সন্ত্রাসবাদ কী?
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রথমেই শিক্ষকদের ছাত্ররা জিজ্ঞেস করবে, সন্ত্রাসবাদ কী? আসলেই এই সন্ত্রাসবাদ জিনিসটা কি? এটা কি খায়, না মাথায় দেয়? অল্প কথায় যদি বলি, তাহলে সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে আধুনিক বর্বরতা। আধুনিক বর্বরতা কি, সেটাই নিশ্চয় সবাই জানি। তবে প্রাচীনকাল থেকে যে বর্বর সমাজ গড়ে উঠেছে, সেগুলোই এখনকার দিনের পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়ে আধুনিক বর্বরতায় পরিণত হয়েছে।
বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে পশ্চিমি নৈতিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একটি ভয়াবহ বিপদ। কথাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, আবার তেমনভাবে গ্রহণ করতেও মনে চায় না। কারণ সন্ত্রাসবাদ শুধু কি পশ্চিমি নৈতিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কথা বলে, না এটা বলে সমগ্র মানব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীরা সমগ্র মানুষকে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনতে চায়। সেটাই মনে হয় তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বা আসল লক্ষ্যই বা কি সেটা তারাই ভাল বলতে পারবে।
সন্ত্রাসবাদী কে?
সন্ত্রাসবাদী কে? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে গবেষকরা হয়রান হয়ে গ্যাছে। যাওয়ারই কথা। আসল সন্ত্রাসবাদ কে, সেটা বের করা খুবই কঠিন কাজ। যদি এমন হয়, যিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন, আবার তিনিই সন্ত্রাসবাদী। এইসব ক্ষেত্রে আসলেই কে সন্ত্রাসবাদী সেটা বোঝা মুশকিল। ধরুন, আপনার সামনে পাঁচ লোক আছে, তারা সবাই আপনার পরিচিত আপনজন। তারা চাকরি বা ব্যবসা করে সংসার চালায়। তাদের দেখে আপাতদৃষ্টি কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই, তারা সন্ত্রাসবাদী। সন্ত্রাসবাদীরা হয়ত নিজেদের জন্য আলাদা সংগঠন তৈরি করে নিয়েছে। বলা যায়, গোয়েন্দা সংস্থার মত। আবার দেখা যায়, অনেক দেশের সরকার প্রধানরাই সন্ত্রাসবাদী। সেক্ষেত্রে জনগণের কি হাল একবার ভাবুন?
১৯৩০ সালে এবং ৪০ দশকে প্যালেস্তাইন গুপ্ত ইহুদীদের বলা হত ‘সন্ত্রাসবাদী’। ১৯৪২ সালে ঘটে ব্যাপক গণহত্যা। তারপর থেকেই পশ্চিমি হৃদয়ের কোন এক সংকীর্ণ কোণে জেগে উঠে সহানুভূতির ঢেউ। ফলে খানিকটা আকস্মিকভাবেই প্যালেস্তাইনের জিয়নিবাদী ইহুদীরা হয়ে যায় ‘স্বাধীনতা যোদ্ধা’। যে সন্ত্রাসবাদীর মাথার দাম ছিল ১ লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড তিনি হয়ে যান ইসরাইয়ের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যদি আমরা হেরে যেতাম, তাহলে আজ কি দাঁড়াতো? নিশ্চয় পাক্কিরা আমাদের দেখে বলত, ঐ যে সন্ত্রাসবাদীরা যাচ্ছে।
তাই ধীরাজে বোসের কথা অনুযায়ী, যে অর্থে জর্জ বুশ সন্ত্রাসবাদী সে অর্থে ওসামা বিন লাদেন সন্ত্রাসবাদী নয়।
কে সন্ত্রাস, কে ?
