১। বোবা চাকর
আমাদের বাড়ির বোবা চাকরটা হঠাৎ কথা বলে উঠলো। মা বললেন,
-কথা বলতে পারছো বলে সাপের পাঁচ পা দেখোনি। কথা কম বলবে। না বলাই শ্রেয়।
বাবা বললেন,
-আগামী মাস থেকে তোর আর আসা লাগবে না। আমাদের কথা বলা চাকর দরকার নেই।
পাশের বাসার মাসি বললেন,
-ছ্যা। ছ্যা। ছ্যা। চাকর কথা বলে বাপের জন্মে শুনিনি কো।
পরেরদিন থেকে চাকরটা আর আমাদের বাড়ি আসেনি। অনেক পরে জেনে ছিলাম কথা গলায় আটকে মারা গ্যাছে চাকরটা। আমি ভেবে পাইনা, চাকরদের আবার কথা বলার কি দরকার?
২। কুকুরীয় ক্ষুধা
আমরা বংশ পরম্পরায় গোশত ব্যবসায়ী। বাজারে আমাদের সুনাম ছিল স্বল্প মূল্যে ক্রেতার সন্তুষ্টি প্রদানের। একবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আমি ছাড়া পারিবারিক ব্যবসা ধরে রাখবার মত আর উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলনা। কিন্তু আমার পক্ষে এটা টিকিয়ে রাখা সহজসাধ্য ছিল না। কেননা মানুষ গবাদিপশু পালন করতে ভুলেই গিয়েছিল বলা চলে।
-তুমি কুকুরের গোশত কেন বিক্রয় করছো না? এটা সহজলভ্য।
বউয়ের কথায় খানিকটা আশার আলো দেখতে পেলেও তেমন জোর পেলাম না।
-মানুষ কি কুকুরের গোশত খাবে? তারা তো এটার স্বাদ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ।
-এর জন্য মানুষকে আগে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রথমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গোশত পৌছে দেব। আশা করি তারা খুব তাড়াতাড়ি অভ্যস্ত হয়ে উঠবে কুকুরে।
আমি বৌকে জড়িয়ে ধরলাম এবং তিনটে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কুকুর কুড়াতে।
-কুত্তার গোশত খেয়েছেন কখনো?
-নাতো! এটার স্বাদ কেমন?
-অন্যান্য গোশতের চেয়ে স্বাদটা একটু ভিন্ন। তবে সুস্বাদু।
-কি রকম?
-প্রথম বার কামড় দিলে মনে হবে আপনি বার্গার খাচ্ছেন, পরের বার কামড় দিলে দেখবেন মাখনের মত লাগছে। তৃতীয় কামড় দিলে.......।
লোকটি আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলেন-
-কুত্তার গোশত খাওয়ার বিশেষ কোন নিয়ম আছে?
-না। তবে শুধুমাত্র ঘরের জানালা খোলা রেখে বিবস্ত্র অবস্থায় কুত্তার গোশত খেলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
লোকটির প্রশ্নের এরকম উদ্ভট উত্তর কেন দিলাম আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু লোকটাকে বেশ উচ্ছ্বসিত লাগছিল। আমি আর কথা না বাড়িয়ে প্রথম পেয়ালাটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। লোকটি দরজা বন্ধ করে চলে গেলে আমি বাগানের পেছন দিকে চলে গেলাম। প্রথম এক্সপেরিমেন্ট টা নিজের চোখে দেখার লোভটা সংবরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাছাড়া বাড়িতে প্রবেশের আগেই দেখে নিয়েছিলাম ওই দিকে একটা জানালা থাকার সম্ভাব্যতা।
ঘরের ভেতর আংশিক অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি লোকটি বিবস্ত্র অবস্থায় বসে আছে। তার সামনে এক পেয়ালা কুকুরের গোশত। সে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করলো হঠাৎ। যেন পঁচিশ বছরের একটি তরুণ কুকুরীয় ক্ষুধা এইমাত্র মুক্তি পেল খাঁচা থেকে।
রুমটা সম্পূর্ণ আলোকিত হয়ে উঠেছে। সম্ভবত লোকটার স্ত্রী ঘরে প্রবেশ করেছেন। একটি চিৎকার। কিছু একটা মেঝেতে পড়ে যাবার শব্দে মাথাটা কেমন এলোমেলো হয়ে উঠলো। আর সাথে সাথে খোলা জানালা দিয়ে দুটো নগ্ন হাড্ডি লেহন করতে করতে লাফিয়ে নামল একটি কুকুর। নেমেই ছুটতে থাকলো। এক মূহুর্ত ভেবে নিয়ে আমিও ছুটে শুরু করলাম কুকুরটার পেছনে। দুটো হাড্ডির একটা আমার চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০