___লেখাঃ- এইচ এম আলমগীর
""""""""""''''''''
মিথিয়ার দাদু অসুস্থ, বয়স বেড়েছে তাই বিভিন্ন রোগও শরীরে বাসা বেঁধেছে । সোজা হয়ে বসতে পারেননা, কথা বলতে পারেননা। তাই তাঁর সেবা দেওয়ার জন্য রোবট Old Man's Nurse-70 সংক্ষেপে OMN-70 কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই মডেলের রোবটটি সত্তর উর্ধ বয়স্কদের সেবা দানের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি। রোবটটির মাথায় একটি ডিভাইস সেটিংয়ের মাধ্যমে দাদুর মস্তিস্কের কানেকটিং দেওয়া হয়েছে। একটি ইন্টরনেট সংযুক্ত হেড প্লাগের মাধ্যমে করা হয়েছে এই কানেকটিং ব্যবস্তা । দাদু কখন কি চিন্তা করেন, কখন খিদা লাগে, কখন শরীর খারাপ লাগে আর কখন ভাল লাগে এর সবকিছু মহুর্তেই ট্রান্সফার হয় রোবট OMN-70 এর ডিভাইসে আর রোবটটি তাৎক্ষনিক উপযুক্ত ব্যাবস্তা নেয় । একটি ইলেক্ট্রিকেল নল দিয়ে দাদুর পেটে খাবার ইনপুট করা হয়। গায়ে ব্যাথা হলে রোবটটি আলতো করে টিপে দেয়, নিয়মিত ঔষধ খাওয়ায়। দাদুর প্রিয় কাজ মিথিয়ার সাথে গল্প করা। তিনি মিথিয়াকে আদর করে দাদু ভাই বলে ডাকেন। মিথিয়া রোবট OMN-70 এর নাকে লাগানো সুইচে টিপ দিতেই রোবটের মুখের স্পিকার চালু হয়ে যায়। দাদু মনে মনে গল্প করেন আর তা হুবুুহু রোবটের মুখের স্পিকারে শুনা যায় । আবার রোবটের হাতে লাগানো ছোট্র মাইক্রফোনের দিকে মুখ করে মিথিয়া কথা বললে দাদুও তা শুনতে পান ।
.
দাদু গল্প করেন, কেমন ছিল তাঁদের জীবন কিংবা তাঁদের পূর্ব পুরুষদের জীবন। একসময় পৃথিবীতে ছিল সবুজের সমারোহ । মানুষে মানুষে ছিল ভালবাসার বন্ধন, মানুষের মাঝে কাজ করতো আবেগ কিন্তু বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের কাজের গতি অর্থাৎ বেগ বেড়েছে ঠিকই কিন্তু আবেগ বলতে আর তেমন কিছু নেই বললেই চলে। এই যে তোমার বাবা মঙ্গলের আর মা চাঁদের গবেষনার জন্য দুজন দুই গ্রহ নিয়ে ব্যস্ত । আর তোমার যত্নের জন্য M-17 মডেলের রোবট রেখে গিয়েছে । মায়ের ভালবাসা বাবার আদর থেকে তুমি বঞ্চিত হচ্ছো, আমি বঞ্চিত হচ্ছি সন্তানের সেবা থেকে। রোবট কি আর মা-বাবা কিংবা সন্তানের কাজ করতে পারে! এটাতো একটা যন্ত্র সুইচ টিপে অন করলে সেটিং অনুযায়ী সব করতে পারে আর অফ করে দিলে অকেজো এর কোন ক্ষমতাই নাই। এ হয়েছে আমাদের সঙ্গী। কেমন একটা বিদঘুটে ব্যপার তাইনা দাদু ভাই!
.