যখন সারা ভারত উপমহাদেশ এক ছিল। ইংরেজরা যখন আমাদের উপর কর্তৃত্ব করছিল, তখন যারা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদেরকে কিন্তু সন্ত্রাসী হিসিবেই তারা গণ্য করত। ভাষা আন্দোলনের সময় ক্ষমতায় থাকা দল ছাত্রদেরও সন্ত্রাসবাদী মনে করেছিল বলে গুলি চালিয়েছিল। আর ৭১’র কথা তো সবাই জানে।
আফগানস্তান নিয়ে অনেকেই কথা বলেন, অনেকেই সে দেশকে সন্ত্রাসের আখড়াও বলেন। কিন্তু কেন তারা এমন করতে বাধ্য হয়েছে কেউ জানার চেষ্টা করেছেন কি? ৭১ সালে যদি আমাদের দেশের ছেলেরা যুদ্ধ না করত, স্বাধীন হওয়া সম্ভভ ছিল না। তখন পাক্কিরা তাদের সন্ত্রাসী বলত। কিন্তু এখন? আফগাস্তানের অবস্থাও একই প্রায়। আইজাজ আহমেদ সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘আফগানস্তানে আগে মুসলমান সন্ত্রাসবাদী ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ই তাদের সৃষ্টি করেছিল ধর্ম নিরপেক্ষ বামপন্থীদের ঠেকাতে। ইরানে সি আই এর মদত পুষ্ট শাহের জমানা ধর্ম নিরপেক্ষ বামশক্তিদের নিশ্চিহ্ন করার পরেই শূণ্যতা ভরল ইসলামাবাদ। মিরে ইসলামিক গুপ্ত সমিতি গজিয়ে উঠেছিল সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদি জিয়নিবাদ মিলে জামাল আবদেল নাসেরের ধর্ম-নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী পরিকল্পনাকে পরাস্ত করার পর। প্যালেস্তানের ঐতিহাসিক ভূমিতে এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হোক যেখানে আরবি ও ইহুদীরা সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে, সংকীর্ণতা মুক্ত প্যালেস্তিনীয় জাতীয়তাবাদের এই দাবি নাকচ হয়ে যাওয়ার পরই প্যালেস্টাইনে হামাস জন্ম গ্রহণ করল।’ সুতরাং এটা সূর্যের আলোর মত স্ফটিক-স্বচ্ছ যে বিন লাদেন থেকে শুরু করে হামাস বা চেচেনিয়ার যে বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে ইতিহাসের সব থেকে শয়তান বানাবার চেষ্টা করা হচ্ছে এরা সকলেই সাম্রাজ্যবাদের লুণ্ঠন, অত্যাচার, আধিপত্য স্থাপনের উদগ্র এবং ধ্বংসাত্মক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিবাদের এক একটা রুপ।
যারা সুন্দরবনের পক্ষে তারাও কি সন্ত্রাসবাদীর আখ্যা পাচ্ছে সরকার কর্তৃক।
সুন্দরবন নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন। তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। কারণ কি? যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা কি ভেবেছে এই ছেলে-মেয়েগুলো সন্ত্রাসবাদী। নাকি সন্ত্রাসীদের দ্বারাই যারা আক্রান্ত হয়েছে। বোঝা মুশকিল।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কারা? আসলেই কারা?
এই প্রশ্ন অনেকদিন থেকেই মাথায় ঘোর-পাক খাচ্ছে। প্রশ্নটা তুললেই অনেকেই চুপ হয়ে যান, বা কানে কানে উত্তর দিতে হয়, এই অবস্থা। উত্তর কেন কানে কানে দিবেন, সরাসরিই বলুন, আমরা তো স্বাধীন দেশেরই নাগরিক। তাহলে কথা বলার স্বাধীনতা যদি হারিয়ে ফেলি, তাহলে আর স্বাধীন রইলাম কেমনে। তাহলে তো স্বাধীন না। একজন কানে কানে বললেন, এইসব প্রশ্ন করতে নাই।
দ্বিতীয়জন, গুলি খাবে।
তৃতীয়জন, হো হো হো। আসল সন্ত্রাসী তো জনগণ।
তৃতীয়জনের কথা শুনে আমি চমৎকৃত হই। জনগণ কেমনে সন্ত্রাস। সেটা নিয়ে অনেক কিছুই চিন্তা-ভাবনা করি, আসলেই কি তাই। তবে ভেবে ভেবে একটা ছোট খাট ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি, ‘জনগণই আসল সন্ত্রাসী। কথাটা সত্য কারণ জনগণ থেকেই সন্ত্রাসীদের জন্ম। জন্ম থেকেই কেউ সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায় না। লোকটা যে পরিবেশে থাকে, সেই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয় তাকে। তো সন্ত্রাসী পরিবারে জন্ম নিলে সে সন্ত্রাসী হবেই। আর বাংলদেশে সন্ত্রাস-পরিবারের অভাব নাই। তাই তৃতীয়জনের কথাটা আমি সত্য বলে ধরে নিলাম। দেশে এত এত সমস্যা সবাই চুপ। বুদ্ধিজীবীরা আঙ্গুল চোষে। ব্রাত্য রাইসুর একটা কবিতা আছে, শেষ দুই লাইন এইরকম,
তৃণভোজী, শান্তি চায়, শাকসজ্বি চায়
দিলে খায়, না দিলে ঘুমায়।
তো তাদের কথা বাদই দিলাম। তারা ঘুমায় থাকুক। বুদ্ধিজীবীরা ঘুমাক।
পরিশেষে, অনেক আজে-বাজে কথাই বললাম। এইগুলো কারও সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই। আমি সিরিয়াসলি লিখি নাই। সন্ত্রাসবাদীরা থাকুক জেগে, আমরা মরি মহা-সুখে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