ঢাকার যান্ত্রিক দুর্বিষহ জীবনটা শান্ত হয়ে আসে বাড়ীর নির্মল সুন্দর পরিবেশ বলে। বাড়ীতে গেলে কোন কাজ থাকে না, সারাদিন ঘুম , খাওয়া , বই পড়া অথবা লেপুর ছবি দেখা, এই হয় আমার কাজ।
গত ঈদে বাড়ী গেলাম ঈদের ঠিক আগে। বাড়ীতে কি কাজ করবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বই যেগুলো ছিলো তা পড়া সব শেষ। নেটের কানেকশন ভালো না তাই ব্লগিং , ফেবু চালানো ঝামেলার। কাজ নিলাম হ্যারি পটার মুভি দেখার।
টিভিতে মাঝে মাঝে কিছু কিছু দেখলেও হ্যারি পটার সিরিজ ধারাবাহিক ভাবে দেখা শুরু করলাম গতবছর । একে একে দেললাম সবগুলো সিরিজ। ভালোই লেগেছিলো , কিন্তু আর সময় না পাওয়ার কারণে একবারই দেখতে পেরেছিলাম। এবার বাড়ী গিয়ে কাজ না পেয়ে নিলাম সে উদ্যোগ।
ঈদের আগের রাতে একটা পর্ব দেখলাম । ঈদের নামাজ পড়ে আরো এক পর্ব। দুপুরে বোনের বাড়ী গিয়ে ফিরে এলাম সন্ধ্যার আগেই।
আবার শুরু করলাম দেখা । দেখতে দেখতে আরো বেশ কয়েকটি পর্ব দেখলাম ।
গ্রাম এলাকায় রাত ৯/১০ টার পরই নিশ্চুপ হয়ে যায়। একা একা বসে রাত ১ টা পর্যন্ত দেখলাম । নোটবুক সাইজ লেপু হওয়ায় বিছানায় মশারীর ভিতরেই ঢ়ুকিয়ে নেয়া গেল।
হ্যারি পটার দেখতে দেখতে হ্যারি পটার চরিত্রের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছিলাম । যাদু বিদ্যার হোগার্টস স্কুলের ক্লাসরুম ,অডিটোরিয়াম , বারন্দা , বন সব কিছুর মাঝে নিজের অনুভুতিকে অবিস্কার করলাম, এ যেন এক ঘোর লাগা মূহুর্ত।
ইংরেজি লিসেনিং এর খুব ভালো না হওয়ায় সব কথা বুঝতে পারিনি বলে অপূর্ণতা বোধ হচ্ছিল। মাঝে একটি পর্ব হিন্দি ডাবিং দেখে খুব বিরক্ত লাগলো।
বাচ্চা হ্যারিকে যত সুন্দর লাগছিলো মাঝখানে খুব সুন্দর না লাগলেও শেষ দিকে আবার পরিপক্ক হ্যারির দেখা পেলাম। ছেলেটা মানে রাডক্লিফ পটার চরিত্রের সাথে মিশে গিয়েছিলো মনে হচ্ছে হ্যারি পটার সে না হয়ে অন্য কেউ হয়ে হয়তো মানাতো না। চরিত্রের সাথে বড় হয়ে উঠা ভিন্ন রকম ভালো লাগা তৈরী করেছে।
মুভি দেখে শেষ করে অভ্যাস মতো নেটে হ্যারি পটার ঘাটা শুরু করলাম , বিস্তর লেখালেখি চোখে পড়লো। মুভি রিভিউ , অনুভুতি , নিউজ , আর্টিকেল , সব কিছুই পড়ছি আর মুভির সাথে মিলিয়ে নিচ্ছি। নতুন অনুভুতিতে ভাসলাম।বুঝা গেল , শুধু ছবি দেখে কাজ হবে না। বইতে আরো বেশী মজা। হ্যারী পটার সিরিজের বই পড়ে পড়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেল কিন্তু হ্যারি পটার নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের কথা শুনে হতাশা কাজ করছিলো । বাংলা অনুবাদ নাকি খুব ভালো না।
অবশেষে হ্যারী পটার সিরিজের ৩টি বাংলা বই হাতে পেয়ে ডুব দিলাম বইয়ের মাঝে। এক ডুকে এক বই শেষ।বাকীগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
হ্যারী পটার সিরিজ কে ছোটদের বই বলা হয় কিন্তু ছবি দেখে বা বই পড়ে মোটই ছোটদের বই মনে হয়নি।যেকোন বয়সিদের জন্যই উপযুক্ত , তবে শর্ত হলো দেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
