somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প ★ নীল স্বপ্ন★

০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই মটু এদিকে আয় আমার সাথে মার্কেটে যাবি চল । মামা তুমি আমাকে মটু বলছো কেন ? তুই মোটা তাই মটু ডাকলাম, আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন থেকে তোকে চিকনা বলে ডাকবো তবু দেখি তোর শার্ট গুলো একটু লুজ হয় কিনা ঠিক আছে ? হাহাহা ।
রাশেদঃ মামা!!!
প্রায় সমবয়সী ভাগ্নে রাশেদের সাথে মাঝে মাঝে এভাবেই মজা করে লন্ডন প্রবাসী মামা লুটন । বিয়ে করবে বলে দেশে ফিরেছে ,আর কয়দিন পরেই সানাই বাজবে , নতুন বউ ঘরে আসবে সেই আনন্দে দক্ষিণের হাওয়া বইছে তার মনে ।
...
হবু স্ত্রী নীলার সাথে চর্মচক্ষুর ইশারা এই প্রথমবারই ঘটছে , আর এই প্রথম ইশারেতেই যেন তার মনে বইতে লাগলো এক কোমল শিহরণ , মনের ভেতরটা খুশিতে নাচতে লাগলো । নীলাকে এক নজর দেখার তৃষ্ণাতো মিটলোইনা বরং সারা জীবনও তাকে চেয়ে চেয়ে দেখলেও এ তৃষ্ণা মিটবেনা । নীলার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় হয় লুটনের । প্রায় বছর খানেক আগে ”নীল স্বপ্ন” নামের একটি আইডিতে এড দেয় সে , এড দেওয়ার পর থেকেই ঐ আইডি থেকে আসা ভালো ভালো লেখা গুলোতে লাইক কমেন্ট করে লুটন । প্রতিটা কমেন্টের চমৎকার রিপ্লাই আসে ”নীল স্বপ্ন” আইডি থেকে ।
একদিন প্রবাসীদের জীবন কথা নিয়ে একটি স্টেটাস দেয় লুটন আর তাতে নীল স্বপ্নের চমৎকার কমেন্টে পুলকিত হয়ে সে ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে ধন্যবাদ জানায় । ধন্যবাদকে স্বাগত জানায় নীল স্বপ্ন আর তখন থেকেই ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কথার পিঠে কথার ঝুড়ি আর ভালো লাগা ভালবাসার অধ্যায় গড়ে উঠে । চিরচারিত নিয়মে মোবাইল নাম্বার বিনিময়ের ফলে মোবাইলে কানে কানে মনের কথা গুলো আদানপ্রদান ঘটে । ভালবাসার রঙ্গ আরো রঙ্গীন হতে থাকে । ভিডিও কলে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বলতে ওরা আরো চঞ্চল হয়ে উঠে । একজন আরেকজনকে পেতে চায় কাছে আরো কাছে ।
অবশেষে সেই প্রতিক্ষার প্রহর শেষ হলো একজন আরেকজনকে চর্মচক্ষু দিয়ে গভির ভাবে পরখ করে নিল , দুই পরিবারের কথা পাকাপোক্ত , আর মাত্র সাত দিন পরেই বিয়ে।
...
লুটন সবার সাথে খুব মজা করছে , হাসছে আনন্দ করছে তার চোখে এখন কেবল একটাই স্বপ্ন যে স্বপ্নের রং গাড় নীল । এ নীল পৃথিবীটা কেবল নীলা আর লোটনের , এর আকাশের তারা গুলো নীল , বাগানের ফুল গুলো নীল । সব নীল ছাপিয়ে একটি চন্দ্র উকি মারে আকাশের পূর্ব কোণে হাসি ভরা ছোট্র সোনামণির মতো তাদের ভালবাসার ফসল রূপে ।
...
বিয়ের মার্কেট করা শেষ । মার্কেট বলতে আসলে তেমন কিছু না , কারন নীলার জন্য ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার , একটি হীরার নেকলেস , লন্ডনের সেরা মার্কেট থেকে শাড়ি সহ প্রায় সব জিনিসই সে কিনে এনেছে । বাবা-মা আর হবু শশুর আর শাশুড়িদের জন্যও ঐ মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনেছে । তবু স্পেশাল ভাবে আত্মীয় স্বজনের জন্যেতো কিছু কিনে দিতে হবে । বিয়ের দিন সবাই নীল সাজে সাজবে তাই লুটন তার ভাই এবং ভাগ্নাদের নীল রঙ্গের পাঞ্জাবী আর বোন এবং ভাগ্নিদের জন্য নীল শাড়ি কিনল । দুজনের থাকার ঘরকে আরো আকর্ষণীয় করতে সাজ সরঞ্জাম কিনা হলো । রাশেদের আবদারে শহরের সেরা হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে মার্কেট থেকে বাসায় ফিরল ওরা । অনেকদিন পর আত্মীয়-স্বজন সবাই একত্রিত হয়ছে , বাসায় চরম আনন্দের উত্তেজনা । লুটনকে নিয়ে সকলে এক সাথে রাতের খাবার পর্ব শেষ করে খুশগল্পে মেতে উঠেছে । গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে গেল ,সবাই একে একে হাই তুলতে তুলতে ঘুমের জন্য যার যার কক্ষে চলে যায় ।
লুটনও একটা লম্বা হাই তোলে দরজা লক করে ঘুমিয়ে পড়ে ।
...
