জাপানী আরবান লেজেন্ডে ফুটাকুচি-অনা হলো একটি অভিশপ্ত ডেমোনিক ফিগার। দেখতে একজন মধ্যবয়স্ক সুন্দরী মহিলার মত যার দীঘল কালো চুল রয়েছে। কিন্তু এই মহিলার মাথার পেছন দিকে রয়েছে একটি ভয়াবহ রকমের বড় মুখ। এই মুখটি যখন কথা বলে তখন মহিলার খুলি দুভাগ হয়ে যায়। এই মুখে কোন চোখ বা নাক নেই। এই মুখটি একটি আলাদা সত্তা। মহিলার দীঘল চুলগুলোকে সাপের মত করে চালিত করে মুখটি আর সেগুলো দিয়ে খাবার তুলে খায়। এই মুখটি সর্বদাই ক্ষুধার্থ থাকে। আর মহিলাকে চাপ দিতে থাকে খাবারের জন্য।
এই লেজেন্ড এর শুরু কয়েক হাজার বছর আগে যখন জাপানে একজন মধ্যবিত্ত লোকের প্রথম স্ত্রী মারা যায়। তখন তিনি আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন। লোকটির আগের বিয়ের একটি ছেলে ছিল আর এই মেয়েটির সাথে আরেকটি ছেলে হয়। কিন্তু জাপানে সে বছর প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ শুরু হয় আর দুটি বাচ্চাকে খাওয়ানোর ক্ষমতা ছিলনা লোকটির। তার দুনাম্বার স্ত্রী স্বামীর অজান্তে তার সৎ ছেলেকে বঞ্চিত করে নিজের ছেলেকে খাবার দিতে থাকে আর একটা সময়ে না খেতে পেয়ে ছেলেটি মারা যায়। এর কিছুদিন পর লোকটি বাগানে কাঠ কাটছিল আর তার স্ত্রী তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময়ে কুড়ালটি ছুটে গিয়ে মহিলার মাথার পিছে লাগে। লোকটি ভেবেছিল তার স্ত্রী হয়ত মারা যাবে কিন্তু মহিলা বেচে যান আর তার মাথার পিছনের ক্ষতটি ভালো না হয়ে সেখানে একটি ভয়াবহ আকৃতির মুখের সৃষ্টি হয়। যেটা সবসময় খেতে চাইত। খেতে না দিলে রাক্ষুসে আচরন শুরু করত। একটা সময়ে মুখটি কথা বলা শুরু করে আর তার স্বামীকে জানিয়ে দেয় যে তার প্রথম সন্তানের মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী আর মৃত ছেলেটির ক্ষুধার অভিশাপ তার উপরে এসে পরেছে। এরপর পরের দিন থেকে মেয়েটিকে আর দেখা যায়না.... ফুটাকুচি অনা কি হারিয়ে গেল? এমনটা আসলে হবার নয় ...
দুশ বছর পরের ঘটনা। এক বৃদ্ধ ছিল, অনেক ধনী ছিল সে। কিন্তু এতটাই কৃপণ ছিল যে স্ত্রীকে খাওয়াতে হবে সেই ভয়ে সে বিয়েই করেছিল না। এমন সময়ে একটা মেয়ে এসে তাকে বিয়ে করে যে মেয়েটা কোন খাবারই খেতনা। বুড়ো অনেক খুশি হয়। প্রতিদিন সকালে বুড়ো কাজের জন্য বের হয়ে যেত। কিন্তু একমাস পরেই বুড়ো খেয়াল করল তার বউ কখনো কিছু খায়না কিন্তু তারপরেও তার চালের গুদামের চাল দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। একদিন বাইরে যাবার নাম করে বুড়ো লুকিয়ে লক্ষ্য করতে থাকে তার বউকে আর সে দেখে তার বউয়ের মাথা পিছে একটি ভয়ংকর মুখ সৃষ্টি হয়েছে যেটা চুলগুলোকে হাতের মত ব্যাবহার করে চালগুলো মুখের মধ্যে পুরছে। বুড়ো আর্তনাদ করে উঠলে সে ফুটাকুচি অনার চোখে পরে যায় আর সে অজ্ঞান হয়ে পরে... এরপরে সেখান থেকেও ফুটাকুচি অনা গায়েব হয়ে যায় ...
লেজেন্ড বলে ফুটাকুচি অনা অমর.. সে কখনোই মরবে না। পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত তাকে এই অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