বসত-ভিটা, গাছ-পালা, গবাদি-পশু সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে একদিন সস্ত্রীক গ্রাম ছাড়ল এক জেলে গোষ্ঠী। তাদের টাকা-পয়সার টান লেগে থাকত, সবসময়। তবে সুখেই দিন-যাপন করছিল। পদ্মার কড়াল গ্রাসে সবকিছু ছাড়তে বাধ্য হল।
মধ্যরাত্রি, হঠাৎ করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল, এইরকম বৃষ্টিতে নাকি ইলিশের প্রজনন খুব ভাল হয়। বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে, মশুল-ধারে পড়তে শুরু করল, এবার সঙ্গে ঝাপটা বাতাস। বাতাসের খেলায় সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাঁশ ঝাড়গুলো দুমরে-মুচরে ভেঙ্গে পড়তে লাগল, একটা ঘরের উপর আস্ত একটা আম গাছ ভেঙ্গে পড়ল। তারা সকলে সময় মত বেড়িয়ে যেতে পেরেছিল বলে রক্ষা। না হলে সাত-আটটা লাশ পড়ে যেত ঘরের ভিতরে।
পদ্মার সঙ্গে তাদের এতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক, অথচ তা যেন আজ ভুলে গেছে। ঢেউগুলো এসে পাড়ে বাড়ি খাচ্ছে। বড় বড় মাটির খন্ড ভেঙ্গে পড়ছে পানিতে। সবার যখন ঘুম ভাঙ্গল, এক সঙ্গে পদ্মার পাড়ে এসে দেখল তাদের বাড়ি-ঘর গুলো থেকে একটু দূরেই পদ্মা’র পানি খেলা করছে।
যার যার বাড়িতে পৌছে প্রয়োজনীয় সবকিছু’র পুটলি বাঁধতে শুরু করল। কেউ কেউ বলল, যাম না, আমি। যারা এইকথাটা বলে বসে রইল, তাদের কেউ বাধা দিল না। নিজের জীবন নিয়ে পালাতে শুরু করল। ‘‘যাম না আমি’’ বলে যারা বাড়ি’র মাটি ধরে পড়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন সত্যি সত্যি মাটিতেই মিশে গেল। অন্যান্যরা যখন দেখল, অবস্থা বেগতিক, তখন ঝেড়ে দৌড় দিয়েছিল।
একেকটি গ্রাম ধ্বংস করতে খুবই কম সময় নিয়েছে। রাতের বেলা যাকে এতটা হিংস্র দেখাচ্ছিল, দিনের বেলা তাকে ততটাই সুন্দর ও নীরব দেখাচ্ছে। যাদের ঘর-দোর পদ্মার পেটে চলে গিয়েছিল, তারা সকালবেলা দেখতে এসেছে, কতদূর ধ্বংস হল। পদ্মার পাড়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছে, দূরে দেখতে পেল কয়েকটা গবাদি-পশুর লাশ ভেসে যাচ্ছে। একজন হঠাৎ করে বলে উঠল, জানোয়ার নারে, ওইডি তো মানুষ। তোমাগো চোখ আন্ধা অয়ে গ্যাছেগা। সবাই চুপ-চাপ তার কথা শুনে, কেউ কিছু বলে না। সবাই ফিরে যায়, যার যার নতুন গন্তব্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