সবিসেদ আলী পকেট হাতরে যে কয়েকটা খুচরো পয়সা পেল সেটা একটি সিগারেট কেনার জন্যেও পর্যাপ্ত নয়। অথচ এটাই ছিল তার কাছে সর্বশেষ নগদ অর্থ। সে একটি লম্বা লোকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো, যে কিনা সবেমাত্র একটি সিগারেট ধরিয়েছিল। লোকটি পেছন ফিরতেই সবিসেদ তার মুখোমুখি হয়ে ইশারায় সিগারেটটি প্রার্থনা করলো।
দূর্ভাগ্যবশঃত তার প্রয়োজন উদ্ভাবনে ব্যর্থ হয়ে লোকটি জিজ্ঞেস করলো,
-কি চাই?
-আজ্ঞে। সিগারেটটা! মহাশয়ের অনুমতি পেলে একটা টান দিতে চাই।
-অহ।
লোকটির চোখে মুখে স্বভাবতই বিস্ময়। এর আগে অপরিচিত কেউ কোনদিন সিগারেট চায়নি তার কাছে। লোকটি আর কোন বাক্য খরচ না করে সবিসেদের হাতে সিগারেটটি দিয়ে তার গন্তব্যে চলে গেল দ্রুত।
সবিসেদ যখন বাসায় ফিরলো তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। তার হাতে একটি নতুন সিগারেটের প্যাকেট, যেটা সে কিছুক্ষণ আগে একজন মধ্য বয়স্ক লোকের পকেট কেটে পেয়েছে।
প্যাকেট খুলে কিছুটা অবাক হলো সবিসেদ। ভেতরে মাত্র দুইটা সিগারেট। অথচ প্যাকেটটা আনকোরা নতুন। সিগারেট দুটি বের করতেই তার হাতে একটি রঙ্গীন কাগজ উঠে এলো। যেটাতে লেখা ছিল, "একটাতে যাবে ভাগ্য খুলে, অপরটাতে নিশ্চিত ক্ষয় যেন"।
সবিসেদ চিরকুটের লেখাটাকে খুব গুরুত্বসহকারে নিল। কেননা তার হাত একটু একটু কাঁপছিল। যেন সে পরকালে ঈশ্বরের মুখোমুখি হয়ে দঁড়ি বেয়ে পুলসিরাত পার হচ্ছে, পার হতে পারলেই স্বর্গ আর পড়ে গেলে নিশ্চিত নরকের বিছানা।
সেই রাতে সে সিগারেট দুটি জ্বালানোর কোনরূপ চেষ্টাই করলো না। এমনি তার পরের রাতেও নয়। বলতে কি এই দুই দিনে বেশ বুড়িয়ে গিয়েছিল ভবিতব্য পরিনাম আশংকায়। অবশেষে তৃতীয় দিন দুপুরে ভরপেট পানি খেয়ে একটি সিগারেট ধরালো সে। ততক্ষণে ঘামে ভিজে উঠেছিল তার জামা। একটু ঠান্ডা বাতাসের জন্য তার মন চঞ্চল হয়ে উঠলো হঠাৎ।
-একটা ফ্যান হলে মন্দ হতো না।
ভাবলো সে।
এবং সাথে সাথে তার মাথার উপর একটি ফ্যান আবিষ্কার করলো। যেটা ঘুরছিল আর নির্গত করছিল ঠান্ডা বিশুদ্ধ বাতাস।
-আহ। কি শান্তি। অবশেষে আমার ভাগ্য খুলে গেল!!
আপন মনে বলে উঠলো সে।
-দ্বিতীয় সিগারেটটি এবার নষ্ট করে দিলেই খেল খতম!
ভাবতে না ভাবতেই শেষ সিগারেটটি পায়ের তলায় ফেলে দুমড়ে মুচড়ে দিল সবিসেদ।
সে নিজের পিঠ চাপড়ে দিল বার দুয়েক, কি ভাল বুদ্ধিই না সে বের করতে পেরেছে!
আর ঠিক তখনি ফ্যানটি খসে পড়লো।
ছবি: ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৬