somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাদুর আরেক নাম হুমায়ুন আহমেদ

২০ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ুন আহমেদ। কোনো বিশেষণে ডাকলে যাকে ছোটো করা হয়। জনপ্রিয়তার আকাশ ছোঁয়া কিংবদন্তী এই কথাশিল্পী চলে গেলেন। কিন্তু রেখে গেলেন যাদুর এক জগৎ। গল্পের ম্যাজিক দেখিয়ে যিনি পাঠককে করে দিতেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ম্যাজিক মুন্সির যাদু দেখে নিজে যেমন মুগ্ধ ছিলেন তেমনি মুন্সিকে নিজেও যাদু দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন। আর এসব যাদুকথা পড়ে পাঠক হয়েছে হতবাক। তিনি তৈরি করেছেন একের পর এক যাদুচরিত্র মিছির আলি, হিমু, ম্যাজিক মুন্সি। পাঠকের কৌতূহলের ব্যারোমিটার যিনি হাতের মুঠোয় নিয়ে গল্প বলেছেন। পাঠককে বসিয়ে রেখেছেন বইয়ের সামনে। অনেকটা আরব্য রজনীর সেই উজির কন্যার মতো। যে কিনা গল্পের যাদুতে বশ করেছিল বাদশাহ শাহরিয়ারকে। মৃত্যু ঠেকাতে এক হাজার এক রাত টানা গল্পের পর বাদশাহের মানসিকতাই পাল্টে যায়। তুলে নেওয়া হয় তার মুত্যুদন্ডের হুকুম।
আমাদের গল্পের যাদুকর সাধারণ মানুষের মধ্যে অতিলৌকিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। এতে গল্পের প্রধানচরিত্রের সঙ্গে পাঠক মিশে নিজেকে মনে করে অতিলৌকিক। এটা কী করে হয়?

সিনেমা বা নাটক হলো দৃশ্যকাব্য। এখানে সরাসরি দর্শক অভিনেতাদের জীবনকাহিনী দেখতে পারেন। কিন্তু কবিতা বা উপন্যাস হলো শ্রব্যকাব্য। সেই গ্রিক যুগ থেকে দৃশ্যকাব্যের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। কারণ সিনেমা বা নাটকে দর্শক খুব সহজে মনোনিবেশ করতে পারেন। যা কবিতা বা উপন্যাসে সম্ভব না। শ্রব্যকাব্য কিছুটা জটিল শিল্পমাধ্যম। হুমায়ুন আহমেদ অলঙ্কার শাস্ত্রের এই প্রথাগত চিন্তা বদলে দিয়েছেন। তার লেখা যে-কোনো উপন্যাস পড়তে বসে পাঠক দৃশ্যকাব্যের স্বাদ পায়। পাঠক যেন এখানে দর্শক। দর্শকের যা লক্ষণ তার সবই এই পাঠকের মধ্যে চলে আসে। পাঠক একজন দর্শকের মতোই ক্যারেকটারের মধ্যে ঢুকে যান। ক্যারেকটার হাসলে তিনি হাসেন। ক্যারেকটার কাঁদলে তিনি কাঁদেন। ক্যারেকটার বিষ্মিত হলে তিনি বিষ্মিত হন। ক্যারেকটারের মতোই প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে পাঠক পৃথিবীকে দেখে এবং ব্যাখ্যা করে। ক্যারেকটারই পাঠকের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখানেই হুমায়ুন আহমেদের যাদু।

যাদু বলে তিনি পাঠকের সামনে নাটক বা সিনেমার মতো দৃশ্য দেখান। পাঠক মূলত পড়ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সে দেখছে। এ যেন যাদুকরের যাদু দেখানো। সাদা কাগজের ওপর কালো রঙের বর্ণমালার মধ্যে দৃশ্য ঢুকিয়ে দেওয়া। পাঠক আর বর্ণ দেখছে না, দেখছে দৃশ্য। অনেকটা ম্যাজিক মুন্সিকে যাদু দেখানোর মতো। পাঠক ঠিক পড়ছে না। সে দেখছে। হুমায়ুন আহমেদ পাঁচ টাকার একটি কয়েন কীভাবে সিগারেটের প্যাকেটে ঢুকিয়ে দিলেন। (দ্রষ্টব্য, ম্যাজিক মুন্সী) এ ঠিক পড়ে আনন্দ পাওয়া নয়, দেখে আনন্দ পাওয়া। কালো বর্ণের মধ্যে কী করে দৃশ্য ঢুকানো হলো? এটা কি সত্যি সম্ভব?

