মোটামুটি আপার মিডল ক্লাস ফ্যামিলী।শ্বাশুড়ি, স্বামী আর বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর ২ ছেলেমেয়ে নিয়ে মোট ৫ জনের সংসার।আর সেই সংসারেরই গৃহিনী শশী গোরবোলের টানাপোড়েন আর কিছু নয়, শ্রেফ ইংলিশ।নেই সংসারের টাকা পয়সার যন্ত্রনা, নেই বজ্জাত শ্বাশুড়ির হাড় কুটনামী কিন্তু তারপরও শশীর জীবন বিতীশ্রদ্ধ এই মহাশত্রু ইংলিশ এর জ্বালায়।নিজের স্কুল না পড়ুয়া পিচ্চি ছেলে, ৬/৭ গ্রেডে পড়া মেয়ে আর স্বামী ন্যাটিভ এর চাইতে ইংলিশকেই বেশী প্রেফার করে আর তাদের বকর বকর পকর পকর কিছুই বোঝে না বেচারী শশী।কথা বলতে পারে না মেয়ের টিচার এর সাথে বা মেয়ের বান্ধবীর চটর পটর ইংরেজী বলা মায়েদের সাথে।সুতরাং নানা ধরনের টিটকিরী হর হামেশাই শুনতে হয় তাকে।স্বামী আর বিশেষ করে মেয়ের কাছ থেকে এমন হাড় জ্বালা ধরা হেয় করা তীর্যক মন্তব্যগুলো আসলে হজম হয় না সারাদিন সংসারের জন্য খেটে মরা এই মধ্যবয়সী নারীর।অন্তত মায়ের সম্মানটুকু পাওয়ার অধিকার তো তার পাওনাই।আর এমন সময় মরার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে মহা দুঃসংবাদ এলো নিউইয়র্কে থাকা একমাত্র বোনের বড় মেয়ের বিয়েতে যেতে হবে।তার উপরে আবার যদি সিদ্ধান্ত হয়, যেতে হবে একা, কারন মেয়ে পরিক্ষা শেষ করে তার বাবা আর ছোট ভাইয়ের সাথে একত্রে যাবে ৩/৪ সপ্তাহ পড়ে তাহলে তাকে তো মরার উপর খড়ার ঘাঁ বলতেই হয়।
এরপর মার্কিন মূলূকে যাওয়া, নানা বিড়ম্বনা আর ইংলিশ দানবকে পরাজিত করার চেষ্টার অসাধারন এক ঘটনা।একজন সাধারন নারীর সংসারকে ভালোবাসা, সন্তানদের জন্য আপ্রান চেষ্ট করা আর আধুনিক সমাজে হোচট খেতে খেতে উঠে দাড়ানোর প্রয়াস, কিছু মানুষ এর ভালোবাসা তো কিছুটা ছোট করা। এই রকমই অতি সাধারন দৈনন্দিন জীবনের আলো ছায়ার মাঝেই ফুটে উঠেছে English Vinglish. এই সিনেমার ঘটনাটাকে কেবলই সেনেমা না ভেবে বরং আমাদেরও সমস্যা হিসেবেই দেখা যেতে পারে, কারন আমাদের দেশেরও অনেক নারী নানা দিন নানা ভাবে সংসারে, সমাজে লোকজনের দুষ্টু কথার অন্তরালে জীবন কাটায় শুধু মাত্র কিছুটা শিক্ষার অভাবে, অথচ তাদেরকে হেয় না করে যদি সুযোগ সৃষ্টি করা যায় তবে তারাও সমান তালে মাথা উচু করেই বাঁচতে পারে।
কোন বড় ধুম ধাড়াক্কা স্টার কাস্ট নেই, নেই কোন বাড়তি ইমোশোনাল ধস্তাধস্তি। কিছু নানা দেশী লোকের ইংরেজী শেখার গল্প, একজন নারীর আবেগ, নানা দিনের নানা ছোট ছোট ঘটনা আর সংসারের টুকিটাকি গুলোকে চমতকারভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছে পরিচালক গৌরি সিন্ধে।পিকচারাইজেশন এবং পেজেন্টেশন এ নেই কোন অতিরিক্ততা।আই এম ডি বি ৮.১ রেটিং পাওয়া এই মুভিকে অনায়াসেই ৮ (হিন্দী মুভির তুলনায়) এর উপরে পয়েন্ট দেব আমি ।
সাধারনত ইন্ডিয়ান মুভিতে বস্তা পঁচা গল্প আর ভিখারী থট এর ডিরেকশন দেখা ছাড়া আর কিছু থাকে না, কিন্তু মাঝে মাঝে যে দুয়েকটা চমকে দেবার মত মুভি হয় তার মধ্যে অন্যতম এই সিনেমাটি।সুতরাং চটপট ডাউনলোড করে ঝটপট দেখে নিতে পারেন এই মুভিটি।আমি শিওর হতাশ হবেন না কোনভাবেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৬