somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ছবি

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আজ খুব ভোর বেলায় কে যেন পাখিবন্দর এলাকার মেইন রোডে একজন আধেক মানুষের জীবন্ত ছবি এঁকেছেন। ছবিটা এতটাই জীবন্ত যে মাথার কাছ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছিল। ছবিটাকে খানিক দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একজন আস্ত মানুষকে চ্যাপ্টা করে রোডের সাথে লেপ্টে দেওয়া হয়েছে। কাছে গেলে মনে হবে দৃষ্টিভ্রম, ওটা আসলেই একটা ছবি।

উশখুশকু চুলধারী লোকটার কথা আমরা আমলে নিলাম না। কারণ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মদের টেবিলে বসলেই যে কেউ খুব সহজেই সস্তা ধরনের দার্শনিক হয়ে যায়।

-আপনাদের চোখ বলে দিচ্ছে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু আমাকে একটু সময় দিলে আমি গল্পটাকে নিশ্চয়ই বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারবো।

লোকটাকে নাছোড়বান্দা মনে হলো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার হয়ে আমি জানালাম,

-আচ্ছা, বলুন।

-আসলে আমি একজন ট্রাক ড্রাইভার। গতকাল রাতে একটু বেশিই পান করে ফেলেছিলাম। ওই অবস্থায় ভোরের দিকে একটা ট্রিপ নিয়ে শহরের বাইরে যাচ্ছিলাম। বিশ্বাস করুন আমি লোকটাকে একদম দেখতে পাইনি। যতক্ষণে ব্রেক কষলাম ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। ভবিতব্য ভেবে আমি খুব দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু কিছুদুর গিয়ে আমার কি হলো জানিনা আমি ট্রাকটাকে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে একটা অটো করে ওই স্থানে চলে আসলাম। ততক্ষণে ভোরের আলোয় সমস্ত অন্ধকার মিলিয়ে গিয়েছিল।

এই পর্যায়ে আমরা নড়েচড়ে বসলাম।

লোকটা আমাদের মনযোগ লক্ষ্য করে গল্প থামিয়ে প্রথমে তার শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভেতরটা দেখালো তারপর দাঁড়িয়ে প্যান্টের দুই পকেট দেখালো, একদম শূণ্য।

-আমি গল্পটা শেষ করবো যদিনা আপনারা আমার মদের বিলটা পরিশোধ করে দেন।

-যদি না করি? যদি আপনাকে পুলিশে দেই?

আমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।

-সে আপনাদের মর্জি। কিন্তু আমি জানি আপনারা গল্পের শেষটা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। তাছাড়া আমার আর কোন ভয় নেই, উপযুক্ত শাস্তি আমি পেয়ে গেছি।

লোকটার কথা শুনে এই প্রথমবার মনে হলো- একেই বুঝি বলে,

-শালা জাতে মাতাল, তালে ঠিক।

সে আমাদের অনুমতির অপেক্ষা না করেই আবার শুরু করলো,

-তখনো বড় ধরনের ভীড় তৈরী হয়নি লাশটাকে ঘিরে। লাশটাকে প্রথম বার দেখে আমার একটা ছবি বৈ অন্য কিছু মনে হলো না। সত্যি এ এক অভূতপূর্ব শিল্প। একজন মানুষ কি নিদারুণভাবে রাস্তার মাঝে শুয়ে আছে চ্যাপ্টা হয়ে! আরেকটু কাছে যেতেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। ছবিটা আমার এক বন্ধুর! যাকে আমি অনেকদিন ধরে হত্যা করার জন্য খুঁজছিলাম। তার একটা ছবি ছিল আমার কাছে। আমি সেই ছবি নিয়ে এর ওর কাছে সন্ধান করতাম ছবির লোকটিকে সে চেনে কিনা।

লোকটা একটু থেমে পরক্ষণেই বলল,

-আমি কি আরো কয়েক পেগ পেতে পারি?

বলে নিজেই খানিকটা ঢেলে নিলেন গ্লাসে। তারপর আবার শুরু করলেন,

-ট্রাক ড্রাইভার হয়েও একজন সুন্দরীকে বিয়ে করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আর দূর্ভাগ্য ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিই তাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রথম দেখাতেই হত্যা করবো তাকে। কিন্তু বিশ্বাস করুন তাকে এইভাবে দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। প্রতিশোধ স্পৃহাটা মুছে গিয়ে কখন যে ভেতরে তীব্র অনুশোচনা বোধ চেপে বসেছে বুঝতে পারলাম না।

লাশটার কাছে কয়েকজন পুলিশ এসে গিয়েছিল ততক্ষণে। আমি তাদের উদভ্রান্তের মত জানালাম,

-একে আমি মেরেছি। আমাকে গ্রেপ্তার করুন।

পুলিশগুলো আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করলো না। পাগল বলে তাড়িয়ে দিল।

এরপর আমি থানায় গেলাম কয়েকবার, আমাকে ঢুকতেই দিলনা।

লোকটা থামলো৷ একদম শান্ত হয়ে জানতে চাইলো,

-আপনারাই বলুন আমাকে কি আপনাদের পাগল মনে হচ্ছে? আপনারা দয়া করে আমাকে পুলিশে দিন।

এই বলে লোকটা মেঝেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। সে বলতেই থাকলো,

-আপনারা এই শহরের সম্মানিত ব্যক্তি। আপনাদের কথা নিশ্চয়ই পুলিশ বিশ্বাস করবে। আমাকে কারাগারে পাঠাবে। আমাকে ঠিকঠাক শাস্তি দেবে। আমার শাস্তি প্রয়োজন। কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি।

২)
লোকটাকে আমরা পুলিশে দেইনি সেদিন। একটা মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের মনে হয়েছিল যথেষ্ট শাস্তি সে পেয়েছে, পৃথিবীর কোন কারাগারই সম্ভবত এমন শাস্তি দেবার ক্ষমতা রাখেনা। দুই বছরের কিছু অধিক সময় পরেই ডাক্তার তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করে ছেড়ে দেয়। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন খবরটা জানিয়েছিল আমাকে। গল্পটা এখানেই শেষ করতে পারলে ভাল লাগতো। কিন্তু অনেক বছর পরে এমন একটা সময় এমনভাবে সেই লোকটাকে দেখতে পেলাম যখন তার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। দেখলাম লোকটি আজও হাতে একটা ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একে ওকে জিজ্ঞেস করছে ছবির লোকটিকে সে চেনে কিনা!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২৬
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×