somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সভাপতি সেক্রেটারী দ্বন্দ্ব নিয়ে কখোনো সংগঠন চলতে পারেনা।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনামই বলে দিচ্ছে কি বলতে চাই। হালের কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেয়া হবে। সেই সাথে নিজেরও দুএকটি।

এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে সংঘর্ষ গোলাগুলি, আহত ৪। সংবাদটা পড়েই মূলত লেখার চিন্তা। সভাপতি গ্রুপের কর্মীকে মারার জের ধরে সেক্রেটারী গ্রুপের কর্মীদের সাথে সংঘাত। . . . কিন্তু চিরন্তন সত্য কথা হচ্ছে, সভাপতি সেক্রেটারীর দ্বন্দ্ব নিয়ে একটি সংগঠন কখোনোই চলতে পারেনা। সংগঠনের মূল ব্যক্তিই হচ্ছেন এই দুজন। এরা যদি কোন একটি সিদ্ধান্তে ইস্পাত কঠিন ঐকমত্য না হন, কিভাবে সম্ভব সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা?? অথচ আমাদের দেশের সংগঠনগুলোর তা রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক হোক, সম্পূর্ণ উল্টো দশা। স্থানীয় মসজিদ কমিটি, মার্কেট পরিচালনা কমিটি, সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রভিসি, শিক্ষক সমিতি এবং রাজনৈতিক দল তো বটেই- এই দ্বন্দ্ব রোগে আক্রান্ত। আমার এলাকার মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী কদিন আগে পদত্যাগ করেছেন কারণ সভাপতির সাথে বনিবনা হচ্ছিলনা। এবং আমি নিশ্চিত, এমন বহু উদাহরণ আপনারও জানা।

বলাই বাহুল্য। সভাপতি সেক্রেটারী একজন আরেকজনের পরিপুরক। দুজনের কাজ দুরকম। সভাপতি হচ্ছেন মূল কাণ্ডারী, যিনি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন, পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তি হবেন। আর সম্পাদক তো তিনিই যিনি সম্পাদনা করেন। সভাপতির সকল নির্দেশনা সঠিক ও সূচারুরূপে সম্পাদন করা এবং সভাপতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করাই সেক্রেটারীর কাজ। এই কর্মবণ্টন ভুলে উভয়ে যদি একই রোল প্লে করতে চান, তখনই সমস্যা মাথাচারা দিয়ে ওঠে। সমস্যা তখনই হয়, সেক্রেটারী যখন নিজেকে সভাপতি ভাবতে শুরু করেন। প্রভিসি যখন ভিসি হতে চান।

দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি। সভাপতিও নির্বাচিত, সেক্রেটারীও নির্বাচিত হলে উভয়ে নিজেকে শীর্ষ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি ভাবতে থাকেন। অথচ সভাপতি- সেক্রেটারী সম্পর্ক হতে হবে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। সেক্রেটারী যেখানে সভাপতির ইচ্ছানুযায়ী হয় সেখানে সমস্যা কম। আমেরিকায় এজন্যই রানিং মেট সিস্টেম যেখানে প্রেসিডেন্ট নিজে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ঠিক করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে হয়না। বাংলাদেশে মন্ত্রীতে মন্ত্রীতে দন্দ্ব হয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে মন্ত্রীদের দ্বন্দ্ব হয়না। কারণ মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী মনোনীত।

