দেশে প্রথমবারের মতো নাকি হাসি নিয়ে এতো বড় আয়োজন হয়ে গেল ঢাকায়। ফেসবুকে এই কমেডি ক্লাবের এক্টিভিটি দেখে দোটানায় ভুগতে ভুগতে কিনেই ফেললাম দুটি টিকেট। দেখা যাক কি হয় বাংলাদেশের এই হাসির আয়োজনে । শুক্রবার নাকি ম্যারাথন হাসি চলবে এমন গ্যারান্টি দিয়ে আয়োজকরা জানালেন অবশ্যই সময়মতো চলে আসবেন এবং দীর্ঘ সময় থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। যাই হোক এয়ারপোর্ট রোডে নাকি কি বিশেষ কারনে ওভারব্রীজ বন্ধ তাই বারিধারা ঢোকার মুখে বেশ জ্যাম। সব জ্যাম পেরিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠানস্থলে যেতে সাড়ে ৫টার পেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে ভেসে আসছিল ধুম-ধাড়াক্কা টাইপ মিউজিক। মাঝে সাঝে মাইক্রোফোনে কথা এবং ফাকে ফাকে দর্শকদের হাসির রোল। যাইহোক সব আনুষ্ঠানিকতা পেরিয়ে হলরুমে ঢুকতেই চোখে পড়লো ষ্টেজে দাড়ানো এক মধ্যবয়সী লোক রীতিমতো হাসির ফোয়ারা বসাচ্ছেন পুরো হল ভর্তি দর্শকদের। কিন্তু অন্ধকারে ঠিকমতো কাউকেই দেখছিলাম না। তবে, এতো লোক দেখে আমি রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার অবস্থা। কমেডি দেখতে ঢাকায় এতো লোক তাও আবার হলভর্তি। বিশ্বাস হচ্ছিল না।
যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো পেছনের সাড়ির কোনার সিট দুটিতে বসার সাথেই মন্চে আসলেন এক ভদ্রলোক। হাসানোর চেষ্টা মোটামুটি সফল। তবে, একটু বেশী ভালগার চেষ্টাটাকে খুব একটা ভালো লাগলো না। এটা অবশ্য আমার ব্যাক্তিগত মতামত। হয়তো অন্যদের ভালো লাগতেও পারে। যাইহোক, এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্য একজন আসলেন যিনি একসময় মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তবে তার ক্বিরাত পাঠের অনুকরণে ডালে লবণ কম বা লাউয়ের তরকারীতে বেশী ঝোল টা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। একজনের পর একজন আসছেন আর হাসা্চ্ছেন। একটা সময় আমরাও হাসতে হাসতে ক্লান্ত। ঠিক সেময় মন্ঞে আসলেন সোলায়মান সুখন।
তার পরিচয় তিনি নাকি প্রাক্তন ডিফেন্স অফিসার। ইনফ্যাক্ট লোকটা জানে কিভাবে মানুষকে হাসাতে হয়। টিপিক্যাল কমেডিয়ান না। দর্শকদের সাথেও ইনট্যারাক্ট করে স্পনটেনিয়াসলি দারুন সব জোকস এবং মজা করতে জানেন। এই ভদ্রলোক হচ্ছেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মজা করেন এই টাইপ। সন্দেহ আছে, ব্যাক্তিগত জীবনেও এরকম কিনা। হয়তোবা তার কথাই একরকম জোকস। অর্থ্যাৎ, আপাদমস্তক একজন কমেডিয়ান। অনেকটা কমেডি উইথ কাপিল টাইপ। যে হয়তো সিএনজি থেকে নেমে সিএনজি ভাড়া দেয়ার সময় ড্রাইভার কে বলবে ভাড়া ২০০ টাকা কেন দিব? উত্তরা থেকে বনানী ২০০ টাকা ঠিক আছে কিন্তু আসলামতো আমরা ২ জন। তাইলে ১০০ আমি আর বাকি ১০০ তোমার ভাগে। কার তুমিও তো আমার সাথেই উত্তরা থেকে বনানী পর্যন্ত আসলা। এনিওয়েজ, তার দারুন সব প্রানবন্ত কমেডির পর আসলেন প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় ষ্টার নাভীদ মাহবুব। (বড় ষ্টার বললাম কারন তিনিই বোধয় এই