সকাল এগারোটা , এতো বেলা হয়েছে তবু লুটনের ঘুম ভাঙ্গছেনা । সকালে ওরা দুজন কোথায়ে যেন যাওয়ার কথা । রাশেদ দরজায় ডাকছে মামা ওঠো বেলা এগারোটা বাজে । ওর ডাকাডাকির ব্যস্ততা দেখে কেউ কেউ বললেন কিরে ওকে ডাকছিস কেন ছেলেটা অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে হয়তো অনেক ক্লান্ত ওকে একটু ঘুমাতে দে । রাশেদ মনে মনে ভাবে দূর আমি গোসলটা সেরে নেই এর ফাঁকে মামা উঠে গেলে দুপুরের খাবার খেয়েই না হয় বের হবো । সে গোসল থেকে এসে দেখে লুটন মামা এখনো ঘুমাচ্ছে , তার মনে খটকা লাগে ও মামা -মামা ওঠো বলে জোরে জোরে ডাকে কিন্তু সেই ডাকের কোন সাড়া নেই । তার ডাকের আওয়াজে সবাই জড়ো হয়ে যায় , কেউ কেউ দরজায় ধাক্কা দেয় কিন্তু ভেতর থেকে লুটন জাগেনা । দরজা ভেঙ্গে দিয়ে সবাই ভেতরে ডুকে দেখে লুটনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে , অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে তার দেহ ।
...
এম্বুলেন্সে করে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে আনা হলো । ডাক্তার লুটনের হাত ধরলেন , চোখের চশমা খোলে করুণ দৃষ্টিতে একটি পলক ফেললেন । কেউ যেন এই পলকের মানেটা কিছু বুঝেও বুঝতে পারছেনা কেবল হা করে লুটনের নিথর দেহের পাশে দাড়িয়ে রয়েছে । অল্প কিছুক্ষণ পরেই একটি ডেড
সার্টিফিকেট আসলো এখন থেকে প্রায় ৫ ঘন্টা পূর্বে লুটন হার্ট ফেল করেছে তার সাজানো নীল স্বপ্নকে শুধুই স্বপ্ন রেখে চিরনিদ্রায় চলে গেছে ।
...
লোটনের চোখ যেন চেয়ে আছে নীলার দিকে , নীলা গুটি গুটি পায়ে কাছে যায় , হাটু গেড়ে বসে লোটনের লাশের পাশে । নীলার চোখে কোন অশ্রু নেই অতি শোকে যেন সব অস্রু শুকিয়ে গেছে । কেমন যেন পাথরের মূর্তির মতো বসে আসছে সে । হাসছে না কাঁদছে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা । হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে লোটনের লাশের পাশে পড়ে যায় নীলা। সবাই থাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায় । জ্ঞান ফিরলে সে অসংলগ্ন আচরন শুরু করে ।
..
পাগল হয়ে গেছে নীলা । একটা নষ্ট মোবাইল তার হাতে থাকে সময় , কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে "প্লিজ ডোন্ট ডিস্ট্রাব মি , নাউ আইএম চ্যাটিং ফোর হিম ।মাঝে মাঝে মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে, আবার কুড়িয়ে নিয়ে পরম যত্নে বুকে আগলে রাখে।
...
আজ লোটনের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে , ডাক্তারের নীবিড় পর্যবেক্ষণে সুস্থ হয় নীলা । লুটনের বাবা মা নীলাকে দেখতে যান , লুটনের নীল স্বপ্নের রাণী নীলাকে বৌ-মা ডাকার স্বাদ পূর্ণ হনি তাঁদের । তবে নীলার মাঝে লুকিয়ে থাকা তাঁদের একমাত্র সন্তান লুটনকে খোজে বেড়ান । নীলাকে মেয়ে হিসেব গ্রহণ করে বুকে টেনে নেন । নীলার জন্য আনা লুটনের সব স্বর্ণ , শাড়ী আর হিরার নেকলেসটি পরিয়ে একেবারে নীল রঙ্গে সাজিয়ে তোলেন নীলাকে ।গভির আবেগে নীলা আর লোটনের মা গলাজড়াজড়ি করে কাঁদেন । তাদের এ আবেগ ঘন মূহুর্তে ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ, স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো প্রকৃতি,আর এর চারপাশে যেন গুঙ্গাচ্ছে একটি স্থব্ধ হয়ে যাওয়া নীল স্বপ্ন।
গল্প:-
-------নীল স্বপ্ন
লেখাঃ HM Alamgir
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×