ইন্টারনেট এ পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।অর্থাৎ সকল পর্ণ সাইট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।শিশুদের উপযোগী করে তোলার জন্যে এই ব্যবস্থা।খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যখন দেখলাম সামহোয়্যার ইন ব্লগ কে ওনারা পর্ণ সাইটের তালিকায় ফেললেন এবং এই ব্লগ কেও বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছেন তখন মনে হইলো ফাইযলামির ও একটা সীমা আছে।আর সীমার একজন ভাই আছে।ঐটা হইতেছে আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।প্রথম দিকে অনেকে এইটাকে টেকনিকাল প্রবলেম মনে করলেও পড়ে দেখলেন যে না ওনারা সজ্ঞানেই সামহোয়্যার-ইন কে পর্ণ সাইটের তালিকা ভুক্ত করেছেন।অর্থাৎ সামহোয়্যার-ইন ব্লগ একটা পর্ণ-সাইট আর এই ব্লগের ব্লগাররা সবাই পর্ণস্টার!
আর এই ধরণের পর্ণস্টার বাংলাদেশের লেখালেখির জগতে প্রবেশ করে অনেকেই বেশ সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছেন।রকমারি বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় শীর্ষে থাকা বেশ কয়েকজন লেখকই সামহোয়্যার-ইন এর প্রাক্তন ব্লগার এবং ওনাদের লেখালেখির হাতে খড়ি এই ব্লগেই।যাইহোক সামহোয়্যার-ইন এর ব্যপারে অনেক কিছু বলার আছে সেগুলো বলতে চাচ্ছি না।
কথা হচ্ছে যখন আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার কে জিজ্ঞেস করা হলো সামহোয়্যার-ইন তো পর্ণ সাইট না।তাহলে একে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কেন?
তখন উনি বললেন,"নিশ্চয় কোনো কারণ আছে৷ নিশ্চয় অশ্লীল কোনো কনটেন্ট আছে৷ আমরা তো পর্নো বলতে শুধুমাত্র ‘ন্যাংটা' ছবি বুঝি না, যে কোনো কনটেন্ট লেখা কিংবা নাটক এরকম বহু জিনিস আছে যে সব জায়গাতে অনুচ্চারিত শব্দ ব্যবহার হয়৷ আমরা কিন্তু কেবলমাত্র ছবির পর্নোসাইট বন্ধ করছি না৷ অতএব কন্টেন্টের মধ্যে থাকতে পারে... ৷ সামহোয়্যার-ইন ব্লগ একসময় খুবই বিতর্কিত ব্লগ ছিল৷ এদের কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র সরকারবিরোধী না, আরো জঘন্য ছিল৷ যে কোনো বিষয়ে যাকে তাকে যেখানে সেখানে আক্রমণ করত তারা৷ নাস্তিকতার জন্যও দায়ী ছিল তারা৷ সুতরাং এরকম কোনো কনটেন্টের জন্যও এটা হতে পারে৷ ওভারঅল একটা সম্পূর্ণ নিরাপদ ইন্টারনেট চাই আমরা৷ আমরা ফেসবুক, ইউটিউবকে ধরবো৷ ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাপস যেগুলো আছে সেগুলোও ধরব৷ আমাদের জন্য প্রতিজ্ঞা হচ্ছে শিশুর জন্য এটা নিরাপদ করে যাব৷"
ওনার এই উত্তর দেখে আমি রীতিমত ভরকে গেলাম+ভাষার মাসে ভাষাহীন হয়ে গেলাম!কারণ উনি যদি সত্যিই এই কথা মাথায় রেখে শিশুদের জন্যে পরিচ্ছন্ন ইন্টারনেট বানাতে চান তাহলে ইন্টারনেট বলে কোন কিছু বাংলাদেশে আর অবশিষ্ট থাকবে না।
উনি যেই অভিযোগ সামহোয়্যার-ইন এর বিরুদ্ধে এনেছেন সেই জিনিস সামহোয়্যার-ইন এর চেয়ে ফেসবুকে হাজার গুনে বেশি চর্চা করা হয়ে থাকে।।তাহলে ওনার উচিৎ হবে বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া।
ফেসবুকের পরেই বর্তমানে বাংলাদেশে সবচে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ইস্নটাগ্রাম।ইন্সটাগ্রামে যে কি পরিমাণ নগ্ন,অর্ধ নগ্ন ছবি রয়েছে তা নিশ্চয়ই আমাকে বলতে হবে না।
তারপর ইউটিউবে সালমান মুক্তাদিরের ভিডিও না হয় ওরে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলেন।
কিন্তু বিদেশি ইউটিউবারদের ক্ষেত্রেও কি ঐ একই ধমকা ধমকিই প্রযোজ্য হবে?এবার দেন ইউটিউব বন্ধ কইরা।
কোন জায়গায় জানি শুনছিলাম গুগলে যত ছবি আছে তার বেশির ভাগই নগ্ন ছবি।বেশির ভাগ না হোক নগ্ন ছবির তো আর অভাব নাই।এবার গুগল সার্চ ইঞ্জিন সরায় দ্যান বাংলাদেশ থেকে।
তাছাড়া উনি যেই কথাটা বললেন যে শুধু মাত্র ন্যাংটা ছবিই নয় নাটক কিংবা লেখাতে বহু অনুচ্চারিত শব্দ রয়েছে তাও উল্লেখ করা যাবে না।তাহলে দেখুন বাংলা কবিতা লেখাও মনে হয় বন্ধ করে দিতে হবে।সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় এই ধরণের শব্দ আরো বেশি উচ্চারিত হয় বোধহয়।এটা উনিই ভালো বলতে পারবেন কেননা বাংলা এম এ করেছেন উনি।
এইভাবে বলতে থাকলে শেষে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে ওনারা বার বার শিশু দের জন্যে ইন্টারনেট শিশুদের জন্যে ইন্টারনেট বলতে কি বোঝাচ্ছেন!ওনারা শিশুদের কে কেন ইন্টারনেটে আনতে চাচ্ছেন।যেখানে শিশুদেরকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে সেখানে আপনারা তাদেরকে কেন ইন্টারনেট এ আনতে চাচ্ছেন!বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত অনেক রিসার্সে দেখা গিয়েছে মোবাইল,কম্পিউটারের স্ক্রিন এর দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তা শিশুদের বিকাশে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
ওনাদের এই সামহোয়্যার-ইন ব্লগ বন্ধের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি।আশা রাখি ওনারা আরো ভেবে দেখবেন বিষয়টি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৪