[মুক্তিযুদ্ধের প্রতিবেদন ২]
- মার্টিন এডিনি
প্রায় পঞ্চাশটা গ্রাম। ধানক্ষেতগুলোর মধ্যে মাটির ভিটে করে তৈরি। বাড়িগুলোর খড়ের বেড়া আমগাছ ও কলাবাগানে ঢেঁকে আছে। ঢাকা থেকে ২০ মাইল দূরে আমিনপুর ইউনিয়ন যেতে হয় ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে। আমরা যখন পৌঁছালাম তখন আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন কমিটির সদস্যরা চায়ের দোকানে কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল। দোকানের দেয়ালে সংবাদপত্র ও ‘দেশ বিদেশের গল্প’র প্রুফ সাঁটা ছিল। সারা প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত সংগ্রাম পরিষদের মতো তাদেরটাও একটি সংগ্রাম পরিষদ। পূর্ব বাংলাকে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে ধরেই নিয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছে। ৫৮টি গ্রামে তাদের তিনশত সক্রিয় কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ জনকে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ (action committee) গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। ইতোমধ্যে একজন গ্রামবাসী তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। তিনি ভারতের রয়াল আর্মির ল্যান্স কর্পোরাল ছিলেন বলে দাবি করেন। অত্যন্ত সাহসের সাথেই তারা জানালো, তাদের কাছে শুধুই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন লাঠি, রামদা ও তীর-ধনুক আছে। তবু তারা আত্মবিশ্বাসী যে শত্রুদের অস্ত্রসস্ত্র কেড়ে নিতে পারবে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, সেনাবাহিনী সরাসরি আক্রমণ করলে আপনারা কী করবেন? প্রথমেই তারা নৌ পারাপার বন্ধ করে দেবে বলে জানালো। তারা সড়কপথ বন্ধ করে দেবে এবং এ্যামবুশ করবে। ভূমি থেকে উঁচু সংকীর্ণ মহাসড়কগুলোতে শত্রু পরিবহন এ্যামবুশ করা খুব সহজ।
‘মুক্ত’
অনুমান করা যায়, সেনাবাহিনী অগ্রসর হতে শুরু করলে বাংলার পুরাতন রাজধানী সংলগ্ন এই আমিনপুরে অভিযান চালাবে এবং ধ্বংস্তুপে পরিণত করবে। এখানে আমরা যে আলাপচারিতা শুনলাম তা ঢাকায়ও চলছে। তবে নিজেদের আলাপচারিতা সমর্থন করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ এরা দেখতে পারছে না। যে বন্ধু আমাদেরকে আমিনপুরে নিয়ে গিয়েছিল সে বলল, ‘সেনাবাহিনী যদি দমননীতি গ্রহণ করে তাহলে সে নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে গ্রামটিকে ‘মুক্ত এলাকা’ ঘোষণা করবে।
জনশুণ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কংক্রিট বক্সের একটি দেয়ালে .২২ বোরের দুর্বল রাইফেল সাজিয়ে রেখেছে ছাত্র নেতারা। তাদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতোমধ্যে এসে গেছে। ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট নুরে আলম সিদ্দীকি জানালো, ইয়াহিয়া যদি আসে তাহলে সে আসবে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে। “পাকিস্তান নিয়ে আমাদের আর কোনো মোহ নেই। আমরা পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছি। আপনি কি এখানে একটাও পাকিস্তানী পতাকা দেখেছেন?” ছাত্ররা স্বল্পতম সময়ের নোটিশে ব্যাপক সংখ্যক বিক্ষোভকারী সংগ্রহ করতে পারে। তারা অন্যতম সংঘবদ্ধ শক্তি। তারা শেখ মুজিবকে সমঝোতার পরিবর্তে অন্যকিছু করতে চাপ দিচ্ছে। ছাত্ররাই পেছনে থেকে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দিয়েছে, যদিও তিনি স্পষ্ট করে স্বাধীনতার কথা বলছেন না। শেখ মুজিবকে তারা সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেছে এবং দু’একজন বাদে সকলেই তার যেকোনো নির্দেশ পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সকলে একস্বরে কথা বলছে, সে কণ্ঠস্বর শেখ মুজিবের। গ্রামের চায়ের দোকানের লোকজন আর চেম্বার অব কমার্স অফিসের ব্যক্তিদের কথার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। এখানকার ছাত্রদের স্বাধীনতা চাওয়ার পেছনে বিশেষ স্বার্থ আছে। তারা অভিযোগ করে যে তাদের সাত কোটি জনগণের চাকরির সুযোগ একেবারেই শূন্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তারা হয়ত পোস্ট অফিসের কেরানী বা শিক্ষকতার চাকরী পেতে পারে। সরকারি এবং অন্য সকল ভালো চাকরী পশ্চিম পাকিস্তানীদের জন্য সংরক্ষিত। মাসে ২০ পাউন্ড পাওয়া যায় এমন একটা চাকরী জোটাতেও তাদের অত্যন্ত বেগ পেতে হয়।
কর্মসূচি
