বৃক্ষ উপড়ে ফেলতে এর মূলসহ তুলতে হবে অন্যথায় যতই ডালপালা সাঁটানো হোকনা কেন সেই বৃক্ষের ডালপালা মেলবে, পাতা ঝরে পড়ে আবার নতুন কুঁড়ি জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর আতংকের নাম জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ । কিন্ত এই জঙ্গিবাদের মূলে না গিয়ে সবাই আজ ডালপালা সাঁটাতে ব্যস্ত আর মুসলীম ধর্মগোষ্টির উপর দোষ দিয়েই ক্ষান্ত। প্রকৃতপক্ষে জঙ্গিবাদের উত্থান কোথায় ? কি কারনে ? কাদের সার্থে ? কাদের মদদে ? এই সকল জঙ্গিগোষ্টি আস্কারা পেয়ে পুরো পৃথিবীতে আজ মহামারি হিসেব দেখা দিয়ছে। এর উত্তর খোঁজে এই সকল স্বার্থান্বেষী মদতদাতাদের যদি নিয়ন্ত্রন করা না যায় তবে এই ধ্বংসলীলার মাত্রা ক্রমেই বাড়বে এবং বাড়তেই থাকবে। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ যে শুধুমাত্র মুসলীম কেন্দ্রীক কিংবা বিশ্ব পরিমন্ডলের নতুন কোন ঘটনা তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে যুগে যুগে সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে কোন গোষ্টি পেয়েছে ক্ষমতার স্বাদ, কেউ পেয়েছে পুরুস্কার, আর কোন কোন গোষ্টি হয়েছে তিরস্কার,কেউবা করেছে সার্থ হাসিল। মূলত রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা, দ্বন্দ্ব, ধর্মান্ধতা ও হতাশা থেকে সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি।
'
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় প্রায় দূই হাজার বছর পূর্বে ইহুদিরা বিভিন্ন উৎসবে, জনবহুল স্থানে কিংবা বাজার প্রকাশ্য দিবালোকে রোমান দখলদারদের হত্যা করত। ১৭৮৯-৯৯ সালের ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সময়েই আধুনিক সন্ত্রাসবাদের উদ্ভব বলে মনে করা হয় । ১৭৭৮-৮১ সালে রাশিয়ার গনসংগঠনের দ্বারা আধুনিক সন্ত্রাসবাদের রাজতন্ত্রবিরোধী রূপ পরিগ্রহ করে। সেই সরকার বিরোধী আন্দোলন পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য মডেল হিসেবে অনুসৃত হয়। ১৯১৪ সালে আর্চডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দকে হত্যার মাধ্যমে প্রথম মহা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪০-৫০ এর দশকে ইউরোপিয় উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগঠন গুলো দ্ধারা সৃষ্ট 'ভায়ালেন্সকে' সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। এ সময় ১৯৪৬ সালে 'ইরগুন জাই লিউমি' নামক ইহুদী সংগঠন পরিচলিত প্যালেস্টাইনে বৃটিশদের সামরিক প্রশাসনের হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলের বোমা হামলা তৎকালীন সময়ের সর্বাধিক আলোড়ন সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী ঘটনা । ইরগুনের তৎকালীন কমান্ডার মেনাচিম বেগিন পরবর্তীতে ইসরাঈলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে ভারতীয় উগ্রপন্থি হিন্দুদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বাইয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বোমা হামলা। এইসব ঘটনাবলি ইতিহাসে জঙ্গিবাদের চরম দৃষ্টান্ত । এতো গেল ইতিহাসের মাত্র কয়টি ঘটনা, ইতিহাস ঘাটলে এরকম শত শত ঘটনার অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়। অতিথের এ সব একেকটা ঘটনার পরে বেশ কিছু সময় পার হয়ে ভিন্ন কোন ইস্যুতে ভিন্ন ঘটনা ঘটতো। কিন্তু ঈদানিং এসব সন্ত্রাসী হামলা বা জঙ্গি হামলা হয়ে উঠেছে নিয়মিত রুটিন। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ার ধ্বংসের মাধ্যমে সাম্প্রতিক বিশ্বের অত্যাধুনিক সন্ত্রাসবাদের বিস্তৃতি ঘটে। বিভিন্ন গনমাধ্যমের তথ্যমতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সৃষ্ট লাদেন ও আলকায়দা তার বিরাগভাজন হয়েই টুইন টাওয়ার হামলা চালায় , সেই আল কায়দা থেকে বিচ্যুত একটি দলই বর্তমান আইএস । আবার এই আইএসকে আমেরিকা অস্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে জানা যায়। নিজেদের সার্থে ইসরাইল ফিলিস্তিনের যুদ্ধ লাগিয়ে তারা ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। গনমাধম্যের এই তথ্য পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ বিষয় হচ্ছে আমেরিকা সন্ত্রাস দমনে সোচ্চার। একদিকে জঙ্গিদের মদদ দিয়ে নিজ সার্থে জঙ্গি সৃষ্টি আর অন্যদিকে জঙ্গি দমনের নাটক সাজিয়ে কি আর জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে ? নাহ! হবেনা, হবার নয়।
,
বর্তমানে জঙ্গিবাদের আগ্রাসন এতোই ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ছে যে এখন প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গি হামলা সংগঠিত হচ্ছে এবং প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। ইসরাইল,ফিলিস্তি
ন,ইরান,ইরাক, আফগানিস্তান,পাক
িস্তান,আমেরিকা ভারত থেকে শুরু করে ফ্রান্স,তুরস্ক,জার্মনি সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় প্রতিনিয়ত কোথাওনা কোথাও হামলা হচ্ছে,চলছে।
বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে । রমনার বটমূলে ববর্ষবরণ অনুষ্টানে হামলা করে জঙ্গিবাদীরা তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ আগষ্ট সারা দেশে একযোগে বোমাহামলা,২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ২০০৪ সালে ঢাকা বই মেলায় ড. হুমায়ুন আজাদকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ( পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান) ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়াদার হত্যা, একই বছরের ২৭ আগস্ট গলা কেটে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা । বিগত বছর গুলোতে একের পর এক হত্যাকান্ডের মধ্যে ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদ, ব্লগার অনন্ত বিজয়, গাইবান্ধার হিন্দু ব্যবসায়ী তরুন দত্ত, ব্লাগার অভিজিৎ রায়, ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি নিলয় ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার, প্রকৌশলি খিজির খান, এসআই ইব্রাহিম, ব্লগার ফয়সাল আরেফিন দীপন, ঢাকার কলাবাগানের জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু খন্দকার মাহবুব রাব্বী তনয়, চট্টগ্রামের সদরঘাটের সাহা কর্পোরেশনে ম্যানেজার সত্যগোপাল সাহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, ঢাকায় কনস্টেবল মুকুল,রংপুরে জাপানি নাগরিক হুশি কুনিও, রংপুরে খাদেম রহমত উল্লাহ, ঝিনাইদহে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছমির উদ্দিন মন্ডল, পঞ্চগড়ে মঠ প্রধান কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা খ্রিস্টান হোসেন আলি সরকার, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হিন্দু দর্জি, চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা থেকে শুরু করে সম্প্রতি হলি আর্টিজান , ও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার ফলে স্পটতই বুঝা যায় যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীরা তাদের শেকড় ভালভাবেই গেড়েছে । এই সব ঘটনার পরপরই একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বারবার আইএস এর এ ভৌতিক অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে, হ্যা বাস্তবে তাই দেখা যায়। কারন এখন পর্যন্ত এ সকল ঘটনার সাথে জড়িত যারা ধরা পড়েছে তাদের সাথে আইএসএর কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ,জেএমবি,জেএমজেবি,হিযবুত তাহরির,শাহাদাত ই অলি, ও আনসার উল্লাহ বাংলাটিমের সাথেই এদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে । যদিও বিদশী সংগঠনগুলোর সরাসরী কোন শাখা বাংলাদেশে নেই তবে এরা বিদশী জঙ্গিবাদে উদ্ভোদ্ধ হয়েই দেশীয় জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করছে বলেই মন করা হয় । বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ মূলত রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা , রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ধর্মান্ধতা,ক্ষোভ, অভাব ও বেকারত্বের হতাশা থেকেই সৃষ্টি । সাম্প্রতিক সময়ের মুক্তমনারা লেখতে গিয়ে অতি জ্ঞানী হয়ে পড়েন তারা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ, এবং ভুল ব্যাখা দেওয়ার ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আঘাত লাগে এতে করে আবার কিছু মুসলিম তরুন এই মুক্তমনাদের বিনাশের মিশনে নেমে ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদী হয়ে উঠে। মেতে উঠে খুন খেলায়। বর্তমান আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মিশন মুক্তমনা হত্যা ।
অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক নিরুপায় হয়ে এবং দ্ররিদ্রতার কষাঘাতে পড়ে সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নেয় । আর কিছু রাজনৈতিক দল ও সন্ত্রাসী গোষ্টি এদেরকে ব্যাবহার করার জন্য ধর্মের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্ভোদ্ধ করে । বাংলাদেশ এবং বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদের মূল কারন যতাটা রাজনৈতিক ঠিক ততটাই ধর্মীয়। তাই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রন করতে হলে সারা বিশ্বের যে সব দেশে মুসলমান এবং সংখ্যালগুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। বুদ্ধিজিবীরা মনে করেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করা গেলে পৃথিবীর অশান্তি অর্ধেক কমে যেত। তাছাড়া কাশ্মীর, মায়ানমার এবং চীনের মুসলমানদের সমস্যা সমাধান করতে পারলে পৃথিবী প্রায় অনেকটাই শান্ত হয়ে যেত। বাংলাদেশ শান্তি প্রিয় দেশ তাই এ দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রন এমনকি নির্মূলও তেমন কোন ব্যাপার নয়। সরকারের সদইচ্ছা, জনগনের ঐক্য, সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা, কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগের ব্যাবস্তা এবং আইনের সঠিক ব্যাবহার করতে পারলেই সন্ত্রাস কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যাবস্তা থেকে বেরিয় এসে কারিগরি শিক্ষার বিপ্লব ঘটাতে হবে , দেশে পর্যাপ্ত কলকারখানা তৈরি করে শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হবে, ঘু্ষ দূর্ণীতি বন্ধ করতে হবে । উৎপাদন ব্যাবস্তার প্রতিটি স্তরে লাগাতে হবে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া । আইন করে বন্ধ করতে হবে ধর্মীয় উস্কানি। আগামী প্রজন্ম জাতে একটি উন্নত ডিজিটাল সোনার বাংলা উপহার পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে একাত্তরের চেতনা বুকে ধারন করে দেশের আপামর জনতা এবং সরকার যদি সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এক সাথে কাজ করে তবে জঙ্গীবাদেরর মূল উপড়ে ফেলে স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসবে বাংলাদেশক উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়া একটি মামুলী ব্যাপার মাত্র । আর এ রকম করা না গেলে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে পাকিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্র কিংবা বিদ্ধস্ত ইরাকের মতো বিরানভূমি । তাই সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড এই স্বপ্নে আলোর মর্শাল নিয়ে আমরা যেন হাটতে পারি আগামীর পথে এই হোক প্রত্যাশা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:০৭