somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বৃতির অন্তরালে

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাদিনের প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম শেষে রাতের
সামান্য বৃষ্টিতে নগর জীবনে নেমে আসে
শান্তির পরশ।যেন বহুদিন পর নগর বাসী মহা
ঘুমে অচেতন।হাঁফীজ ও তাদের থেকে অন্য
দিনের মত নিজেকে আলাদা করতে পারেনি।
রাতে নেমে আসা চোঁখের পাতা খুলতেই
রোঁদ-ঝলমল সকাল।
'
.
আজ শুক্রবার,ছুটির দিন হাঁফীজ ঘুম থেকে
দেরি করে উঠে।সকালের নাস্তাটাও তাই
দেরিতে হয়।সকাল ১০টার দিকে ঘুম থেকে
উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য হোটেলের
দিকে পা বাড়ালো হাঁফীজ।
'
.
কিছুক্ষন হাঁটার পরেই দেখে রাস্তার এক পাশে
অনেক মানুষ জটলা বেধে দাড়িয়ে আছে।
হাঁফীজ ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেই জটলার
দিকে।ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে গেল হাঁফীজ।
'
.
গিয়ে দেখে একটা মেয়ে উপর হয়ে পড়ে আছে
মাঝখানে।সারা শরীর রক্তে ভিজে আছে।
মাথাটা থেতলে গেছে,মুখটা কে যেন উড়না
দিয়ে ডেকে রেখেছে।আর মানুষ গুলো দাড়িয়ে
দাড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছে।
'
.
কিছুক্ষণ আগে মেয়েটা রাস্তা পার হওয়ার সময়
একটা মাইক্রো বাসের সাথে ধাক্কা খায়।সাথে
সাথে মারা যায় মেয়েটা,তাই আর কেউ মেয়েটাকে
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি।কেউ
একজন হয়তো ফোন করেছে পুলিশের কাছে।
তাই একটু পরেই পুলিশ চলে আসলো সেখানে।
'
.
পুলিশ এসে মেয়েটার মুখ থেকে উড়নাটা সড়িয়ে
দেয়।মুখটা রক্তে লাল হয়ে রক্তিম বর্ণ ধারন
করেছে।মনে হচ্ছে কেউ যেন হলি খেলার
সমস্ত
রং গুলো মেয়েটার মুখে মাখিয়ে দিয়েছে।
'
.
হাঁফীজ মেয়েটার মুখের দিকে ভাল করে লক্ষ
করলো।প্রথম দেখায় মেয়েটাকে ভাল করে
চিনতে পারলোনা হাঁফীজ।তবে কেন যেন
মেয়েটার
চেহারা হাঁফীজের মনে মায়া ধরিয়ে দেয়।
হাঁফীজ
একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে এক পলকে তাকিয়ে
থেকে মেয়েটার চেহারার মাঝে পরিচিত জনের
সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে উঠে।
'
.
শত চেষ্টা করেও যখন হাঁফীজ মিলাতে ব্যার্থ
হচ্ছিলো তার চেনা পরিচিত কোন আপন
জনের সাথে সামনে পড়ে থাকা মেয়েটার মুখ।
ঠিক তখনি বুকের বাম পাশটায় কেমন যেন
চিনচিন করে ব্যাথা শুরু হয়ে গেল-মাথাটা
অসম্ভব রকম ঘুরতে লাগলো।মেয়েটার সুন্দর
মুখটা তার সামনে ভাসতে লাগলো।যার স্বপ্নে
বিভোর হয়ে মেতেছিল প্রায় ২টা বছর।স্কুলের
সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে নীরা।
'
.
আজ থেকে প্রায় ৬বছর আগে শেষ বার নীরাকে
দেখেছিল হাঁফীজ।হাঁফীজের বিশ্বাস ছিল তার
সাথে আবার দেখা হবে নীরার-কিন্তু এভাবে যে
দেখা হবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি হাঁফীজ।
||
সবেমাত্র ক্লাস এইট থেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি
হয়েছে হাঁফীজ।যেহেতু নতুন স্কুল তাই দু'একজন
ছাড়া অতি-পরিচিত কেউ ছিলনা।স্কুলে প্রতি
সপ্তাহ অনুষ্ঠান হত।নীরাকে হাঁফীজ প্রথম দেখে
সেই অনুষ্ঠানে।
'
.