আমি মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবতাম, এটা কী করে সম্ভব? দৃশ্য সবসময় জীবন্ত। কল্পনা হলো কষ্টকর। এর আগে বাংলা সাহিত্যে পাঠকের সামনে এভাবে কেউ দৃশ্য আনতে পারেননি। আগে যেটা হয়েছে, পাঠক পড়তেন আর মনে মনে দৃশ্য কল্পনা করতেন। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ পাঠককে সেই কষ্টকল্পনার হাত থেকে মুক্তি দিলেন। তিনি প্রথম লেখায় দৃশ্য দেখালেন। কোনো কষ্টকল্পনার প্রয়োজন নেই। অবিকল টিভিসেট বা সিনেমা হলে গিয়ে পর্দায় দৃশ্য দেখার মতো। তাহলে প্রশ্ন হলো, তিনি এটা কী করে পারলেন?

এখানেই হুমায়ুন আহমেদের যাদু। একজন যাদুকর সাদা দেয়ালের ওপর দৃশ্য আনতে পারেন; একটি দৃশ্যমান বস্তু মুহূর্তে দর্শকের চোখের সামনে থেকে ভ্যানিশ করতে পারেন। তাহলে কেন একজন লেখক পারবেন না। তার লেখা বইয়ের একেকটা পাতা একেকটা যাদুর দেয়াল। পাঠক চোখ বুলালেই দৃশ্য দেখতে পারে। এ এক অদ্ভুদ কথার যাদু বা মায়া। যাদু বলে হুমায়ুন আহমেদ এমনটি করেছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, সেই যাদুর মন্ত্র কী ছিল?
উত্তর হবে কৌতূহল। শিশুর মতো কৌতূহল। ওই কৌতূহলের চোখ দিয়ে নিজে দেখা এবং অন্যকে দেখানো।

কৌতূহলের চোখ দিয়ে আমরা অনেকেই অনেক কিছু দেখি। কিন্তু অন্যকে সেটা দেখাতে পারি না। হুমায়ুন আহমেদ সেটা পেরেছেন। এটাই তার যাদু। এটাই তার স্বাতন্ত্র্য। এটাই তার মৌলিকত্ব। এই যাদুর আরেক নাম হুমায়ুন আহমেদ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোটা না মেধা ? সুপারিশ ! সুপারিশ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭


জুলাই অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কম সমালোচনার শিকার হয় নি। বিএনপি শুরু থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সমন্বয়ক দের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় । শেখ হাসিনার পতনের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত টাকার প্রয়োজন?

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

আপনি নিজে যদি দরিদ্র-ঘরে জন্মগ্রহণ করে না থাকেন, তাহলে বুঝবেন না দারিদ্র্য কাকে বলে। একজন হাড়-বেরুনো বৃদ্ধা ভিখারিনীর দুঃখ দেখে সমব্যথী হতে পারেন, কিন্তু তার ক্ষুদায় আর্ত পেটের বেদনা অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

করোনার দিনে জার্নাল

লিখেছেন সাজিদ উল হক আবির, ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৫০

সরকারী ঘোষণা আসার পর , গতকাল ১৪ দিনের জন্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দিলো। কারণ, করোনা ভাইরাস। সরকারী ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় নোটিস দিয়েছিল - সকল ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হায়রে কপাল মন্দ..........

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৫৪


চোখ থাকিতেও অন্ধ: এই গানটি খুব সম্ভবত বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে শুনেছিলাম। ইহা একটি প্রেমের সংগীত হবে হয়তো। কিন্তু হটাৎ এই গান পড়ছে কেন ?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত প্রেম/ভারত বিরোধীতা- কোনটাই অতিরিক্ত করার দরকার নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:৪০



অনেকে ভারত প্রেম বেশী করতে গিয়ে দেশের বিরোধীতা করে। অনেকে ভারত বিরোধীতা করতে গিয়ে অনেক বড় প্রতিপক্ষের মোকাবেলার পরিবেশ তৈরী করে।ভারত-আমেরিকার মোকাবেলা করতে গিয়ে আমরা আমাদের কাজটা ঠিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×