বকরির ঈদ! কোরবানি ঈদ! ঈদুল আযহা। এই ঈদের নাম বকরি ঈদ হওয়ার দুটা ইতিহাস পাওায় যায়। একটি হল এক সময় এই বাংলায় বকরি তথা ছাগল ছাড়া অন্য কোন কোরবানির পশু তেমন একটা পাওয়া যেত না, আর এই বকরি দিয়ে কোরবানি করার কারনে ঈদুল আযহার নাম হয়ে যায় বকরির ঈদ। অন্যমতে আরবি "বাকারা" শব্দের অর্থ গাভী তথা গরু। আর এই গরু কোরবানির পথ ধরে গরুর ঈদ বা বকরীর ঈদ। যাই বলে ডাকি না কেন; এই ঈদ মানেই গরু, ছাগল এর ডাকাডাকি, কাটাকাটি আর বাটাবাটি।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি হল ঈদুল আযহা। আরবি “ঈদুল আযহা” শব্দের বাংলা পারিভাষিক অর্থ হল ত্যাগের উৎসব। আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী উট, দুম্বা, গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি কোরবানি দিয়ে থাকেন।। হিজরী বর্ষ অনুযায়ী জিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন সময়ের মধ্যে এই কোরবানি দেয়া হয়। যার উপর যাকাত প্রদান করা ধার্য হয়েছে তার উপর কোরবানি করাও ওয়াজিব।
আগে কোরবানি ঈদের হাট বসতো ১০-১৫ দিন সময় ধরে, কিন্তু নাগরিক জীবনের ব্যাস্ততায় এখন তা ৩-৫ দিনের সংক্ষিপ্ত কলেবরে পৌঁছেছে। প্রতিবার কোরবানি ঈদে যে জিনিসটা সবচেয়ে চোখে পরে তা হল “এবার গরুর দাম বেশী হবে কি না?” এই নিয়ে নাগরিক জীবনে চলে একটি টান টান উত্তেজনা। কেউ কেউ দাম বাড়ার ভয়ে আগে গরু কিনে ফেলেন, পরে যদি দাম বেড়ে যায় তখন তার মুখের চওড়া হাসি হয় দেখার মত। আর দাম যদি কম থাকে তবে মুখটা শুকনো করে এমনভাবে ঘুরে বেড়ায় যে, “কোন ব্যাপার না, গরুত কিনেছি কোরবানি করার জন্য, ব্যাবসার জন্য না”। আহ কি ভাবুক মানুষ.......
এটাতো গেল, ঈদের আগ পর্যন্ত ভাবনার বিষয়, গরুর বাজার চড়া যাবে কি না? কিন্তু ঈদের দিন থেকে শুরু হয় “কসাই” এর টেনশন। কসাইদের এদিন থাকে আকাশছোঁয়া ডিমান্ড। গত কয়েক বছর যাবত কসাইরা পশুর মূল্যের শতকরা ১৫-২০ টাকা হারে মজুরী দাবী করেছে এবং সেই অনুযায়ী তারা পশু জবেহ করেছে। গত বছর মৌসুমি চাহিদা মাথায় রেখে কোমল পানীয় “মোজো” নিয়ে এসেছিল তার কোমল পানীয় ভোক্তাদের জন্য দুজন কসাই সহ দুটি গরু জিতে নেবার সুযোগ। সাবাশ বেটা, একেই বলে সমাজ সেবা, Corporate Social Responsibilities। কিন্তু এবার তারা এক উদ্ভট ক্যম্পেইন কনসেপ্টে নিয়ে এসেছে উটভট অফার। আসলেই উদ্ভট, পুরাই মাইনাচ কনসেপ্ট।
কোরবানির ঈদে মাংস কাটা-কাটি, ভাগা-ভাগি, বাটা-বাটি নিয়ে আছে মহা পেরেশানি। এই সমস্যা দূর করতেও হয়ত খুব শীঘ্রই চালু হবে প্রাইভেট সার্ভিসেস। আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা একটু দ্রুত শুরু করেন, আমরা আর কতদিন এই পেরেশানি পোহাবো। সার্ভিসটা এমন হবে যে আপনি লিস্ট তৈরি করে ঠিকানা, ফোন নাম্বার দিয়ে দিবেন, আর সাথে দিবেন পরিমানের হিসাব। কসাই নিয়ে এসে প্রাইভেট সার্ভিসেস কোম্পানি আমাদের পশু কোরবানি দিয়ে ভাগাভাগি করে পৌঁছে দিবে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাসায় বাসায়। আমাদের মা-বোন, স্ত্রী-কন্যাদের একটু ঈদের দিন স্বস্তিতে থাকতে দিন। তারা কোরবানির ঈদে থাকেন মহাচিন্তায় ডুবে, তাদের একটু আনন্দের সুযোগ দিন এই খুশির দিনে।
ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় আরেকটি ব্যাস্ততা দেখা যায়, পশুর চামড়ার ব্যবসা নিয়ে কিশোর-তরুন-যুবাদের ব্যাস্ততা। প্রায় সব বয়সের মানুষ যুক্ত হয়ে পরে এই সাময়িক চামড়া ব্যাবসায়। ছোট করে প্যান্ডেল টানিয়ে, টেবিল-চেয়ার নিয়ে সকাল থেকে বসে যান এই মৌসুমি চামড়া ব্যাবসায়ীরা। সারাদিন সংগ্রহ করেন চামড়া। রাতে নিয়ে আসেন পুরাতন ঢাকার পোস্তায় পাইকারদের কাছে বিক্রয় করতে। চাঁদরাত থেকে এই এলাকা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। ঈদের দিন বিকেল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ব্যাসে জ্যাম এবং ভিড় জমে ওঠে চামড়া বহনকারী যানবাহনে। যারা পুরাতন ঢাকার এই এলাকার বাসিন্দা তারা আটকে পরেন এই জ্যামে। মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও পুরাতন ঢাকার পোস্তার আশেপাশের এলাকায় থাকে পশুর চামড়া ভর্তি যানের লম্বা সারি।
সবশেষে আরেকটি কথা নাই বললে নয়; আরেকটি ভিড় দেখা যায় প্রায় সব এলাকায়, তাও রাতের বেলা! কোথায়? হ্যা ভাই, পাড়ার ফার্মেসীগুলোতে। কেন? আরে ভাই সব প্রশ্ন করতে হয় না, বুঝেননা কেন? যাই হোক কোরবানি ঈদের যে ত্যাগ স্বীকার করার শিক্ষা আমাদের কোরবানিতে, সেই উদ্দেশ্য কতটা প্রতিফলিত হয় আমাদের কোরবানিতে, তার প্রতি আমরা যেন সতর্ক হই।
আপনার কোরবানির বর্জ্য যথাযথ স্থানে ফেলুন, রাস্তার উপর কোরবানি দিলে সেই রাস্তা উত্তমরুপে পরিস্কার করে দিন। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু কোরবানির কামনায়, “ঈদ মোবারক”।