পুরো সিরিজেই যে বিষয়টি হ্যারীকে তারিৎ করেছে বা দর্শকদেরও তারিৎ করবে তাহলো তার মা বাবার প্রতি ভালোবাসার অনুভুতি। শেষ দিকে দর্শকদের চোখ ছলছল করার জন্য যথেষ্ট।
হার্মেওনী হ্যারীর ঘনিষ্ঠ গার্লফেন্ড। হ্যারী পটারকে ভালবাসেন তারা হার্মেওনীকেও ভালবাসেন নিঃসন্দেহে। অনেকের মন্তব্যতেই হ্যার্মেওনী চরিত্রের এমা ওয়াটসনকেও ভালবাসেন।এরকম মনে হয় এমা না থাকলে হ্যারী পটার সিরিজ পূর্নতা পেতো না। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সাহসীকতা , বুদ্ধিমত্তা, বন্ধুত্বের উৎকৃষ্ট উদাহরন মনে দাগ কাটে।কিন্তু মাঝপথে এসে হার্মেওনীর সাথে রণে প্রেম ভালবাসা পুরো মুভিতে এ প্রেমিক মনে কষ্ট দিয়েছে যদিও রাওলিং তার গল্পকে সেভাবেই তৈরী করেছেন।অন্তত শেষে হ্যারীর সাথে হ্যার্মেওনীর মিল হলে আমার মতো মুভিখোরদের ভালো লাগতেও পারতো।
রণ মানে হ্যারীর বন্ধু । একটু হাবাগোবা টাইপের। হ্যারীর চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এরকমই প্রয়োজন ছিলো। আমার মতো উদ্ভট মুভিখোরদের রনকে পুরো ভালো না লাগলেও শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান।
ডাম্বালডোরের অভিনয় ক্ষমতা কতটুকু জানিনা কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব , অভিজাত্য নিঃসন্দেহে পুলকিত করেছে।
অভিনয় ক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন সেভেরাস স্নেইপ। হ্যারীর প্রতি খারাপ ব্যবহারের জন্য সন্দেহের বার্তা সর্বদাই তার উপরে ছিলো কিন্তু শেষ পর্বে এসে তার জীবন দেয়া আর সব তথ্য দেয়া খুব ভালো লাগা তৈরী করেছে।
হাগ্রিডের কথা না বললে অবিচার করা হবে। সবসময় চিন্তা করছিলাম এখনো করছি আসলে তার মতো এতো বিশাল দেহের লোক কি আছে নাকি সিনেমার প্রয়োজনে এভাবে তৈরী করা হয়েছে।
ভেলডেমর্ট কেন চলে গিয়েছিলো আর কিভাবেই ফিরে আসলো তা এখনো পুরো পরিস্কার নয় এ নদগ্য দর্শকের নিকটে। বই পড়লে হয়তো জানা যাবে।
আর বাকী যারা আছে বা কাহিনী নিয়ে আলোচনা করলে এটা মুভি রিভিউ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রকট তখন ব্লগের মুভি রিভিউ কাররা আত্মহত্যা করার সম্ভবনা তৈরী হতে পারে সেজন্য সেদিকে আর অগ্রসর না হওয়াই ভালো ।
আসলে যে কথা বলতে চেয়েছিলাম তাহলো.............. হ্যারী পটার সিরিজের মোট সময় সীমা ২২ ঘন্টার বেশী। ২ দিনে এ বাইশ ঘন্টা দেখে শেষ করেছি। এ বাইশ ঘন্টা নিজেকে অন্য এক জগতে মনে হয়েছে। বের হয়ে আসতে ইচ্ছে করছিলো না সে জগত থেকে। নিজেকে সে জগতের একজন মনে হচ্ছিল। যাদুর জগতের প্রতিটি জায়গায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সব চরিত্রে মিশতে না পারলেও হ্যারী চরিত্রে মিশিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে।
সব কিছুর মাঝে যে সততা , আন্তরিকতা, সাহস , যোগ্যতা, মেধা ইত্যাদির কদর রয়েছে তা হ্যারি পটার সিরিজ আবারও প্রমান করবো।
হ্যারি পটার নিয়ে লিখলে শেষ হওয়ার নয় কিন্তু এ নদগ্য ব্লগার শেষ করতে চায় তাই শেষ করে দিলাম।
নাহ আর কোন কথা নয় ........... হ্যারী পটারের প্রথম মুভিটা আরেকবার দেখে ফেলি।