এক যে ছিল পাখি। সে প্রত্যেকদিন কোন না কোন বিপদের মধ্যে জড়িয়ে পড়ত। সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে তার দিন শেষ হয়ে যেত। সকাল বেলা আবার নতুন কোন আপদ। সে চিন্তায় পড়ে গেল, যদি এমনটা হয় তাহলে তো বেঁচে থাকাই মুশকিল। তার বিপদের মধ্যে কিছু বিপদজনক বিপদের কথা উল্লেখ করাটা জরুরি:
১. ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে দেখল পানি নাই। পানি চাইতে মালিকের কাছে গেলে, মালিক বলে দিল, গতকাল ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, আজ পানি থাকবে না। সে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে আসে। সারা বাসা খুজে দেখে যা পানি আছে, খাওয়া ছাড়া অন্য কিছু করলে শেষে পানির অভাবে সে অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই সেদিন ওয়াশরুম ব্যবহার করে না। রাতের জন্য অপেক্ষা করে, কখন পানি আসবে। রাতে পানি আসার সাথে সাথেই সে দৌড়ে টয়লেটে চলে যায়।
২. দেখা যাবে, মাত্রই বাসা থেকে বের হয়েছে, একটু উড়তে যাবে, হঠাৎ তার খেয়াল হল, আরে আমার ডানা কোথায়? সারাদিন এদিক-সেদিক হেঁটে হেঁটে কাটিয়ে দিয়ে যখন ঘরে ফিরে তখন সন্ধ্যে। দেখে বন্ধু পাখিটি তার ঘরে শুয়ে আছে। হেসে বলল, দোস্ত তোর ডানাটি নিয়েছিলাম। আমারটায় না ময়লা জমে গিয়েছিল। তখন সে কিছুই বলে না। একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে, সমস্যা নাই।
৩. যেখানে চাকরি করে সেখানে পৌছান মাত্রই দেখা গেল, বসের মন আজ বেশ খারাপ। তাকে খুশি করার জন্য অনেকেই অনেক কিছু করে যাচ্ছে। তো সে তো অভিনয় করতে পারে না। তাই বসকে সরাসরি গিয়ে বলে, বস, এইভাবে মন খারাপ করে বসে থাকলে হবে? বস এই কথা শুনে তাকে বলে, আমার গার্লফ্রেন্ড চলে গ্যাছে, আপনি বলছেন মন খারাপ না করতে? যান ভাগেন। তো সেদিন একটু পর পর তার ডাক পড়ে আর অকারণে জারি খায়।
৪. তাদের যে ক্লাব আছে, সেখানে অনেক ধরণের খেলার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সে কোনদিনও কিছুই খেলতে পারে না।একদিন দাবা খেলার চান্স পেয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ করে দেখে যার সাথে দাবা খেলছে, সে অদৃশ্য হয়ে গ্যাছে। ব্যাপারটায় সে ভয়ের পরিবর্তে খুবই দুঃখ পায়।
৫. তার একজন গার্লফ্রেন্ড আছে। মাঝে মাঝে দুইজনে মনের সুখে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু মাঝে মাঝে সকাল বেলা সে যখন টয়লেটে থাকে, তখন তার গার্লফ্রেন্ড ফোন দেয়। সে তো টয়লেটে, ধরবে কে? এই নিয়ে ঝগড়া বাধে। অন্য মেয়েদের সাথে কথা বল, আমি বুঝি না, কিছু হ্যাঁ? তার গার্লফ্রেন্ড বলে, তুমি আমাকে আগের মত আর ভালবাস না। গেল সেদিনটা। কোথাও মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না্।
আজকে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে। তাকে কেউ দেখতে পারে না। কেউ ভালবাসে না, তাকে। কি হবে এমন জীবন রেখে। তার আত্মহত্যাই শ্রেয়। অন্তত পরপারে তাকে কেউ গুরুত্ব দেবে, সে শাস্তি দিক, আর শান্তি।
সে ছাদের একেবারে কোর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে। লাফ দিবে এমন সময় তার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে যায়।
তার সাথে কাটান, সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত গুলো। দুইজনের প্রথমদিককার কথাগুলো। উড়ে বেড়ানোর কথাগুলো। অফিসের কলিগদের কথা মনে পড়ে, তাদের সাথেও সে অনেক হাসি-ঠাট্টা করেছে। তার বন্ধুদের কথা। যাদের সে মরে গেলেও ভুলতে পারবে না। জাহান্নামে গেলেও সে তার বন্ধুদের ডেকে বলবে, এইদিক আয় শালা। কই যাস? জান্নাতে গেলেও তাই।
পিছন থেকে তার বন্ধুটি তাকে ডাকে। বলে, এই তুই কি করছিস? সে কিছু বলেনা। কি বলবে ভেবে পায় না। মরার আগে শেষ একটা গালি কি দেওয়া যায়? হ্যাঁ, বন্ধুদের সাথে সবকিছুই যায়।
খানকির পোলা ভাগ এখানথ্যা।
কি বললি?
পাখিটি দেরি করে না, লাফ দেয়। পিছন থেকে তার বন্ধুটিও ধেয়ে আসে। যেন সুনামি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে লক্ষ্য করে নিচের দিকে না পড়ে সে উপরের দিকে উঠছে। এ কেমন অবস্থা? আত্মহত্যা করার জন্য লাফ দিল, কিন্তু উপরের দিকে যাচ্ছে। সে ভাবছে, মনে হয় মরে গেছি। তাই সৃষ্টিকর্তার নিকট চলে যাচ্ছি। কিন্ত কিছুক্ষণ পরই সে ক্লান্ত হয়ে যায়। ছাদের উপর নেমে পড়ে। বন্ধুটির দিকে তাকিয়ে বোকার মত হেসে, বলে, কিরে তুই আসলি কখন?
তার বন্ধুটি ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকায়। কিছু বলে না। সে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার গার্লফ্রেন্ড কিছুক্ষণ পর ফোন দিয়ে বলে, সোনা চল দেখা করি। রাগ কর না, প্লিজ।
তার মন আনন্দে নেচে উঠে। আকাশে আরেক চক্কর মারে। আর হিন্দি গান গায়, হুম্মা হুম্মা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