সিগারেটে একটা শেষ টান দিয়ে এস্ট্রেতে ফেলে আবারও সোফায় শুয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম।আজ কিছুদিন যাবত গল্প লেখার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছে না।৩-৪ টা বিয়ার ক্যান পড়ে আছে নিচে।সেগুলোর দিকে তাকালাম, গল্প না লিখতে পারলে আর খাওয়া হচ্ছে না।টাকা যা ছিল তা প্রায় শেষের দিকে।আজ প্রায় ৬ মাস কোন কিছু লেখিনি।সর্বশেষ বইটা ভাল বিক্রি হওয়ায় এতদিন পর্যন্ত চলে গেছে।বাসায় একাই থাকি।
কলিং বেল টা বেজে উঠলো।বন্ধু সিয়াম এসেছে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
- আমি একটা সমস্যায় পড়েছি।
-আধা ঘন্টা ধরে শুধু এটাই বলছো।আর কিছু বলবে?না বললে প্লিজ আসতে পারো।আমার কাজ আছে।
সিয়াম সামনে থাকা পানির গ্লাস টা হাতে নিল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করে আবার রেখে দিল।
- জীবনে এত গুলো খুন করেছি।কখনো এত ভয় পাইনি।কত অসসস্থিকির পরিবেশে কাটিয়েছি কিন্তু তা যেন কিছুই ছিল না।খুন করে রক্ত দিয়ে গোসল করেছি।মাথা দিয়ে ফুটবল খেলেছি।পুলিশের দৌর খয়ে সারারাত পানিতে কাটিয়ে দিয়েছি,কবরের পাশে শুয়ে ছিলাম সারা রাত।কিচ্ছু হয় নি।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,"তুমি আমাকে এসব শোনাচ্ছো কেন?চোখের নিচের কালো দাগ,চোখ লাল হয়ে থাকা,মাথার চুল কেমন উষ্কখুষ্ক এগুলো দেখেই বুঝেছি কোন সমস্যা হয়েছে।
-আজ বেশ কিছুদিন নির্ঘুম রাত কাটছে।
- কেনো?
- ঘুমালেই দেখি কিছু মানুষ বসে আছে একটা কফিনের পাশে।অপেক্ষা করছে কবর দেওয়ার জন্য।আমি সেখানে যাই।আমাকে দেখেও কেউ দেখছে না।আমি কফিনের ঢাকনা টা সরাই।এবং দেখি বিভৎষ্য ভাবে মরা পচাঁ একটা লাশ পড়ে আছে।আমি লাশ টা দেখেই আতঁকে উঠি।কারন লাশটা আমারই।আমি এমন বিভৎস মরা পঁচা আর কখনো দেখিনি।আমার ঘুম ভেঙে যায়।সারা রাত চেষ্টা করেও আর ঘুমোতে পারি না।
- শুধু রাতে ঘুমালেই এমন হয়?
- যখন ঘুমাই তখনই।আর যেদিন এই সপ্ন দেখি তার পর দিন থেকেই আমার নিজের ভেতর প্রচণ্ড অনুশোচনা শুরু হয় ঐ মৃত মানুষ গুলোর জন্য যারা আমার হাতে খুন হয়েছে।যাদেরকে মেরেছি তাদের মৃত্যু যন্ত্রনা যেন আমিই ভোগ করছিলাম প্রতিটা মুহূর্ত।নিজের উপর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে।সারাক্ষণ একটা মানসিক যন্ত্রণা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
- কতদিন ধরে এই সমস্যা?
- ৬ মাস!
আমি মনে মনে পুলকিত বোধ করছিলাম।আরেকটা গল্পের প্লট পেয়েছি মনে হয়!ঠিক গত ৬ মাস আগেই আমার শেষ বই বেরিয়েছে।গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।
- এখন কি করতে পারি?
- আমি প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছি।কোন সমাধান দিতে পারবে?
- তুমি ডাক্তার দেখিয়েছো?
- যা করার সব করেছি।কিন্তু কোন লাভ হয় নি।আজ রাত ১২.১০ এ আত্মহত্যা করেছি।
- কিহ!মজা করছো নিশ্চয়ই।
- না মজা করছি না।আত্মহত্যা করে লাভ হয় নি।মানসিক চাপ টা এখনও আমাকে তারা করে বেড়াচ্ছে!!কোন সমাধান দিতে পারবে?
-হ্যাঁ।অবশ্যই।
-কি?দ্রুত বল।
-কাল একবার এই সময়ে এসো।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . .
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো।ভাঙার সাথে সাথেই কাল রাতের সেই ভয়ংকর কথোপকথন টার কথা মনে পড়লো।নাহ,এগুলো সত্যিই নয়।এমনটা কি সম্ভব কখনো।স্বপ্নই হবে।
বাইরে এত চিৎকার চেঁচামেচি কিসের!বাইরে বেরোলাম।বাড়ির সামনে একটা লাশ পরে আছে।এবং লাশটা সিয়ামের।সিয়াম কাল রাতে ছাত থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।কিন্তু লাশ টার একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা।লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করলেও লাশের এমন হওয়া সম্ভবই না।মনে হচ্ছে ঠিক ৬ মাস আগেই সিয়াম মারা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:০৯