পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হিশেবে ধরা দিয়েছে। আমার মনে হয়েছিলো ওনি বইটি লেখার সময় রবিন্দ্রনাথ আর আর্নস্টের সাহিত্যে মজে ছিলেন। হয়তো তা্য় তিনি উনাদের প্রভাব মুক্ত হয়ে লিখতে পারেননি। এটা একজন লেখকের অনেক কিছুই কেড়ে নেয়। গত লেখকের সাহিত্য পাঠ আমাদের যতটুকু জরুরত প্রভাবিত হওয়া তার চেয়েও বেশী দোষের। কারণ এই প্রভাবিত হওয়াটা একটা জাতির সাহিত্যকে আটকে রাখে। উন্মুক্ত হতে দেয়না।
".... যে নারী প্রকৃতই স্বাধীন, মুক্তি যার কাছে কথার কথা নয়, ধ্রুব সত্য; সেই সবচেয়ে বেশী পুরুষের কাছে ছোট হতে চায়, সমান হতে নয়।..."
খুব লাগলো তার এ কথাটা। এটাই প্রকৃত নারীবাদী বলে মনে হয়।
সব মিলিয়ে ভালই লেগেছে। ধন্যবাদ বুদ্ধদেব গুহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১