আপনাদেরও কি এমন হয়? হয়েছে নিশ্চয়ই কখনো না কখনো? আমার অনেকদিন পরপর এমন হয়, হুট করে মনটা কেমন নিথর, নিশ্চল হয়ে যায়। লেখকদের যেমন ‘রাইটার্স ব্লক’ হয়, তেমনই আমার হয় ‘মুড ব্লক’। হুট করে একদিন যে কোন সময় থেকে কোন কিছুই আর ভালো লাগে না, না লাগে মন্দ। কেমন স্তব্ধ হয়ে যায় যেন সব অনুভূতি। কোন কারণ থাকে না এর পেছনে, কারণহীন ‘মুড ব্লক’; অনেক ভেবেও পাই না কেন এমন হল। একবার তো বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হুট করে ‘মুড ব্লক’; ‘ভাল লাগছে না’ বলে সোজা বাসায় চলে আসি। বন্ধুরা সবাই অবাক, তার চেয়ে বেশী আমি। কেননা, সেবারই প্রথম আমার মাঝে আমি এই প্রব্লেমের অস্তিত্ব বুঝতে পারি। এরপর বছর-দু’বছরে হুট করে একবার এমন হয়ে, তখন কিছুতেই কোন ভাল-মন্দ অনুভূত হয় না। কয়েকদিন এই অবস্থায় কাটে, তারপর হুট করেই আবার যেন আগের মুডে ট্রান্সফার হয়ে যাই, ভাল লাগা, মন্দ লাগা’র অনুভূতি নিয়ে ব্যস্ত এক জীবনে; আর এই ‘মুড ব্লক’ এর রহস্যময় জীবন কোথায় যেন ঘাপটি মেরে লুকিয়ে পড়ে। আবার হুট করে অনাহুতের মত একদিন হাজির হয়। একবার পারিবারিক এক বনভোজনের সব আয়োজন সম্পন্ন করলাম, যেদিন সকালবেলা রওনা হব, সেদিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতেই ভদ্রলোকের আগমন। ফলাফল? সবার শত অনুরোধ উপেক্ষা করে আমি বাসায় বসে রইলাম, আর সবাই গভীর সমুদ্রে পড়ল, 'ঘটনা কি?' এটা ভেবে কোন কূল কিনারা পেল না। প্রোগ্রাম শেষে ফিরে সবাই শুরু করল জেরা, সবার প্রশ্নের উত্তরে কি আর বলা যায়? সবাইকে তো এই বিষয়টা বুঝিয়ে বলা যায় না, তাই না? আমি কি অজুহাত দিয়েছিলাম জানেন? আমার পেট খারাপ হয়েছিল, ‘ডায়রিয়া’!!!
তো গত কয়েকদিন ধরে ভদ্রলোক, ভূতের মত ঘাড়ে চেপে বসেছে, সারাদিন কেমন ঝিম মেরে বসে থাকি। কোন কিছু করতে ভাল লাগে না, মন্দও লাগে না। এর মাঝে শরীর অসুস্থ হল, ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত যেতে মন চাইল না। শেষে একসময় শরীর বেচারা নিজেই বিরক্ত হয়ে নিজের ব্যবস্থা করে নিল। এই কয়দিনে কোন কিছু লিখতে মন চায় না, ব্লগে ঢুঁকে কোন লেখা পড়তে মন চায় না, এমন কি নিজের পোস্টে থাকা মন্তব্যগুলোর প্রতিত্তর করতেও মন চায় না। হাতের কাছে কিছু বই ছিল পড়তে মন টানে না। ব্যক্তিগত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বকেয়া পড়েছে, সেগুলোর কথা ভাবলে মনে হয়ে, ‘দূর যা হতচ্ছাড়ার দল’। ‘ভ্রমণ সাহিত্যে চোখ বুলাই’ সিরিজের পরের পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে আছে অন্নদাশংকর রায় এর ভ্রমন কাহিনী নিয়ে, কিন্তু হাতের পাশে তিনচার দিন ধরে সেই বই নিয়ে বসে আছি, লিখতে বা আরেকবার পড়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বারবার টেলিভিশন ছেড়ে চ্যানেল ঘুরাই, কতশত চ্যানেলে কত কিছু দেখায়, কিন্তু কিছুতেই যেন ‘রুচি পাই না’। কি মহা যন্ত্রণায় আছি বলেন তো দেখি। কত কাজ বাকী, কতগুলো নতুন ভ্রমণের প্ল্যান প্রোগ্রাম করা বাকী, এদিকে শীত গেল বলে...
আজ চলছে পৌষ সংক্রান্তি, পুরাতন ঢাকায় সাকরাইন উৎসব, দুই বছর আগেও কত ভাল কাটিয়েছি এই সময়টা। সাকরাইন নিয়ে দু'টো পোস্টও ছিলঃ সাকরাইন - জীবনের উৎসব, প্রাণের উৎসব, ঐতিহ্যের উৎসব , আচ্ছা কেন পৃথিবীটা এতো ছোট হয়? (ছোটগল্প)। আর আজ চুপচাপ বসে আছি নিজের ঘরের চার দেয়ালের মাঝে, হায়রে...
আমি জানি না, এটা কোন মানসিক ক্লান্তি থেকে হয় কি না? কেননা এমনটা অনেক অনেকদিন পর হয়, বছর-দু’বছর এমন কি তারচেয়ে বেশী সময় পরেও হয়। দুই বছর আগে এক ঈদের দিন এমনটা হয়েছিল, এই সিরিজের প্রথম পোস্টও তখনই দিয়েছিলামঃ হৃদয়ের অর্থহীন কথোপকথন। যাই হোক, আশা করি দ্রুত এই হতচ্ছাড়া ‘মুড ব্লক’ দূর হবে। কাশ্মীর সিরিজ শেষ করতে হবে, সিমলা-মানালি সিরিজ শুরু করতে হবে। জমিদার বাড়ী সিরিজের দুটি পোস্ট জমে আছে। গল্প পোস্ট হয় না অনেকদিন, রন্তু সিরিজের পরের পর্ব শুরু করার প্ল্যান। কত কিছু যে করতে চায় এই মন, হায়রে পাগল মন! মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে, তুই সে আমার পাগল মন।
আসলে কথাটা ভুল, মন'কে আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না আজও।
এই সিরিজের আগের দুটো লেখাঃ
হৃদয়ের অর্থহীন কথোপকথন
মন খারাপের গল্প (হৃদয়ের অর্থহীন কথোপকথন ০২)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