আষাঢ়ের ভয়ঙ্কর গর্জনে একদিন মাজপথে থমকে গিয়েছিলাম।
পিচঢালা সড়কগুলো বৃষ্টির মিঠে পানিতে আখর গড়াল।
তের, আট, একুশ নম্বরের কোনটিই পাইনি।
সুতি কাপড়ের পাজামা পাঞ্জাবী সিক্ত শরীরে সেঁটেছিল সেদিন।
রাস্তা এতো ফাঁকা কোনদিন দেখিনি ঢাকাই জীন্দেগিতে।
আলো আঁধারের কালো কর্ষণ ভাবনায় গোলমাল বাধালো।
শূন্যতা, ঠাঁটানো বিপ্লব, ছেলেবেলা কত কি!
হঠাৎ করে সামনে চলে আসে করিমুলদের ধানক্ষেতে
স্কুল ব্যাগ ফেলে ফারুক, আজাদ, সাইফুলদের সাথে
বৃষ্টির স্রোতে ফুটবলটিকে কচি পা দিয়ে এগিয়ে নেয়া।
মিনিট পনের পরেই ‘নোয়া’ বাড়ির নেসারদের পুকুরে
দুর্দান্ত একপাল কিশোরের ধাপ ধাপ লাপ!
টকটকে লাল চোখ নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িরে উঠোনে পা ফেলা।
কেউবা বাঁশের কাঁচা কঞ্চির মার খাওয়ার ভয়ে
নানা বাড়িতে দু’দিনের জন্য গা ঢাকা দিত।
ব্যস্ত ঢাকার সুনসানে সেদিন ডোবায় লাফাচ্ছিল
মিথ্যে ভালোবাসা মাখা নোংরা উপাধিতে ভূষিত
ডজনখানেক কৃষকায় সাদ্দাম, রাজু আর আলালেরা।
এতো উচ্ছ্বল ডিগবাজি কতকাল দেখিনি!
রাস্তার পাশে জমা পানিতে কিছু ব্যাঙ লুকোচুরি খেলছিল।
যেমনটি করেছিল আমার সাথে রিমু, মানিক আর রতনেরা।
কাচারিতে রাখা খড়ের গাদার ভেতর ঢুকে
খেলা শেষে একজন আরেকজনের পিঠ চুলকাতাম।
সেই বন্ধুদের আতিপাতি করে মাঝে মাঝেই খুঁজি
ক্লান্ত জঞ্জালময় এ জীবনে। বাড়িতে গেলেও দেখা মেলেনা।
‘ভাঁট’দের বাগান থেকে সুপারি চুরি করা চঞ্চল সেই কিশোর
এখন এ মহাদেশ ছেড়ে ও মহাদেশ ঘুরে চারটে অন্নের তাগিদে।
উদ্দোম কৈশোরের ভাবনাগুলোই মনে হয় দ্রুত পা চালিয়েছে।
চলে এলাম ঘিঞ্জি চারকোনে দেয়ালে।
আমার শৈশব কৈশোরের সাথীরা, ভালো থেকো।
এবার ঈদে দেখা হবে নুরুল আমিনের চায়ের দোকানে।