ব্যক্তিগত পোস্ট, না পড়লে কিছু মিস করার সম্ভাবনা নেই ।
দুদিন যাবত অনেকের মত আমিও কিছুটা ফেরারী জীবন যাপন করছি। এই যখন ভাবছিলাম ঠিক তখনই ফোন এলো, 'ভাই তাড়াতাড়ি আসেন, পোস্ট লিখবেননা?'- যার কাছে আশ্রয় নিয়েছি, তিনি আমাকে দ্রুত যেতে বলছেন, যেন সামহোয়ারে আজ আরেকটা পোস্ট দিতে পারি। কালকের পোস্টটা তার উৎসাহেই দেয়া। এমন আন্তরিকতা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। তার বাসায় যাবার পথে গতকালের স্মৃতিটুকু আরেকবার রোমন্থন করে নিলাম। কাল যখন মাগরীব নামাজ শেষে ঘরে ফিরছি, পথে গলিমুখে পুলিশ দেখে পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাসায় না গিয়ে সোজা আশ্রয় স্থলে এসে হাজির হলাম।
রাত ১২টায় পোস্ট লিখে যথা অভ্যাসে ঘুম দিলাম। সকাল হতে না হতেই খবর এলো, এলাকা থেকে .... জন গ্রেফতার। মুহূর্তেই আতঙ্কের আভা খেলে গেল চোখে মুখে। অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য। অল্পসময় পরেই এলাকায় গিয়ে বিস্তারিত সব জানলাম।
বিকেলে মোবাইলে লোড করতে যেতেই আমাকে ডেকে নিলেন দোকানদার। বললেন, কাল রাত্রে আপনার নাম ধরে আলোচনা হয়েছে, পুলিশ আর লীগ এক হয়ে অপারেশন চালিয়েছে। আপনি বাসায় ছিলেননা নিশ্চিত হয়ে পুলিশ আপনার বাসায় হানা দেয়নি। সুতরাং সাবধানে থাকবেন। ধন্যবাদ দিলাম ভদ্রলোককে। আর লোড করার জন্য পঞ্চাশ টাকা দিতেই তিনি বললেন, "আপনাদের তো এখন অনেক সমস্যা যাচ্ছে, আপনি যান, একশো টাকার লোড পাঠিয়ে দিচ্ছি, আর এ মাসে আমার মাসিক চাঁদাটা আগের চেয়ে বাড়িয়ে নিয়েন ।" থমকে গেলাম তার আন্তরিকতায়।
. . . "ফোন করলো আমাদের এক কর্মী ভাই রফিক। এক পর্যায় ঝর ঝর করে কেঁদে দিল, বললো, ভাই - আমার সারা গ্রামে একটি লোক নেই যে আমার নামে একটি নালিশ করতে পারে, নিজেকে ছোট সময় থেকে সেভাবে গড়ে তুলেছি, আজ আমাকে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে, আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। আমি নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি- এই কি আমার অপরাধ??" রফিক ভাইয়ের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেলাম। জবাব দিতে গিয়ে কণ্ঠনালী যেন ধরে এলো। অবশেষে বললাম, প্রিয় ভাই, রাসূল সা. এর পথে যে হাঁটবে, তাকে এই পরিস্থিতিকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই রাসূল সা. এর চেয়ে বেশি ভাল লোক হয়ে যাইনি। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের এই মানুষটিকেও সইতে হয়েছে নির্যাতন, বরণ করতে হয়েছে দীর্ঘ্য ৩ বছরের কারাজীবন। সুতরাং . . .।"
জানিনা সে কতটুকু শান্তনা পেল। নিজের অজান্তেই আল্লাহর কাছে বিচারের ভার দিলাম। রব্বুল আলামীন, এই নিভুপ্রায় ঈমান নিয়ে তোমার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি কতিপয় গুনাহগার যুবক। আমাদেরকে এমন পরীক্ষায় ফেলনা যা সহ্য করার শক্তি আমাদের নেই।
পোস্ট লিখছি, হঠাৎ খেয়াল করলাম আশ্রয় স্থলের তিন পিচ্চি আমার চারিপাশে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। বড়টি বললো, আপনি হলদে ডানা????? বললাম হ্যা, কেন? বললো, আরে, আমি হলদে ডানার পোস্ট কত পড়েছি, আপনি সেই হলদে ডানা?? ------------ নিজের অজান্তেই এত বড় সেলিব্রিটি হয়ে গেছি ভাবতে বেশ পুলক অনুভব করলাম। বললাম, হুম, সেই হলদে ডানা আজকে তোমাদের হাতে বন্দী। সবগুলো পিচ্চি একযোগে দাঁত বের করে হেসে প্রতিক্রিয়া জানালো।
খবর পেলাম, যাদের ধরে নিয়ে গেছে তাদের একজন ছাড়া পেয়েছে বাকিরা সব জেলে। ছাড়া পাওয়া ব্যক্তির সাথে দেখা করতে গেলাম। শুনলাম কাহিনী। বললো, ভাই কোন সমস্যা হয়নি। পুলিশরা সবাই একযোগে দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর জানিয়েছে, তারা আওয়ামী হুকুম মানতে মানতে ক্লান্ত, অতীষ্ঠ। আরো মজার কাহিনি বললো সে। বললো ভাই, সকালে হাজতে একসাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সুললিত কণ্ঠের তিলাওয়াতের শব্দে মুহূর্তেই পুরো থানা থমকে গেল। সবার প্রশ্ন, কারা এলো, কাদেরকে আনলো? নামাজ শেষে অন্য বন্দীরা কেউ পানি এগিয়ে দেয়, কেউ পারলে খেদমত করে। . . . . গল্প শুনছি আর মজা অনুভব করছি। বস্তুত, সুন্দরের এক নিজস্ব শক্তি আছে যা সর্বাবস্থায় আলো ছড়ায়।
কয়েকটা দিন এভাবে পার হয়ে গেল, আর কয়দিন যাবে জানিনা, সামনে আরো ভালো হবে, নাকি আরো খারাপ হবে, তাও জানিনা। শুধু জানি, ধৈর্যকে সাথী বানাতে হবে। "চুড়ান্ত সফলতা মুত্তাকিদের জন্যই অপেক্ষা করছে" (সূরা নং ৭, সূরা আল আরাফ, আয়াত ১২৮) আল্লাহর উপর অবিচল আস্থাকে বন্ধু বানাতে হবে। সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তা আর প্রজ্ঞা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিরোধীদের ব্যাপারে আশা ছাড়া যাবেনা, স্বপ্ন দেখতে হবে তাদের নিয়ে। তারা আমাদের শত্রু নয়, তাদের নীতির সাথে আমাদের শত্রুতা, তাদের কর্মের প্রতি আমাদের ঘৃণা, কিন্তু তাদের জন্য আমাদের বক্ষ উন্মুক্ত। বাংলাদেশে কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা তাদের অংশগ্রহণ ও সমর্থন ব্যাতিত কক্ষোণো সম্ভব নয়। বরং তাদের নেতৃত্বও প্রয়োজন।