আয়োজনের হর্তা-কর্তা এবং কমেডি ক্লাবটাও এই ভদ্রলোকের নামেই।) যাই হোক নাভীদ মাহবুব কে আমি ইনফ্যাক্ট চিনি একজন উপস্থাপক হিসেবে। এই ভদ্রলোককে আগে দেখেছিলাম এনটিভিতে কর্পোরেট ফিমেলদের নিয়ে একটা প্রোগ্রামের উপস্থাপক হিসেবে। আমার ধারনা ছিল এই গম্ভীর প্রকৃতির মোটাসোটা মানুষটা আবার কমেডি করবে আর সেই কমেডিতে দর্শকের আসনে বসা সবাই হাসবে! খানিকটা বেখাপ্পাই লাগছিল টিকেটে তার নাম ও ছবি দেখে। তবে, তার মন্ঞে আসার পর ধারনা রীতিমত নাইটি ডিগ্রী চেন্জ। হাত, পা, কোমড় দুলিয়ে, নেচে কুদে এবং এমন সব কমেডি শুনলাম তাতে দর্শকদের রীতিমতো 'ছেড়ে দে মা কেদে বাচি' টাইপ অবস্থা। তার প্রতিটি জোকস এমন প্রাণবন্ত এবং সাবলীল আমি নিজেও খানিকটা হতভম্ব। হাসতে হাসতে ততক্ষন সবার কাহিল অবস্থা। ষ্ট্যান্ড-আপ কমেডি নিয়ে আমার ধারনা বেসিক্যালি শুণ্যের কোঠায় ছিল। কেবল কানাডিয়ান এক ষ্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান রাসেল কিছু একটা নাম তার সম্পর্কে কিছুটা জানা ছিল। কিন্তু সেটাও কখনো সামনাসামনি দূরে থাক ইউটিউবেই দেখা হয়নি। আর কমেডি উইথ কাপিলের কয়েকটি প্রোগ্রাম টিভি চ্যানেলের বদৈালতে দেখা ।
আর যেখানে আসার সময় একটানা এত সময় কিভাবে কাটবে ভাবছিলাম সেখানে দশটা তিরিশ পার হয়ে গেল কখন সেটা নিজেও বুঝতে পারলাম না। যাইহোক দেশে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হলো বিষয়টা ভালোই লাগছে। তবে আমাদের জীবনে যেহেতু হাসার অনুষঙ্গ কম বা আমাদের যান্ত্রিক জীবনে হাসির ঘটনা কালেভদ্রে ঘটে সেখানে এমন আয়োজন নিঃসন্দেহে দারুন। আর প্রোগ্রামের মাঝেই একজন জানালো তারা নাকি এ ধরনের কমেডি প্রোগ্রাম প্রতি সপ্তাহে ই আয়োজন করে। তবে, তাদের এই প্রোগ্রাম গুলশান/বণাণী/আর বারিধারার বাইরের মানুষকেও জানানো প্রয়োজন। কেননা, ঢাকার বাকী অংশের বাসিন্দাদের মধ্যেও কমেডিতে আগ্রহী লোকের অভাব নেই। সুতরাং তাদের কাছেও নিদেনপক্ষে জানাতে হবে এ ধরনের হাসি/ঠাট্রা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রতি সপ্তাহান্তে এই ঢাকাতেই হচ্ছে।
আর একটা মজার ব্যাপার হলো আমি নিজেও গতকালের কমেডি উৎসব থেকে শুনে আসা জোকস গুলো শুনানো শুরু করেছি পরিচিত সার্কেলের মধ্যে। কি জানি হয়তো নাভিদ মাহবুবের মতো ষ্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হয়ে যেতেও পারি। তবে এটা হবার জন্য বা মন্ঞে যেয়ে এতো লোকের সামনে গিয়ে কি আদৈাও কিছু বলতে পারবো কিনা এটা নিয়েই একটু সন্দেহ আছে।
সবশেষে একটি জোকস সবার জন্য ।
" * গুলশান,বারিধারায় কেউ রাস্তা দিয়ে দৌড়ালে সবাই ভাবে লোকটা সাস্থ্য সচেতন জগিং করছে অথচ বাসাবো, যাত্রাবাড়ি এলাকায় দৌড় দিলে ভাবে পকেটমার না হয় বোমাবাজ !!! I call this racism based on location"
কোনোটাই গুছিয়ে লিখতে পারবো না বলে জাষ্ট এইটা শেয়ার করলাম।
* কারটেসি - কমেডিয়ান সোলায়মান সুখন
সবশেষে নাভীদ কমেডি ক্লাব কে ধন্যবাদ এমন একটি আয়োজন করার জন্য। আশা করি প্রতিবছর এমন আয়োজন দেখবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৮