তাদের কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়তবা বাইবেলে বর্ণিত ইহুদিদের ‘প্রমিজড ল্যান্ড’ এর মতোই কাঙ্ক্ষিত, কিন্তু সে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এখনও অনেক পথ পড়ি দিতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে একক জাতীয় চেতনা থাকলেও তারা আদর্শগতভাবে একেবারে ভিত্তিহীন। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কিংবা পূর্ব বাংলার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজতন্ত্রে কথা বলে। কিন্তু আপনি যখন তাদের বলবেন যে এই উপমাহাদেশে সমাজতন্ত্র এমন একটি অমনিবাস শব্দে পরিণত হয়েছে যে তা দ্বারা সবকিছুই বুঝানো সম্ভব। তখন তারা পাট এবং অন্যান্য ভারী শিল্পগুলো জাতীয়করণের কথা বলবে যা সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। সমাজতন্ত্র বলতে তারা এসব শিল্প জাতীয়করণের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেবে। বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাকে এশিয়ান কমিউনিজমের ককপিট হিসেবে বিদেশি প্রভাবগুলোর কাছে কাঙ্ক্ষিত করে তুলেছে। তারপরও পূর্ব বাংলার পথ নির্ধারণ হওয়া এখনও বাকি রয়ে গেছে। একজন ছাত্রনেতা বললেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে ‘সকলের সাথে বন্ধত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’। তার সহযোগীরা আবার বললেন, সকল বিদেশি প্রভাবকে উৎখাত করা হবে এবং প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলনকেই সমর্থন করা হবে। এই আন্দোলনকে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং মনে করে যে বিশ্ববাসী এই সংগ্রামকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না। কী ঘটতে পারে সে ব্যাপারে তারা খুব বেশি ভাবছে না এবং সেনাবাহিনীকেই প্রথম পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছে বলে মনে হয়। ছাত্র, গ্রামবাসী এবং যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে গেছে তারা ইতোমধ্যে অনুমান করতে শুরু করেছে যে তাদের সাহসী বক্তব্যগুলো হয়ত অচিরেই পরীক্ষিত হবে।
দ্য গর্ডিয়ান
২৩ মার্চ, ১৯৭১
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিবেদন ১ - মার্টিন এডিনি
প্রায় পঞ্চাশটা গ্রাম। ধানক্ষেতগুলোর মধ্যে মাটির ভিটে করে তৈরি। বাড়িগুলোর খড়ের বেড়া আমগাছ ও কলাবাগানে ঢেঁকে আছে। ঢাকা থেকে ২০ মাইল দূরে আমিনপুর ইউনিয়ন যেতে হয় ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে। আমরা যখন পৌঁছালাম তখন আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন কমিটির সদস্যরা চায়ের দোকানে কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল। দোকানের দেয়ালে সংবাদপত্র ও ‘দেশ বিদেশের গল্প’র প্রুফ সাঁটা ছিল। সারা প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত সংগ্রাম পরিষদের মতো তাদেরটাও একটি সংগ্রাম পরিষদ। পূর্ব বাংলাকে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে ধরেই নিয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছে। ৫৮টি গ্রামে তাদের তিনশত সক্রিয় কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ জনকে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ (action committee) গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। ইতোমধ্যে একজন গ্রামবাসী তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। তিনি ভারতের রয়াল আর্মির ল্যান্স কর্পোরাল ছিলেন বলে দাবি করেন। অত্যন্ত সাহসের সাথেই তারা জানালো, তাদের কাছে শুধুই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন লাঠি, রামদা ও তীর-ধনুক আছে। তবু তারা আত্মবিশ্বাসী যে শত্রুদের অস্ত্রসস্ত্র কেড়ে নিতে পারবে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, সেনাবাহিনী সরাসরি আক্রমণ করলে আপনারা কী করবেন? প্রথমেই তারা নৌ পারাপার বন্ধ করে দেবে বলে জানালো। তারা সড়কপথ বন্ধ করে দেবে এবং এ্যামবুশ করবে। ভূমি থেকে উঁচু সংকীর্ণ মহাসড়কগুলোতে শত্রু পরিবহন এ্যামবুশ করা খুব সহজ।
‘মুক্ত’
অনুমান করা যায়, সেনাবাহিনী অগ্রসর হতে শুরু করলে বাংলার পুরাতন রাজধানী সংলগ্ন এই আমিনপুরে অভিযান চালাবে এবং ধ্বংস্তুপে পরিণত করবে। এখানে আমরা যে আলাপচারিতা শুনলাম তা ঢাকায়ও চলছে। তবে নিজেদের আলাপচারিতা সমর্থন করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ এরা দেখতে পারছে না। যে বন্ধু আমাদেরকে আমিনপুরে নিয়ে গিয়েছিল সে বলল, ‘সেনাবাহিনী যদি দমননীতি গ্রহণ করে তাহলে সে নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে গ্রামটিকে ‘মুক্ত এলাকা’ ঘোষণা করবে।
