কিছু মিথ্যা কথাই না হয় পড়লেন!!!
আমি মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়েছি! আমি জিহাদি (!) আমি ইসলামকে সাথে রেখে যেকোন কিছু অনায়াসে করতে পারি!
আমার এক ছোট ভাই ছোটখাটো ফেসবুক সেলিব্রেটি। স্টাটাস দিলেই আলহামদুলিল্লাহ্ ৫০০+ লাইক পেয়ে যায়। কাল ও এসে আমাকে বলল, ভাইয়া, এবার নতুন ইস্যু শ্যামল কান্তি নামের এক শিক্ষককে ইসলাম ধর্ম কটুক্তি করার অপরাধে কান ধরে উঠবস করানো। এবার ফেসবুকে সবাই এটা নিয়েই লেখালেখি করবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
তুই করবিনা?
অবশ্যই করব। কেন করব না? এটা নিয়ে লেখা আমার দায়িত্ব।
দায়িত্ব হল কিভাবে?
ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেছে তো। মুসলিম হিসেবে অবশ্যই ওই শিক্ষকের
বিপক্ষে লেখা আমার দায়িত্ব।
ওই শিক্ষকের নামে আনা অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা কি তুই জানিস?
আরে এটা জেনে কিছুই লাভ নেই। যা হয়েছে হোক! আমি ইস্যু পেয়েছি তাতেই হবে।
এই ছেলে যখন ফেসবুকে শ্যামল কান্তির বিচার চেয়ে কিছু লিখবে তখন ও হবে জিহাদি (!) যেই ছেলেটা সারাক্ষন আমার সামনে হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে হাঁটে সেই ছেলেটা জিহাদি (!) অবাক লাগে না? হ্যাঁ,
লাগে। ফেসবুকে আপনি আমি যাকে ধার্মিক মনে করি সে বাস্তবে নিয়মিত সিনেমা হল এবং যাত্রার দর্শক। সত্য বলতে এরা শুধু লাইক আর কমেন্টের জন্যই ধার্মিকের মুখোশ পড়ে আছে।
আসুন সত্য ঘটনাটা জানি :
পিয়ার সাত্তার লতিফ জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম গত কয়েক মাস ধরেই অন্যায়ভাবে শ্যামল কান্তি ভক্তের জায়গায় তার বোন পারভীন আক্তারকে স্কুলের প্রধান
শিক্ষক পদে বসানোর জন্য চেষ্টা করে আসছিলেন। সহজ ভাবে বলতে গেলে ফারুকুল ইসলাম ওত পেতে বসে ছিলেন একটা সঠিক সুযোগের।
সম্প্রতি রিফাত নামের এক ছাত্র ক্লাসে বসে কাকের ডাক এবং কোকিলের ডাক দিয়ে শয়তানি করায় শ্যামল কান্তি রিফাতকে শাসন করেন। এই ঘটনাকে পুঁজি করে ফারুকুল সাহেব, রিফাত এবং তার মা'কে
হাত করে শ্যামল কান্তির বিপক্ষে এই বলে সাক্ষ্য দেয়ায় যে, "শ্যামল কান্তি রিফাতকে মারার সময় ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করে"।
পরবর্তীতে এই মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সভায় তাকে অপরাধী বানানো হয়। অপরাধী হয়ে শ্যামল স্যার যখন মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন ঠিক তখনই মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় যে, শ্যামল স্যার
ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন। মুহূর্তেই এলাকাবাসী এসে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় শ্যামলকে মারার জন্য। এরপর ঘটনা শান্ত করতে ছেলের বয়সী সাংসদ সেলিম ওসমান এসে তাকে প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে উঠবস করায় (!)
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম জানতেন যে আমরা এখন ধর্মানুভূতির চরমে অবস্থান করছি। সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই আমরা জিহাদি হয়ে উঠছি। যেখানে হযরত মুহম্মদ (স) এত এত অত্যাচার সহ্য করেও সবার জন্য ভালবাসা বিলিয়ে দিয়েছিলেন সেখানে আমরা মুহূর্তেই অধার্মিকের মাথা কেটে ফেলছি। আর তাইত ফারুকুল ইসলাম শ্যামল কান্তির বিপক্ষে এই ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
আজ থেকে বেশ কিছুদিন আমি ঘুমাতে পারব না এই শিক্ষকের অপমানের কথা চিন্তা করে। শিক্ষক তো সেই মানুষ যিনি :
ছাত্রের ফরম ফিলাপের টাকা যোগার করার জন্য নিজের সবথেকে
প্রিয় সাইকেলটা বিক্রি করে দিতে পারেন।
টিনের স্কুলটাকে দালানে পরিনত করার জন্য বছরের পর বছর মানুষের
দুয়ারে ঘুরতে পারেন।
ভেঙে পড়া মেয়েটাকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিতে পারেন।
ইভটিজিং বন্ধ করার জন্য একাই যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারেন।
সর্বোপরি শিক্ষক তো সেইজন যিনি আমাকে তার বাড়িতে রেখে
বছরের পর বছর পড়াতে পারেন।