রিমি আর হিমেল বুঝে উঠতে পারছে না, তাদের দিদা হুট করে এত ক্ষেপে উঠল কেন? খুব শখ করে তারা দুই ভাই-বোন দিদা’র জন্মদিন পালন করার জন্য আয়োজন করেছিল আজ। কিন্তু দিদাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে, কিন্তু দুঃখ-কষ্টে। কখনো দিদা'র জন্মদিন পালন হয় না, দিদা সবসময় কেমন মনমরা আর গম্ভীর হয়ে থাকে; ছোট বেলা থেকেই তারা দেখে আসছে। দিদাকে এসব জিজ্ঞাসা করলে কেমন রাগী চোখে তাকায়, ভয়ে সবসময় ওরা আর ঘাটায় না তাকে। এবার বাবার কাছ থেকে দিদা'র জন্মতারিখ জেনে নিয়ে গোপনে তারা দুই ভাই-বোন এই সারপ্রাইজের আয়োজন করেছিল। দিদা’কে হিমেলের রুমে নিয়ে গিয়ে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে “হ্যাপী বার্থ ডে” বলে উইশ করে চমকে দেয়ার চেষ্টা ছিল, কিন্তু দিদা ঠাস করে রিমি’র গালে চড় দিয়ে কেকটাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রিমি আর হিমেল ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বসে রইল ড্রইং রুমের এক কোনে। ২০৬৬ সালের ০১লা জুলাইয়ের এই মধ্যরাতের শুরুর লগ্নে দুই ভাইবোন এর গাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ল নীরবে।
অন্যদিকে মিসেস আহমেদ তার নিজরুমে ডুকরে কেঁদে যাচ্ছেন, ঝরঝর করে ঝড়ে পড়ছে দু’গাল বেয়ে অশ্রু ধারা। ৬৩ বছর বয়সী বৃদ্ধার কুঁচকে যাওয়া গালের শুষ্ক চামড়া বেয়ে ঝড়ে পড়ছে অনেক অনেক জমে থাকা বেদনার জলধারা। আজ থেকে ঠিক চল্লিশ বছর আগে, ২০১৬ সালের ০১লা জুলাই, বাবা-মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে তার জন্মদিন সেলিব্রেট করতে যায় গুলশানের “হলি আর্টিসান” নামক রেস্টুরেন্টে। তারপর ঘটে যায় সেই কাল রাতের ঘটনা সকল, যার গ্লানি আর ভীতি আজও বয়ে বেড়ান মিসেস আহমেদ। সেই তের বছরের কিশোরী বালিকা চোখের সামনে দেখেন ভয়াবহ বীভৎস হত্যাযজ্ঞ, একে একে বিশটি মানুষের মৃত্যু। সারা রাত জুড়ে সেই তাণ্ডবের সাথে আরও অনেক নির্মম সত্যর মুখোমুখি হতে হয় তাকে... তারপর আরও অনেক অনেক ঘটনা... নিজের অস্তিত্বের মূলে নাড়া দেয়া সব ঘটনা... সেই সময়ে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে বেশ কিছুদিন তিনি ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে আপ্রান চাপা দিয়ে এসেছেন সেই দুঃস্মৃতি সব। প্রতি বছর তার জন্মদিন এলে, আর রমজান এবং ঈদের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি ভুলে থাকার আপ্রান চেষ্টা করেন সেই দুঃখের রজনীটি’র কথা। যেই রজনীতে মৃত্যু হয়েছিল তার হৃদয়ের...
(অনুগল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক...)
অটঃ ০১লা জুলাইয়ের ঘটনায় সত্যি দুদিন স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। এই ঘটনা হাজারো মানুষের জীবনে নানানরূপে দুঃস্বপ্ন হয়ে হানা দিবে বারংবার। আমি যে কোন একটি চরিত্রকে বেছে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করেছিলাম। যা লিখতে চেয়েছিলাম, যা বলতে চেয়েছিলাম, তার কিছুই পারি নি, পারছি না। ভুলে যেতে চাই সেই কাল রাতটি’কে। এমন রাত যেন আর না আসে আমাদের জীবনে।
সবার প্রতিটি ক্ষণ নিরাপদে কাটুক, ভাল কাটুক। আল্লাহ্ সকলের মঙ্গল করুন এই দোয়া রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৬