১)
নিলিয়াকে হাসতে দেখা যায়না এখন। অথচ বিয়ের আগে তার হাসি দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। কিছুদিন হলো অদ্ভুত অসুখে ধরেছে মেয়েটাকে। সারাক্ষণ চুপচাপ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। ঘরের কাজেও মন নেই। অফিস থেকে ফিরে আমাকেই রান্নাবান্না করতে হয়। এভাবে অপরিবর্তনীয় মাস ছয়েক কেটে গেলে, আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। সঞ্চিত যা কিছু নগদ অর্থ ছিল তাই দিয়ে একটি ফটোকপি মেশিন কিনে বসিয়ে দিলাম বাড়ির নীচতলায়।
ফটোকপির দোকানটা চালু করার পর আমাদের ভাগ্যটা খুলে গেল যেন। বিছানা,বালিশ, পুরনো ড্রয়ার, জুতা রাখার বাক্স, গোসলখানার ঘুলঘুলি সব ভরে গেছে নতুন পয়সায়। সবচেয়ে বড় কথা নিলিয়ার মুখেও হাসি ফুটেছে। সে এখন রূপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে বেশীর ভাগ সময়। সপ্তাহে তিন দিন পার্লারে আর বাকি চারদিন বাড়িই পার্লার।
তার এই রূপচর্চার নেশাটা বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হলো না কেন জানি। হয়ত তার মা ডাক শোনার তীব্র বাসনা হতে দিলনা। তার কন্ঠে এখন একটিমাত্র বায়না, সারাদিন গ্রামোফোনের মত বাজতে থাকে।
-মা হবো। মা হবো। যেখান থেকে পারো আমাকে একটি সন্তান এনে দাও।
যদিও সে জানতো আমার পক্ষে বাবা হওয়া সম্ভব ছিলনা।
২)
আমার বাড়ির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা বাঁক নিয়ে কিছুদুর গিয়ে আচমকা থেমে গেছে, সেখানে একটা স্কুল রয়েছে। বাচ্চারা আমার দোকানের সামনে দিয়ে ব্যাগ কাঁধে প্রতিদিন মায়েদের হাত ধরে যাওয়া আসা করে। একটি ছেলেকে দেখি সে একা যায়। কোন অভিভাবক নেই। আমি ওকে টার্গেট করি। একদিন দোকানের ভেতর ডেকে নেই। তারপর চেপে ধরে ফটোকপি মেশিনে শুইয়ে দেই। কপি বাটনে চেপে ধরে অপেক্ষা করি কখন ছেলেটা কপি হয়ে বেরুবে। কিন্তু ছেলেটা বেরোয় না। হঠাৎ সব কিছু কেমন অন্ধকার হয়ে যায়। পুলিশ আসে। দেখি বউটা কান্না করছে হাত পা ছুড়ে।
-ও আল্লাহ গো। কি নিষ্ঠুর! কি নিষ্ঠুর! ছেলেটাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে গো। এখন আমার কি হবে গো?
৩)
পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার ছয় মাস পরে জেনেছিলাম এটা জেলখানা নয় পাগলাগারদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