জনশুণ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কংক্রিট বক্সের একটি দেয়ালে .২২ বোরের দুর্বল রাইফেল সাজিয়ে রেখেছে ছাত্র নেতারা। তাদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতোমধ্যে এসে গেছে। ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট নুরে আলম সিদ্দীকি জানালো, ইয়াহিয়া যদি আসে তাহলে সে আসবে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে। “পাকিস্তান নিয়ে আমাদের আর কোনো মোহ নেই। আমরা পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছি। আপনি কি এখানে একটাও পাকিস্তানী পতাকা দেখেছেন?” ছাত্ররা স্বল্পতম সময়ের নোটিশে ব্যাপক সংখ্যক বিক্ষোভকারী সংগ্রহ করতে পারে। তারা অন্যতম সংঘবদ্ধ শক্তি। তারা শেখ মুজিবকে সমঝোতার পরিবর্তে অন্যকিছু করতে চাপ দিচ্ছে। ছাত্ররাই পেছনে থেকে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দিয়েছে, যদিও তিনি স্পষ্ট করে স্বাধীনতার কথা বলছেন না। শেখ মুজিবকে তারা সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেছে এবং দু’একজন বাদে সকলেই তার যেকোনো নির্দেশ পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সকলে একস্বরে কথা বলছে, সে কণ্ঠস্বর শেখ মুজিবের। গ্রামের চায়ের দোকানের লোকজন আর চেম্বার অব কমার্স অফিসের ব্যক্তিদের কথার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। এখানকার ছাত্রদের স্বাধীনতা চাওয়ার পেছনে বিশেষ স্বার্থ আছে। তারা অভিযোগ করে যে তাদের সাত কোটি জনগণের চাকরির সুযোগ একেবারেই শূন্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তারা হয়ত পোস্ট অফিসের কেরানী বা শিক্ষকতার চাকরী পেতে পারে। সরকারি এবং অন্য সকল ভালো চাকরী পশ্চিম পাকিস্তানীদের জন্য সংরক্ষিত। মাসে ২০ পাউন্ড পাওয়া যায় এমন একটা চাকরী জোটাতেও তাদের অত্যন্ত বেগ পেতে হয়।
কর্মসূচি
তাদের কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়তবা বাইবেলে বর্ণিত ইহুদিদের ‘প্রমিজড ল্যান্ড’ এর মতোই কাঙ্ক্ষিত, কিন্তু সে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এখনও অনেক পথ পড়ি দিতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে একক জাতীয় চেতনা থাকলেও তারা আদর্শগতভাবে একেবারে ভিত্তিহীন। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কিংবা পূর্ব বাংলার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজতন্ত্রে কথা বলে। কিন্তু আপনি যখন তাদের বলবেন যে এই উপমাহাদেশে সমাজতন্ত্র এমন একটি অমনিবাস শব্দে পরিণত হয়েছে যে তা দ্বারা সবকিছুই বুঝানো সম্ভব। তখন তারা পাট এবং অন্যান্য ভারী শিল্পগুলো জাতীয়করণের কথা বলবে যা সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। সমাজতন্ত্র বলতে তারা এসব শিল্প জাতীয়করণের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেবে। বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাকে এশিয়ান কমিউনিজমের ককপিট হিসেবে বিদেশি প্রভাবগুলোর কাছে কাঙ্ক্ষিত করে তুলেছে। তারপরও পূর্ব বাংলার পথ নির্ধারণ হওয়া এখনও বাকি রয়ে গেছে। একজন ছাত্রনেতা বললেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে ‘সকলের সাথে বন্ধত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’। তার সহযোগীরা আবার বললেন, সকল বিদেশি প্রভাবকে উৎখাত করা হবে এবং প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলনকেই সমর্থন করা হবে। এই আন্দোলনকে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং মনে করে যে বিশ্ববাসী এই সংগ্রামকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না। কী ঘটতে পারে সে ব্যাপারে তারা খুব বেশি ভাবছে না এবং সেনাবাহিনীকেই প্রথম পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছে বলে মনে হয়। ছাত্র, গ্রামবাসী এবং যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে গেছে তারা ইতোমধ্যে অনুমান করতে শুরু করেছে যে তাদের সাহসী বক্তব্যগুলো হয়ত অচিরেই পরীক্ষিত হবে।
দ্য গর্ডিয়ান
২৩ মার্চ, ১৯৭১
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিবেদন ১
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৫