আমাদের সংগঠনে সভাপতি নির্বাচিত কিন্তু সেক্রেটারী মনোনীত। সেক্রেটারী নির্ধারণে ভোটারদের পরামর্শ নেয়া হয়, কিন্তু মূলত সভাপতিই নির্ধারণ করেন কে তার সেক্রেটারী হবেন। আমি দেড় বছর ছিলাম ওয়ার্ড সভাপতি। নির্বাচিত হবার পর আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় সেক্রেটারী হিসেবে আমি কাকে পছন্দ করি। আমি তিনটি অপশন দিয়েছিলাম। সেভাবেই আমাকে সেক্রেটারী দেয়া হয়। দেড় বছরে দু'জন সেক্রেটারী নিয়ে কাজ করেছি, কখোনো দ্বন্দ্ব তৈরী হয়নি। মতের অমিল হয়েছে, কিন্তু অধস্তনরা বুঝতে পারবে এ পর্যায়ে যায়নি। এখন আবার গত এক বছর যাবত থানা সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করছি। সভাপতি আমার চেয়ে বয়সে কি পড়ালেখায় অন্তত তিন বছরের ছোট। কিন্তু অধস্তনদের এক দিনের জন্যও তা বুঝতে দেইনি। সূর্যসেন হলের সভাপতি ছিলেন আসাদ ভাই, আর সেক্রেটারী ছিলেন মাসুম ভাই, যিনি সভাপতির চেয়ে কয়েক বছরের সিনিয়র। সভাপতিকে তুমি করে ডাকতেন আর সভাপতি তাকে ডাকতেন আপনি। কিন্তু তাই বলে সংগঠনে কখোনো দ্বন্দ্ব তৈরী হয়নি। কারণ উভয়ে উভয়ের অবস্থান ও দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকলেই হল। সভাপতি সবসময়ই সম্মানিত যতক্ষণ না তিনি মৌলনীতি ভঙ্গ করেন। সেক্রেটারী যদি সভাপতির আনুগত্য না করেন তবে সংগঠনে অচলাবস্থা তৈরী হবেই। আর সভাপতিকে তখন অসহায় হওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা। বর্তমান অবস্থায়ও আমার সাথে সভাপতির কখোনো কখোনো মতের অমিল হয়েছে, কিন্তু তা নিজেদের মধ্যেই। বাহিরের কাউকে বুঝতে দেইনি। কাজেও কোন ব্যাঘাত ঘটেনি।

বস্তুত, এগুলো একদিনে সম্ভব নয়। সংগঠনের কর্মীদেরকে ট্রেইন্ড আপ করলেই তারা এভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সামাজিকভাবে কালচার চালু করা যায়। তাহলে সামাজিক সংগঠনগুলোও ভাল ফল পেতে শুরু করবে। কনফুসিয়াসের থিউরি মোটেই ভ্রান্ত নয় এক্ষেত্রে। তিনি বলেছিলেন, সমাজের মানুষগুলোর মধ্যে অসম সম্পর্কই সমাজকে টিকিয়ে রাখে। সভাপতি ও সেক্রেটারী দুজনে যে সমান না, এ বুঝ হলেই সংগঠন টিকে থাকবে।

কুরআনের ৩ নম্বর সূরা আল ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সভাপতির দায়িত্ব বলে দিয়েছেন। অধস্তনদের সাথে কোমল আচরণ করা, তাদের ত্রুটি বিচ্যুতিকে মাফ করে দেয়া, তাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের পরামর্শ নেয়া এবং সে সিদ্ধান্তে অটল থাকা।- আল্লাহ তায়ালা সভাপতিদের জন্য এ নির্দেশ জারি করেছেন। অন্যদিকে সেক্রেটারীদের জন্যও নির্দেশ রয়েছে নিরংকুশ আনুগত্য করার ভালো লাগুক কি খারাপ, যতক্ষণ না ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে চায়।

ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে সুষ্ঠুভাবে দল চালাতে হলে প্যাটার্ন পরিবর্তন করতেই হবে। শুধু হালুয়া রুটির ভাগ নেয়া যদি একমাত্র লক্ষ্য হয় তাহলে কখোনোই সুষ্ঠুভাবে সংগঠন চলতে পারেনা। আর হালুয়ার রুটি সুন্দরভাবে ভাগ করার জন্যও তো দ্বন্দ্বমুক্ত সংগঠন চাই। উপরন্তু প্রতিপক্ষ ঠেকাতেও সংগঠনের অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা জরুরী। শিবির উৎখাত করার ঘোষণা দিয়ে যদি নিজেরাই একগ্রুপ আরেকগ্রুপকে উৎপাটনে লেগে যায় তবে তবে তো স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আগে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্যও অন্তত শিবির থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে! কেননা এ সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সাথে জাতি পরিচিত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:৫১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×