somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প ★হাসি পাগলা ★

০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায় , কখনো
কখনো রাত সাড়ে এগারটা বা
বারটাও বাজে । সেদিন বাড়ি
ফিরছিলাম রাত প্রায় সাড়ে এগারটা
নাগাদ , বাড়ির পথ ধরতেই পেছন থেকে
একটা অদ্ভুত হাসি কানে আসলো ,
আচমকা এমন হাসিতে ভয় পাবারই কথা ,
তবু সাহস নিয়ে পেছনে তাকালাম ।
মোবাইলের টর্চের আলোটা একটু উচু
করে ধরলাম । দেখি অর্ধ নগ্ন একটা লোক
পিঠে ঝুলানো একটি কালো পুটলি
নিয়ে দাড়িয়ে আছে , উস্কো খুসকো
চুল, দাঁত খিঁচকিয়ে হাসছে । বুঝতে
বাকি রইলনা এ যে একটা বদ্ধ পাগল ।
ধমক দিতেই উল্টা ঘুরে দিল দৌড় ।
...
সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে
বাজারের দিকে যেতেই চোখে পড়ল
রাতের সেই পাগলটাকে । একটি বন্ধ
দোকানের পাশে বসে কাঁদছে ,
কান্না দেখে কাছে গেলাম যা
দেখলাম তা খুবই অমানবিক কে বা
কারা পাগলটাকে খুব মেরেছে ,
গালের চামড়ায় দাগ এখনো স্পষ্ট ,
পিটে কয়েকটা বেতের দাগ , বুঝতে
বাকি রইলনা যে নিশ্চই কাউকে ভয়
দেখিয়েছিল তাই এভাবে নির্মম
নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে ।
পাগলটার প্রতি মায়া লেগে গেল
একটি খাবার হোটেলে নিয়ে কিছু
ডালভাত খাওয়ালাম আর ধমক দিয়ে
বললাম আর কাউকে ভয় দেখাবিনা ।
পাগলকি আর অতসব বুঝে তারপরেও
কাউকে কাউকে ভয় দেখাতে শুনেছি

...
বাজারের সবাই তাকে এখন চেনে
হাসি পাগলা নামে , ওর হাসি সবার
বেশ পরিচিত হয়ে গেছে , এখন হঠাৎ ওর
হাসি শোনে কেউ আর তেমন ভয়
পায়না । খাবারের দোকানগুলোতে
ঘুরে ঘুরে খাবার চায় , হোটেলের
কাস্টমারদের সাথে তাল মিলিয়ে
টিভি দেখে , গানের তালে কখনো
কখনো নাচে , কেউ মারলে একটু কাঁদে
, আবার হাসে , ধমক দিলেও হাসে
অর্থাৎ হাসে একটু বেশী । পাগল হলেও
সে অন্য পাগলদের মত নোংরা নয় ,
খালি গায়ে থাকে সব সময় , পরনে
একটা প্যান্ট , তেলের অভাবে রুক্ষ চুল ,
পিঠে সবসময় ঝুলানো তাকে একটা
কালো পুটলি ।
...
বাজারের পুকুরে নিয়মিত একটি অর্ধ
ছেড়া গামছা দিয়ে গোসল করে ,
রোদে শুকিয়ে তা আবার পুটলিতে
ভরে রাখে , আমি খালি গা ঢাকতে
একটা নতুন শার্ট কিনে দেই , কিন্তু সে
এটি না পরে পুটলিতে রেখে দেয় ,
কিছুতেই শার্টটি পরানো যায়নি ।
আমাকে দেখলেই দৌড়ে কাছে ছুটে
আসে , দুই টাকা চায় , বলে ভাত খাব ,
জানি দুই টাকা দিয়ে ভাত পাওয়া
যায়না তাই আমার কাছে আসলেই
হোটেলে নিয়ে যাই , যা চায় তাই
খাওয়াই । অন্য কারো কাছে কিছু
চায়না , শুধু আমার কাছে চায় এ জন্য
পাগলটার প্রতি আরো বেশী মায়া
বসে যায় ।
...
আস্তে আস্তে শীত পড়তে শুরু করেছে ,
মাঝ রাতে ঠান্ডা বেড়ে যায় আবার
ঘুমটাও বেশ ভালো হয় , তাই প্রচন্ড ঘুমে
আচ্ছন্ন , হঠাৎ মাইকের আওয়াজে ঘুম
ভাংলো , ঘড়ির কাটা তখন রাত
তিনটা , মাইকে কি ঘোষণা হচ্ছে কান
পেতে শুনার চেষ্টা করি , কেউ একজন
মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন , অত্র
এলাকায় রেড এলার্ট যারি করা
হয়েছে , চতুর্দিকে র্যাবের
নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঘিরে রাখা
হয়েছে এরই মাঝে ঠাশ ঠাশ গুলির
শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে গেল
। মনে হচ্ছে র্যাবের সাথে কোন
অস্রধারী সন্ত্রাসী চক্রের বন্দুক যুদ্ধ
চলছে , বেশ ভাবনায় পড়ে গেলাম ,
আমাদের এই অজপাড়াগায়ে বন্দুকযুদ্ধ
করার মত এত বড় শক্তিশালী সন্ত্রাসীই
বা কে আছে ! প্রায় আধঘন্টা পরে শব্দ
একটু একটু করে কমতে লাগল , সকাল হতে
এখনো অনেক সময় বাকি এরই মধ্যে
আবারও মাইকে ঘোষণা আসল ৭০ লক্ষ
টাকা মূল্যের কষ্টি পাতরের মূর্তিটি
উদ্ধার করা হয়েছে , গ্যাং লিডার
কেরামত সহ পুরো পাচারকারি ও
সন্ত্রাসী চক্রই ধরা পড়েছে , এলাকা
এখন সম্পূর্ন নিরাপদ । আমাদের পাশের
বাড়ির কেরামত চাচা শুনেছি কয়লার
ব্যাবসা করেন , চলনবলন খুবই সহজ সরল ,
ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছিনা ,
মনে হলো ঘুমের ঘোরে বোধ হয়
উলটাপাল্টা স্বপ্ন দেখছি ।
...
