ডাক্তার, নার্সদের চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাইতে চাইতেছে। মাত্রই একটি বাচ্চা প্রসব হল। বাচ্চাটা সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক। কোন রকম সমস্যা ডাক্তারের চোখে পড়ে নাই। শুধু একটি মাত্র ব্যাপার দেখে সবাই মারাত্বক ভাবে অবাক হয়েছে। বাচ্চাটার কপালে লেখা রয়েছেঃ মোটিভেটর। এইরকম লেখা নিয়ে কেউ জন্ম নিতে পারে ভাবে নাই কেউ।
বাচ্চাটাকে বাসায় নিয়ে আসা হইছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাকে নিয়ে লেখালেখি হইতেছে। একটি-দুইটা উদাহরণ দেইঃ
১. মোটিভেটর কপালে নিয়ে জন্ম নিল এক বাচ্চা।
২. সৃষ্টিকর্তা কি কোন মোটিভেটর পাঠালেন।
৩. দ্যা মোটিভেটর বেইবি।
এইরকম আরো অনেক। যাই হোক, বাচ্চা ১২ দিনের মাথায় কথা বলতে শুরু করল। তের দিনের মাথায় তার মাকে বলল, মা তুমি কি আইবিএ থেকে পড়ালেখা করেছ? তার কথা শুনে তো অবাক। কারণ সে জানেই না আইবিএ কি? তখন ছেলেটি বলল, পারলে নাতো, নাহলে এখন সিক্স ডিজিটের স্যালারি পেতে।
চৌদ্দ দিনের মাথায় বাচ্চাটি তার বাবাকে বলল, তুমি কি আইবিএ থেকে পড়ালেখা করেছে? তার বাবা হাসি-মুখে উত্তর দিল, নারে বাপ। আমি ডাক্তার।
উত্তর শুনে বাচ্চাটি হাসল, তারপরে বলল, ভুল করেছ বাবা্। আইবিএ থেকে পড়ালেখা করলে তোমার স্যালারি অনেক হতো। আইবিএ কি তুমি জানো না। সো স্যাড।
আমি এমনিতেই অনেক টাকা ইনকাম করি। তোর মা বেশিদূর পড়ালেখা করে নি। তাই তাকে গৃহিণী করেই রেখেছি। তাছাড়া টাকার তো অভাব নাই।
বুঝলাম। তুমি ভুল করেছ।
পনের দিনের মাথায় বাচ্চাটি হাঁটা শুরু করল। তাকে বাসার নিচে নামানো হল, সে নেমেই দৌড় দিল। এক দৌড়ে অন্য একজন বাচ্চার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোর শিক্ষার অভাব। আমার কাছে আয় মোটিভিশন দিয়ে দিব, তাই আর শিক্ষা লাগবে না। অন্য বাচ্চাটা তখন ঠিক মত বলতে পারে না, সে উত্তর দিল, আমাল কাছ থিকা দূলে যা, দূলে যা।
তবু সে হতাশ হল না, আবার বলল, আরে বোকা সত্যি দেখি তোর মোটিভিশন দরকার। আয় কাছে আয়।
সে যতই কাছে যায়, অন্য ছেলেটি দূরে যায়। যেন বাংলা সিনেমার ভিলেন নায়িকাকে ধরার চেষ্টা করতেছে। শেষে অন্য বাচ্চাটি দৌড়ে তার মায়ের নিকট যায়, মাকে বলে, মা মা, ও আমালে মোটিভিশন দিতে চায়। খুব খালাপ, খুব খালাপ।
ষোল দিনের মাথায় বাচ্চাটির একটি নাম দেওয়া হলঃ আয়মান সিদ্দিক। তাকে সবাই সিদ্দিক নামেই ডাকে। অন্য বাচ্চারা ঠিকমত না ডাকতে পেরে ডাকে, আলমাল ডিক। সিদ্দিক অন্যদের ডাকাতে রাগ করে না, বরং আদর করে তাদেরকে মোটিভিশন দিতে চায়। কিন্তু তাকে দেখলেই বাচ্চারা বলে উঠে, পালা পালা ডিক আসতেছে ডিক আসতেছে।
এইভাবে তার জীবনের এক’শ দিন শেষ হয়। ১০১ দিনে ফেইসবুক চালানো শুরু করে। সেখানে মোটিভিশনাল কথাবার্তা লিখে পোস্ট দেয়। লোকজন লাইক-কমেন্টে ভরিয়ে তোলে। সে খুব খুশি হয়। একদিন তার ডাক আসে কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবার জন্য। সে উৎসাহ নিয়ে সেখানে যায়।
প্রোগ্রামে গিয়ে দেখে অনেক লোকজন মানে বিশেষ করে তরুণরা এসেছে মোটিভিশন নিতে। সে খুব খুশি হয়। মনে মনে ভাবে, আরে বাচ্চারা যা নিতে চায় না, তরুণরা নিতে এসেছে। এখন থেকে এদেরকেই মোটিভিশন দিবে। বাচ্চারা বাদ।
তরুণরা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশেষ করে তার কপালের দিকে। যে কিনা জন্মগত মোটিভেটর। তরুণরাও মনে মনে খুশি হয়, আরে এমন জন্মগত মোটিভেটরই তো চাই।
-
হুমায়ূন শফিক
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৫