রেস্তুরার মালিক:
প্রত্যেক দিন একটি ছেলেকে রেস্তুরায় দেখা যাচ্ছে। এটা কোন সমস্যা না। তবে ছেলেটি সকালে আসে, এসেই এগ-অন-টোস্ট খায়। একই খাবার প্রত্যেকদিন। আমি রেস্তুরার মালিক। তবে নির্দয় নয়। এই আমেরিকায় কেউ কারো নয়। তবে ছেলেটিকে দেখে ভদ্র ও শিক্ষিত মনে হচ্ছে। অর্থকষ্টে আছে মনে হয়। কিন্তু আমার চোখের সামনে তাকে প্রত্যেকদিন একই খাবার খেতে দেখতে পারি না। একজনকে ফাও খাওয়ালে বিশেষ ক্ষতি তো হবে না।
ঐ যে ছেলেটি চলে এসেছে। চোখে চশমা। প্রত্যেকদিন যেখানে বসে, সেখানে বসে পড়ে। এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। মনে হয়, ওর্ডার দেওয়ার জন্য। একজন ওয়েটারকে বলে দিলাম, তাকে আজ স্পেশাল খাবার দিতে। আরও বলে দিলাম, আজকে তার বিল যাতে না নেয়।
কাস্টমার:
প্রত্যেকদিন এগ অন টোস্ট খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কোন খাবারের দাম কত কে জানে। হয়ত একটা খাবার খেলাম, তার দাম হয়ে গেল আমার এক মাসের খরচ। তখন তো মাথায় হাত। পড়াশোনা আর ভাল লাগছে না। দেশে থাকলেই হোত। শুধু শুধু এখানে আসলাম। এক মাসের মধ্যেই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে যদি দেশে ফিরতে পারতাম, দারুণ হোত।
রুম থেকে বের হয়ে সকালের নাস্তা খেতে প্রত্যেকদিন যে রেস্তুরায় যাই, সেখানে চলে গেলাম। বসে, আশে-পাশে তাকিয়ে ভাব বুঝলাম। তেমন কাউকে চোখে পড়ছে না। হয়ত ব্যস্ত আছে। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে।
একটু পর একজন ওয়েটার এসে আমার টেবিলে খাবার দিল। আমি বললাম, ওর্ডার দেই নি তো। খাবার দেখেই আমার চোখ চরক-গাছ।
এই গুলো আপনার জন্য ফ্রি। আজকে আপনাকে ট্রিট দেওয়া হচ্ছে।
কথাটা শুনে আমি কিছু বলতে পারলাম না। চোখে জল এসে ভরে যাচ্ছে। কিছুতেই থামাতে পারছি না। মনে মনে ভাবছিলাম, বিদেশীদের এত মায়া। পরক্ষণেই আরেকটা চিন্তা মাথায় ঢুকে গেল, মালিক হয়ত রোজ রোজ একই খাবার দিয়ে বিরক্ত হয়ে গ্যাছে।
সেদিনের মত খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে চলে এলাম। এরপর আর সেই রেস্তুরায় ঢুকি নি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:০৪