কিছু প্রচলিত ভূতের গল্প আছে যা আমরা সবসময় শুনে থাকি। এইসব গল্পের ফরমেট একই তবে বক্তার ভিন্নতার কারণে সামান্য এদিক ওদিক হয়। এখানে মূল গল্পের সাথে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ ভূত বলে আসলে কিছু নেই!
ওরে বাপরে! জানালায় ওটা কার মুখ??

গল্প-১
শহরের প্রচলিত গল্প। গভীর রাতে সেকেন্ড শো সিনেমা দেখে রিকশায় করে ফিরছে এক ছাত্র। সে হলে থাকে। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। কিন্তু রিকশাওয়ালা এসে থামল এক গোরস্থানের গেটে।
- এ তুমি কোথায় আসলা?
তারপর দেখে রিকশাওয়ালা নেই। ভয় পেয়ে সেই ছাত্র রিকশা ফেলে দৌড়ে ছুটে গেল হলে। দেখে হলের গেটে সেই রিকশাওয়ালা বলল, “ভাড়া দিলি না?” প্রচন্ড ভয়ে কম্পিত হাতে সে যখন ভাড়া দিতে গেল তখন রিকশাওয়ালা দুই হাত উল্টো করে বাড়িয়ে দিয়ে বলল “দে ভাড়া দে”। উলটানো হাতে টাকা ফেলে ছুটে রুমে এসে সে যখন বন্ধুকে ঘটনা বলল “রিকশাওয়ালা এভাবে ভাড়া চেয়েছে?” বলে সেও উল্টো হাত দেখাল। আতংকে জ্ঞান হারাল সেই ছাত্র।
গল্প-২
গভীর রাতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক লোক। হঠাৎ রাস্তার সামনে তালগাছের মত দুই পা দুইদিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। উপরে জ্বলজ্বলে দুই চোখ। লোকটা ভয় পেয়ে বুকে থুথু দিল বারকয়েক। দোয়া-দরুদ পড়ল কিন্তু কাজ হল না। তারপর পকেট থেকে দেয়াশলাই বের করে আগুন জ্বালালো এবং ভূত চলে গেল। কারণ ভূত আগুন ভয় পায়।
গল্প-৩
গ্রাম-বাংলার বহুল প্রচলিত রান্না ঘরের ভূতের গল্প। মূল বাড়ি থেকে একটু দূরের রান্না ঘরে বসে নানী রাতে পিঠা বানাচ্ছেন। হঠাৎ জানালা দিয়ে একটা শীর্ণ হাত বেরিয়ে আসল।
- দে পিঠা দে।
নানী বুঝলেন এ শাকচুন্নির কাজ। শুরুতেই একটা পিঠা জানালা দিয়ে ছুড়ে দিলেই হত। তিনি একটা পিঠা ছুড়ে দিলেন জানালা দিয়ে। তারপর জানালা বন্ধ করে দিলেন।
গল্প-৪
রাতের হাট থেকে মাছ কিনে ফিরছে গ্রামের এক লোক। হঠাৎ দেখে পেছন থেকে কে যেন বলল
- দে মাছ দে
লোক পিছন ফিরে দেখে ভয়ঙ্কর দর্শন একলোক তার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। ভয়ের চোটে সে দৌড় দিল। কিন্তু পেছন থেকে সেই ভয়ঙ্কর মানুষটাও ছুটছে। তার পা মাটিতে নেই। লোকটা তাড়াতাড়ি বাজারের ব্যাগ থেকে একটা মাছ ছুড়ে দিল। মুহুর্তে কচ কচ করে খেয়ে ফেলল। বলল
- দে মাছ দে ......... লোকটা দিল ছুট।
গল্প-৫
দুইলোক রাতের বেলা বাড়ি ফিরছিল। কর্মকর্তা আর কর্মচারী। হঠাৎ দেখে রাস্তার উপর একটা বাঁশ পড়ে আছে। কর্মচারী বলল
- স্যার পেত্নীর কাজ। ঐ বাঁশ টপকালেই বাঁশটা দাঁড়িয়ে পড়বে ...... তারপরতো বোঝেন এ জন্মে আর বিয়ে-শাদি হবে না।
- তাহলে কি করা?
- দাঁড়ান আমার কাছে পেত্নীবশিকরণ মন্ত্র আছে ..... বলে সে বির বির করে মন্ত্র পড়তে লাগল আর বাঁশ দাঁড়িয়ে গেল।
============================================
গল্প ১ এর ব্যাখ্যা
রিক্সাওয়ালা এবং ছাত্রের রুমমেটের হাতেল তালুতে অ্যাকজিমা (চুলকানি) আছে তাই হাত উলটো করে ভাড়া চেয়েছে। তাই দেখে ছাত্র ভয় পেয়েছে। হলের গেট আর গোরস্থানের গেটের ডিজাইন একই রকম হওয়ায় রাতের অন্ধকারে ভুল করতেই পারে!
গল্প ২ এর ব্যাখ্যা
আসলে বিএনপি আমলের সেই বৈদ্যুতিক দুই ভুয়া খাম্বা পাশাপাশি হেলে ছিল রাস্তার দুপাশ থেকে আর পিছন দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল লাল বাতি জ্বলা কোন প্লেন!
গল্প ৩ এর ব্যাখ্যা
আসলে চোর এসেছিল চুরি করতে। কিন্তু বাড়ির লোকেরা না ঘুমিয়ে পিঠা বানাচ্ছে ...... আর অপেক্ষা করতে করতে চোরের ক্ষিধে পেয়ে গেছে তাই বাধ্য হয়ে নাকি গলায় পিঠা চেয়েছে ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে!
গল্প ৪ এর ব্যাখ্যা
আসলে পিছনে কোন মেছো ভূত-টুত ছিল না। লোকটা ফিল্ড লেভেলের সরকারী কর্মচারী। গ্রামের হাটে গিয়ে মাছে ফরমালিন দেয়া হয় কিনা তার পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু দেরী হওয়ায় হাট শেষ হয়ে গেছে বলে ঐ লোকটার কাছে মাছ চেয়েছিল!
গল্প ৫ এর ব্যাখ্যা
আসলে ওরা রাতে রাস্তা ভুল করে রেলক্রসিং দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ট্রেন একটু আগে চলে গেছে ...... ক্রসিংবারটা পরে ছিল ....... একটু পর উঠে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:২০