নীরাকে প্রথম দেখাতেই ওর ভাল লেগে যায়।যদিও
প্রেম ভালবাসা সম্পর্কে অত জ্ঞান তখনো ওর
হয়নি।তবে ওকে দেখার পর থেকে হাঁফীজের
বুকের মাঝে অন্য রকম একটা ফিলিংস কাজ
করা শুরু করে দিয়েছিল।কোনদিন যদি নীরা স্কুলে না আসতো হাঁফীজের খুব খারাপ লাগতো।
কিন্তু কখনো ওর সাথে কথা বলার সাহস পেতনা।
'
.
এভাবে দেখতে দেখতে চলে গেল প্রায় ১ বছর।এর
মাঝে দু'একদিন কথা বলা ছাড়া হাঁফীজের
প্রেম
আর সামনের দিকে আগায়নি।নীরার সাথে
ওর
বন্ধুত্ব হয় ১০ম শ্রেণীর টেষ্ট পরীক্ষার সময়।
এক্সাম
এর হলে দুজনের সিট এক সাথে পড়ে।তাই দুজন
পড়া ডিসকাস করার জন্য নাম্বার বিনিময় করে।
'
.
এরপর থেকে প্রতিদিন হাঁফীজ আর নীরা
দুজনে
ফোনে কথা বলতো।হাঁফীজ সব সময় বুঝাতে
চাইতো যে ও নীরাকে ভালবাসে।কিন্তু নীরা প্রতি
বার না না তাল বাহানায় সেটা এড়িয়ে যেত।
'
.
একদিন ফোনে কথা বলার সময় নীরা হাঁফীজকে
বলে যে,ওর বিএফ আছে।এরপর থেকে হাঁফীজ
অনেকটা ভেঙে পড়ে।কিন্তু নীরার কথা হাঁফীজের
বিশ্বাস হচ্ছিলোনা।ওর কাছে মনে হত নীরা
হয়তো
মিথ্যা বলতেছে।কিন্তু একদিন নীরা ওর বিএফ
এর সাথে ওকে কথা বলায়।তখন ওর বিশ্বাস
হয়।
'
.
এর মাঝে এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়
ওদের।
এরপর হাঁফীজ ওর পরিবারের সাথে ঢাকায়
চলে
আসে।ভর্তি হয় ঢাকার একটি কলেজে।নীরা
থেকে
যায় গ্রামেই।ধীরে ধীরে হাঁফীজ পড়া শুনার
দিকে ব্যাস্ত হতে থাকে।একটা সময় ভুলে যায়
নীরার কথা।
'
.
আজ যখন নীরাকে রাস্তায় রক্ত মাখা শরীরে
পড়ে থাকতে দেখলো-অজানা একটা কষ্ট
হাঁফীজকে আচ্ছন্ন করে ফেললো।কখন যে পুলিশ নীরাকে ভ্যানে করে নিয়ে চলে গেল সেটা খুজিই পেলনা হাঁফীজ।যখন ধ্যান ভাঙলো দেখলো নীরা নেই।
'
.
হাঁফীজ ধীর পায়ে বাসার দিকে এগুতে
লাগলো। সবার জীবনেই নাকি কোন না কোন অপূর্ণতা থাকতে হয়-তা না হলে সে নাকি স্রষ্টাকে মনে রাখেনা।
.
এতদিন হাঁফীজের জীবনে কোন অপূর্ণতা
ছিলনা। আজ সে টুকুও পূর্ণ হয়ে গেল।সে তার ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার পর যখন আবার ফিরে পেল-তখন আর বলতেই পারলোনা তাকে ভালবাসে।
তার আগেই আবার হারিয়ে ফেললো সে তাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×