মিথিয়া দাদুর কথা হা করে শুনছে আর ভাবছে কেমন ছিল সেই সময় এই পৃথিবী ? অবশ্য সে বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক এ্যপস ও বিডিও থেকে তার অনেকটাই জেনেছে। তবু দাদুর মুখে শোনার একটা মজা আছে, দাদু গল্প করেন তাঁর পূর্বপুরুষদের কথা , দাদু তাঁর দাদুর মুখে শোনা গল্পও মিথিয়াকে শোনান । দাদু বলেন এইযে তোমরা আজকের যুগে কম্পপেজ ব্যাবহার করো এর আদি নাম ছিল ক্যালকোলেটার, ক্যালকোলেটার থেক কম্পিউটার এবং এর পর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে আজকের এই কম্পপেজ । তোমরা আজ কতো সহজে ভাজ করে এটা পকেটে রাখতে পারো আবার টকপেনেও রাখতে পারো, ইচ্ছা মতো ছোটবড় করতে পারো । তবে এক সময় এটার ব্যবাহার কিংবা বহন করা সহজসাধ্য ছিলনা । এটা ছিল বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত যেমন সিপিউ, কিবোর্ড, মনিটর,মাউস ইত্যদি। মাউসের কথা বলি। মাউসের ছিল ইয়া লম্বা এক ইলেক্ট্রিকাল লেজ , মাউসকে হাতের মুষ্টিতে চেপে ধরে বিভিন্ন অপশন নির্দেশ করা হতো ।মনিটর ছিল বাক্স আকৃতির। রোবটের পেটে যে রকম মনিটর থাকে ঠিক সেরকম। টাইপের জন্য মোটা মোটা বটম যুক্ত অংশকে বলা হতো কিবোর্ড । আর এ সবগুলোর মূল সংযোগ ছিল সিপিউতে। তোমরা যে ভাবে কম্পপেজ দিয়ে সকল কাজ করতে পারো, ঠিক সেই ভাবে ঐ সময় কম্পিউটার দিয়ে সব কাজ করা যেত বলে কেউ কেউ এটাকে আদর করে যাদুর বাক্স বলে ডাকতেন । গল্পগুলো মিথিয়ার খুব ভালো লাগছে মাঝেমাঝে খিলখিল করে হাসছ । দাদুও হাসেন আর গল্প বলতে থাকেন আরো একটা মজার ব্যাপার হলো তখন সব কিছুতে আলাদা সংযুক্তি দিয়ে ইলেক্ট্রিকাল চার্য দেওয়া হতো । তোমাদের যুগের মতো এভাবে সব কিছুতেই সোলার সেটাপ ছিলনা । টকপেনের কথাই বলি, এর পূর্ব নাম মোবাইল , এটি চার্য দেওয়া হতো একটি ইলেকট্রিকেল তাঁরের লেজ দিয়ে । আরো মজার ব্যাপার ছিল যখন এটি এন্ড্রয়েডে রুপান্তরিত হলো । এই চার্য দিলে তো ঐ ফুরিয়ে যায়! এই চার্য বিড়ম্বনায় মানুষ ছিল নাজেহাল । আর বিদ্যুৎ! সে ছিল এক আজব ব্যাপার। বিজলির মতো আসতো আর যেত। তোমরা এই দিক দিয়ে অনেক সুখী। এ যুগের মানুষেরা সৌরশক্তিকে ভালভাবেই ব্যাবহার করতে পারছে। টকপেন, কম্পপেজ, রোবট, গাড়ি, বাড়ি সহ নিত্য ব্যবহার্য সব কিছুতেই এখন সোলার সেটাপ দেওয়া । ফিক্সড ব্যটারি অটো চার্য । আলাদা ভাবে চার্য দেওয়ার কোন ঝামেলা নেই।
.
হঠাৎ ক্রুতক্রুত করে মিথিয়ার টকপেনে একটা দুঃসংবাদের নোটিফিকেশন এলো । সে টকপেনে মাথায় টিপ দিয়ে কম্পপেজ স্ক্রিনটা বের করলো । অমনি দেখা গেল দুটি দেশের যুদ্ধের লাইভ দেখাচ্ছে । রোবট ফোর্স-৯৯ মডেলের যুদ্ধা রোবট গুলো মুহুর্তে হাজার বছরে গড়া একটি শহড় গুড়িয়ে দিয়েছে । মানব শিশুগুলো রোবটের পায়ের চাপে মাটিতে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামনে কোন মানুষ আসলে দূরে আঁচড়ে ফেলে দিচ্ছে। উফ!! কি ভয়াবহ । কয়েকটি ড্রোন বিমান চেষ্টা করছে নিরিহ মানুষদের উদ্ধার করতে। যাতে এদের উদ্ধার করে চাঁদে এবং মঙ্গলে শরনার্থী হিসেবে পাঠানো যায়। মিথিয়া ভয়ে কাপছে। দাদু এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। আর বলেন পৃথিবী আর বেশীদিন নাইরে দাদু , মানুষগুলো বড় বেশী অমানুষ হয়ে গেছে। মানুষকে এখন যন্ত্রমানব বললে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবেনা। যন্ত্র দিয়ে সব নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে তাঁরা নিজেরাই এখন আবগে, বিবেক, স্নেহ ভালবাসাহীন একেকটা যন্ত্রে পরিনত হয়েছে । আর যেভাবে নব আবিষ্কারের অপব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে তাতে মনে হয় পৃথিবী এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৬