নামুষের মৃত্যুর পর মারাত্মক বিপাকে পড়েছে গ্রামবাসী। নামুষের বন্ধু করিম বললো,
-জানাযা পড়িয়ে কবরস্থ করাই ঠিক হবে, শত হলেও মুসলমানের পোলা।
-না। ওকে কোনদিন নামাজ পড়তে দেখেছে কেউ? তাছাড়া শুনেছি সে ঘোরতর অবিশ্বাসী ছিল।
নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কালচে দাগ ফেলে দেওয়া কামাল থামিয়ে দিল করিমকে।
-তাহলে ওকে পোড়ানো হোক। খরচাপাতির ব্যাপারটা আমিই দেখবো। ভগবানের আশীর্বাদে আমার অনেক...
নেপাল হরকারকে ইশারায় থামতে বললেন হরি মন্ডল। সামান্য উত্তেজিত দেখালো তাকে। বললেন,
-ভেবেছেন কি মশাই? সামান্য সম্পত্তির গরমে এইভাবে অধম্ম করবেন? মুসলমানের পোলারে চিতায় উঠাবেন? ছি ছি।
ঠিক এমন সময় উদ্ভ্রান্তের মতো এক পাগল ওই ঝটলার মধ্যে ঢুকে পড়ে চিল্লাতে শুরু করে দিলো।
-তোরা সবাই মরবি! হে হে মরবি সবাই! লাশ কই? লাশ খাবো। লাশ দে।
কোন অঘটনের আশংকায় আগেই যুবকেরা পাগলটাকে সরিয়ে দিল। কিন্তু এ পাগল তো যে সে পাগল নয়! সে যুবকদের হাত ছাড়িয়ে সোজা চলে গেল লাশের কাছে। গিয়েই একঝটকায় ছিড়ে নিল লাশের হাত। তারপর সত্যিসত্যি খাওয়া শুরু করে দিল। আর মুখে বলতে লাগলো,
-সবাই মরবি! লাশ খাবো। হে হে।
এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখে কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে গেল
সাথে সাথে। শিশুরা শুরু করে দিল কান্না। গ্রামের প্রভাবশালীদের মধ্য থেকে একজন পাগলটাকে দ্রুত সরানোর হুকুম দিলেন যুবকদের।
অবশেষে লাশখেকো পাগলটাকে বেঁধে ফেলা হলো বড় জামগাছটার সাথে। জটলা বেড়েই চলেছে। পুরো গ্রাম, গ্রামের মানুষ হেলে পড়েছে যেন নামুষের বাপ বৃদ্ধ হাতেম আলীর বাড়ি।
হাতেম আলীর একটাই ছেলে। চাষী হাতেম স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলে পড়াশোনা করে একদিন মানুষ হবে। তাইতো ছেলেকে জমিজমা বিক্রি করে পড়াশোনা শেষ করিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটা! মানুষ না হয়ে হলো অবিশ্বাসী! তাইতো দিনদুপুরে কারা যেন তার একমাত্র সন্তানকে মেরে ফেলে রেখে গেছে তারই বাড়ির উঠানে!
তারপর এসেছিল পুলিশ। দুইদিন পর থানা থেকে যখন হাতেম আলী নামুষকে নিয়ে ফিরলেন তখনই গ্রামবাসী হুমরি খেয়ে পড়েছে তার বাড়ি৷ সকাল থেকে চলছে বাহাস।
হাতেম আলী আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। একটা বড়সড় দা নিয়ে এসে দাঁড়ালেন জটলার মাঝখানে। আর গর্জে উঠলেন।
-সব দূর হয়ে যা কুত্তার বাচ্চারা। নাহলে কেটে রেখে দেব আজ সবকটাকে। আমার ছেলেটাকে মেরে তোদের ধর্ম যাচাই হয়নি? এখন এসেছিস তার লাশের ধর্ম যাচাই করতে?
হাতেম আলীর রুদ্রমূর্তি দেখে ধীরে ধীরে কমে গেল ভীড়৷ এক পর্যায়ে সবাই চলে গেল। রয়ে গেল শুধু হাতেম আলী, আধেক নামুষ আর লাশখেকো পাগলটা। সহসা হাতেম আলীর মনে পড়লো নামুষ একদিন বলেছিল,
-আমার মৃত্যুর পর বিপাকে পড়ে যাবে সবাই। তুমি বিচলিত হইয়োনা বাবা। আর আমার লাশ নিয়ে চিন্তা করোনা। এক পাগল আসবে, ওকে আমার লাশটা খেতে দিও।
হাতেম আলী উঠে দাঁড়ালেন এবং ধীরেসুস্থে পাগলের বাঁধনটা খুলে দিলেন।
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৮