রাত ৯টা বেজে ৪০ মিনিট।
শুভ্র তার পড়ার টেবিলে। পড়ায় মন নেই তার। চিন্তাভাবনায় মগ্ন। পড়ার বদলে চিন্তা করতে করতে কাগজের প্লেন,নৌকা,পাখি ইত্যাদি বানিয়ে টেবিলের বইয়ের উপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।
মনটা আজ খুব বিষন্ন শুভ্রর। কাজলের সাথে কথা হয় না আজ নিয়ে তিনদিন। বিষয় টা শুভ্রের কাছে নতুন নয়।
প্রতি মাসেই কাজলের বাবা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে আর দেখা করতে আসেন।কাজলের মা সরকারি চাকুরীজীবী। আর বাবা ভার্সিটি শিক্ষক।
তো মায়ের ট্রান্সফারের সুবাদে শুভ্রর শহরে কাজলের আগমন।
শুভ্রর মনে পড়ে যায় তিন দিন আগের কথা,কাজল বলছিলো,
-শোনো? কাল থেকে কথা হবে না।
-কেন? বাবা আসবে?
-হুম।
-আহ হা,উনি আসার আর টাইম পায় না! আচ্ছা তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রেখো।
-তুমিও। অন্তত নিজের খেয়াল টা নিজে রাখতে শেখো!!
-আমি তো রাখিই।
-কচু টা করো। আর হ্যা ভালোকথা। পড়াশোনা টা ঠিক করে করবে কিন্তু।
-আচ্ছা ম্যাম।
-ফাজিল!
-হে হে।
কিন্তু পড়তে পারছে না শুভ্র। যতই চেস্টা করুক বই এর পাতায় চোখ আটকাচ্ছেই না। শুভ্র এসব ভাবতে ভাবতেই ডাক আসে-"শুভ্র খাবি না?"
-না মা।
-কেন?
-ইচ্ছা নেই।
-সন্ধ্যায়ও তো কিছু খাস নি বাবা।
-আচ্ছা ইচ্ছা হলে পরে খাবো নে।
"খেতে হবে" এই বলে শুভ্রর মা চলে গেলেন।শুভ্রর মা খুবই হাসিখুশি মানুষ। কিন্তু ভেতরে অনেক কষ্ট চাপা।শুভ্র মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবে এমন মানুষ কিভাবে হতে পারে?যে কিনা এতো কষ্ট নিয়ে বাঁচতে পারে?
শুভ্রর মা শুভ্রকে কিছু সময় গল্পের ছলে বলেন তার কস্টের কথা। মাঝে মাঝে বলতে চান।
এড়িয়ে যায় শুভ্র।
হাসিখুশি এই গৃহিনীর বয়স ৩৩কি ৩৪ হবে। কিন্তু বয়সের চেয়ে রোগই যেনো বেশি মহিলার।
একটু পর বয়স ৪০অধিক লম্বাচওড়া লোক শুভ্রর ঘরে উকি দিয়ে ডেকে বলেন? তোমার খাবার কি বেড়ে দিবো?
-হ্যা দাও বাবা।
-আচ্ছা তাহলে এসে পড়ো।
শুভ্রর বাবা রসিক মানুষ। ছোটখাটো ব্যাবসা করেন। কিন্তু পরিবারে এখনো পরযন্ত কোনো অভাব তৈরি হতে তিনি দেন নি।
বাবার পিছু পিছু শুভ্র চলে যায় খাবারঘরে।
খেয়ে এসে আর পড়তে না বসে বিছানা করে সটান শুয়ে যায়।
টেবিল রয়ে যায় ২-১ টা বই অগোছালো ভাবেই। শুভ্র আগের তুলনায় এখন অনেকটা গোছানো।
দেড় বছর আগে তার জীবন টা এমন ছিলো না।
শুভ্র ভাবতে থাকে। ফ্ল্যাশব্যাক হতে থাকে ৩ বছর আগের ঘটনা।
শুভ্র তখন অষ্টম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্র। লাজুক লাজুক ভাব টা রয়ে গেছে তখনো শুভ্রর।চঞ্চল মস্তিষ্ক নিয়ে ব্যাস্ত সময় পাড় করছে। বন্ধু স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমাবে আমেরিকায় পুরো পরিবার নিয়ে।
শেষ দিনের আড্ডা টা বসলো স্কুলের মাঠেই। হটাত করেই বিদেশগামী বন্ধুটি বলে উঠলো-
- "আমার ছোট্ট বেলার এক বান্ধবিকে তো বলাই হলো না,চল কাছেই বাসা। আমার সাথে কেও আয়। একা যেতে পারবো না।"
কেওই রাজি না হওয়াতে শুভ্রকেই টেনে নিয়ে গেলো সেই ছেলেটি।
বাড়ির নিচে গিয়ে বেল বাজাতেই ৩ তলা থেকে নেমে এলো একটি সমবয়সি মেয়ে। দেখতে মুটামুটি সুন্দর,মিষ্টি কণ্ঠ তার।
শুভ্র লজ্জা নিয়ে তার বন্ধুর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। লজ্জাবশত কারণে উঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে দেখছে সেই সুকণ্ঠের অধিকারিণী কে।
একবার চোখে চোখ পড়লো।
চোখ সরিয়ে নেয় সে।
৫ মিনিট পরেই বন্ধুর কথা শেষ করে চলে আসলো। সে আর মেয়ের বিষয় টি নিয়ে মাথা ঘামালো না।
কিন্তু সেদিন কি আর জানতো যে এই ঘটনার কারণে এর এক বছর পর তাকে পচানি খেতে হবে কাজলের কাছে????
হ্যা নিঃসন্দেহ সেই মেয়েটি কাজল ছিলো।
=বাকি কথা টা নাহয় পরের পর্বে দেই? =
চলবে,,,,,,,,,,,,,,
বি:দ্র: পুরো গল্পের অর্ধেক যে , যার কথা না জানলে গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ,
তার বয়ান জানতে নিম্নের লিংকে ক্লিক করুন
( দ্বিতীয় পর্ব):view this link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৫