সকালে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ
দেখে চোখ একেবারে ছানাবড়া হয়ে
গেল , গোয়েন্দা অফিসার আব্দুল আলী
হাসির নেতৃত্বে চুরি হওয়া মূর্তি সহ
র্যাবের হাতে গ্যাং লিডার
কেরামত ও পুরো গ্যাং চক্র আটক ।
খবরের বিস্তারিত যা শুনলাম তা
হতবাক হওয়ার মতই ঘটনা, বিদেশে
পাচারের উদ্যেশ্য গত একমাস আগে
কেরামতের নেতৃত্বে এটি চুরি করে
এনে তার বাড়িতে রাখা হয়েছিল ,
প্রায় সময়ই সাধারন লোকের বেশে বড়
বড় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা নাকি
ছিল আমাদের এলাকায় , শুধু মুর্তি
পাচার নয় আরো অনেক নাশকতা মূলক
কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করা হতো
কেরামতের বাড়িতে , আর তা যেনে
যায় গোয়েন্দা বাহিনী , কেরামত সহ
পুরো চক্রকেই রাখা হয় গোয়েন্দা
নজরদারিতে , মূর্তি রাখার প্রকৃত স্থান
উদ্ধারের দায়িত্ব ও কেরামতকে
নজরদারির দায়িত্ব পালন করেন
গোয়েন্দা আব্দুল আলী হাসি ।
কেরামত যখন জানতে পারলো সে
গোয়েন্দা নজরদারিতে পড়েছে তখনই
সেটি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করল ,
তবে তার সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের
পূর্বেই গ্রেফতার হতে হল র্যাবের
হাতে।
...
একটু পরেই টিভির পর্দায় দেখা গেল
সেই স্বর্ণ উদ্ধারের নায়ক গোয়েন্দা
আব্দু আলী হাসিকে , দেখেতো
রিতিমত মাথা ঘুরপাক খেতে লাগলো
আরে এতো দেখি আমাদের সেই হাসি
পাগলা , হয়তো টিভিতে দেখে
চিনতামনা কিন্তু ওর গায়ে আমার
দেওয়া শার্ট আর অতি পরিচিত হাসির
রেখা দেখে চিনতে একটুও ভুল হলনা ,
আমার মত টিভি সেটের সামনে বসা
সকলেই হতবাক । সবার মুখে দুইটা নাম
লেগেই আছে , হাসি পাগলা আর
কেরামত ।
...
কি বিচিত্র এ জগত সব কিছু এক
অগোছালো স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে ।
এতো বড় একজন সম্মানী লোক এতোদিন
অনাদরে অবহেলায় রাস্তায় রাস্তায়
ঘুমিয়েছেন , শুধু মাত্র দেশের মানুষের
জন্য , দেশ সম্পদ রক্ষা করতে নির্দিধায়
এত কষ্ট সহ্য করেছেন ! আজ নিজেকে
অনেক ধন্য মনে হচ্ছে , আমার চর্মচক্ষু না
চিনলেও অন্তরচক্ষু হয়তো চিনতে
পেরেছিল তাই আমি পেয়েছিলাম এই
মহান মানুষটির সান্যিধ্য ।
...
.
তিন দিন পর..
.
একটি গাড়িবহর এসে থামল আমার
বাড়ির সামনে , চোখে কাল
সানগ্লাস পরিহিত আমার দেওয়া সেই
শার্টটি পরে আমারই বাড়িতে হাজির
হয়েছেন সদ্য ঘোষিত শ্রেষ্ট গোয়েন্দা
আব্দুল আলী হাসি অর্থাৎ আমার এবং
আমাদের সেই হাসি পাগলা । কাছে
এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন , বন্ধু বলে
ডাকতেই আর অস্রু সংবরণ করতে
পারলামনা আমার চোখ বেয়ে
আবেগের ঝর্ণাধারা বইতে লাগল ।
হাসি পাগলা আসার খবর শোনে
এলাকার সবাই ছুটে আসছে আমার
বাড়ির দিকে তাদের অতি পরিচিত
হাসি পাগলার আসল রূপটা চিনে
নিতে আর এক নজর দেখতে , হয়ত কোন
হোটেলে পাগলা নাচ , কিংবা
রাতে হঠাৎ করে ভয় দেখানোর মত
কান্ড আর ঘটবেনা , যেখানে
সেখানে ঘুমাতে দেখা যাবেনা
হাসি পাগলাকে , কিন্তু হাসি
পাগলা প্রিয় গোয়েন্দা হাসি হয়ে
রয়ে যাবে সব মানুষের অন্তরে ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×