মায়া বর্ষপঞ্জিকার সমাপ্তিতে পৃথিবী ধ্বংস না হলেও বাংলা মায়ের বুকের পড়ে ঘটে গেছে এক নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ। গত বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাজরীন ফ্যাশন ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডির শিকার হয় শতাধিক নিরীহ প্রাণ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কপালে অঙ্কিত হয় দুশ্চিন্তার বলিরেখা। শতাধিক পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এ ঘটনা দুটিকে কেন্দ্র করে বইতে থাকে প্রতিক্রিয়ার ঝড়। অনেকেই সরকারের মুণ্ডুপাত করেন, কেউবা ‘বিশেষ মহলের’ দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে দায়িত্ব খালাস করেন। এক্ষেত্রে বাম-ডান কারো প্রতিক্রিয়ায় কোন ফারাক দেখি না। দুঃখ হয়, একটিবারের জন্যও আমরা নিজেদের দিকে তাকাই না। কোনো ঘটনার পর কিছু দিন আমরা সমবেতভাবে লম্ফঝম্ফ করি। তার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন ঘটনার সূত্রপাত হয়। পুরনোটা ছেড়ে সোত্সাহে নতুন মূলার পিছ ধরি। এভাবেই চলছে আমাদের পিছে বাঁদর নাচন। কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করি, এসবের আড়ালে মূল কারণটা কী? আমার দায়িত্ব কোথায়? হাউকাউ চিল্লাচিল্লিতেই কি আমার দায় সীমাবদ্ধ? দু’কলম লিখলেই কি আমার দায়মুক্তি? এসব নিয়ে ভাবার সময় এখন না, অনেক আগেই গত হয়েছে। এ ভাবনা শুধু সরকার বাহাদুরের নয়, আমাদের সবার। ত্রিশ লাখ প্রাণের রক্তে অর্জিত দেশটা কারো পৈতৃক বা পতিক সম্পত্তি নয়।
যেই বয়সে রফিক, সালামরা ভাষার জন্য বন্দুকের নলকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন; বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর, মোস্তফা কামালরা সংসার ত্যাগ করে দেশমাতাকে উদ্ধারে ছুটে গিয়েছিলেন, সেই বয়সে চলতি সমাজের অধিকাংশ তরুণকে দেখা যায়, দেশচিন্তাকে পায়ে ঠেলে প্রেয়সীর মনরক্ষায় আত্মনিবেদন করছে। যা কখনো কখনো সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়। আর এই 'প্রেম' নামক আফিমের নেশায় যৌবন শক্তির চিন্তা, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তিকে বুঁদ করে রাখতে স্পন্সর করে যাচ্ছে 'পপুরার সংস্কৃতি'র বাণিজ্যিক হোঁতারা। তারা আধুনিকতার পোশাকে ‘কথিত প্রেম’কে উপজীব্য করছে। নারী-পুরুষের প্রেমকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস কারো নেই। কিন্তু দেশ আর সমাজচিন্তার চেয়ে প্রণয়টাই যখন বেশি প্রাধান্য পায়, তখন এই মাদকতাকে কোনোক্রমেই সুস্থতার পর্যায়ে ফেলা যায় না।
আমাদের সমাজের ধর্মচারীরা স্রষ্টার বন্দেগি আর ধর্মপ্রচারের সময় ভুলে যান, ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’, অথবা ‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। তাদের মনে থাকে না হাদিসের সেই বাণী, ‘তোমাদের কোনো ভাইকে অন্যায় করতে দেখলে, প্রথমে হাত দিয়ে বাধা দাও, তাতে কাজ না হলে মৌখিকভাবে নিষেধ করো, তাতেও কাজ না হলে অন্তর থেকে ঘৃণা করো। আর সেটাই দুর্বলতম ঈমানের পরিচয়।’ জবরদস্ত ধার্মিকতার ফোকর দিয়ে তারা যে দুর্বল ঈমানের ঝাণ্ডা উড়িয়ে যাচ্ছেন, সেকথা বোধ হয় তাদের স্মরণে থাকে না। বাইবেলেও অনুরূপ দেশনার দর্শন মেলে, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো মহব্বত করিও।’ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠে দুর্ঘটনার পরে, দুর্ঘটনার আগে থেকেই সেসব অনিয়মের অস্তিত্ব বহাল থাকে। নির্বিবাদে সুকৌশলে তা এড়িয়ে গিয়ে কোথায় আমাদের দায়মুক্তি? তাজরীন ফ্যাশনের অনিয়মগুলোর মধ্যে বেশি উচ্চারিত হয়েছে— ১. ইমার্জেন্সি সিঁড়ি নেই। ২. নিচতলায় যেখানে এসে সিঁড়িগুলো শেষ হয়েছে, সেখানে করা হয়েছে কাপড়ের গোডাউন। ৩. গোডাউনের পাশেই রাখা হয়েছে জেনারেটর। এ নিয়মহানি আবিষ্কারের জন্য তো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ব্যবস্থা কতটা দুর্বল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের কেউ কেউ হয়তো অহর্নিশ এ অনিয়মগুলো দেখেও না দেখার ভান করেছি, বিশেষ করে ঐ এলাকার বাসিন্দা বা গার্মেন্টসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাপারগুলো অজস্রবার দেখেছে। কিন্তু সচেতনতার চোখ তাদের অন্ধ ছিল। অথবা এই অচেতনতাই যে তার, তার ভাই বা বোনটির সর্বনাশের কারণ হবে, তা মনে আসেনি। হয়তো আশপাশে প্রতিনিয়ত এমন অনেক ঘটনা দেখি, কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করার চিন্তাও করি না। অথবা নিজের ভদ্রলোকপনাকে ঝঞ্ঝাটে জড়াতে চাই না। তাহলে ভদ্রলোকের পোষাকধারী আমার দায়মুক্তি কোথায়?
মার্কস সাহেবের মুরিদরা নিজেদের প্রগতিশীল বলে জাহির করেন। অথচ যেই বুর্জোয়া সরকারের দলবাজির কারণে চট্টগ্রামের বহাদ্দারহাট ফ্লাইওভার ট্রাজেডির জন্ম, সেই সরকারি দলের আঁচল ধরে উনারা যখন হরতাল (১৮ই ডিসেম্বর, ২০১২) পালন করে পুলকিত হন, সরকারি আঁতাতে রাস্তাঘাট অবরোধ করে প্রচলিত ধারার রাজনীতিকদের মত জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততার কথা ঘোষণা করেন, তখন কোনভাবেই তাদের 'মাকাল ফল' থেকে আলাদা করা চলে না।
বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ডে খালেদার বান্দারা বিচলিত না হলেও মির্জা ফকরুলের কারাবন্দিত্ব নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হরতাল ডাকতে কার্পণ্য করেন না। প্রম্ন আসে, মিস্টার ফখরুল দেশের জন্য কী এমন 'মহাভারত' এনে দিয়েছেন, তার জন্য দেশবাসীকে হরতালের একটি 'অহিতকর কর্মসূচী' সহ্য করতে হবে? আবার দেশের তেল-গ্যাস পাচার নিয়ে তাদের নির্জীব দেখালেও ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে মহাশয়াদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না।
জাতিগতভাবে স্রষ্টা আমাদের গলাখানি করেছেন হাত বিঘত লম্বা, কিন্তু হাত দুটো করেছেন নিদারুণ সংকীর্ণ। গলাবাজি আর বক্তৃতায় আমরা দিগ্বিজয়ী বক্তিয়ার খিলজিকে কুপোকাত করি, অথচ কাজের সময় কর্মকার হতে আমাদের যত সংশয়। বছরখানেক আগের কথা, বহুল প্রচারিত হরলিক্সের বিজ্ঞাপনে বলা হয়, এটা খেলে 'ইউ বিকাম স্ট্রংগার, শার্পার, টলার'। কিন্তু যুক্তরাজ্যের অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সির (এএসএ) দাবি অনুযায়ী এ তথ্য অসত্য। হরলিক্স কোম্পানিও তা স্বীকার করে। তাই সে দেশে এ বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় (আবদুল্লাহ, তুষার; মাধ্যম, ভাদ্র সংখ্যা, ১৪১৬, পৃষ্ঠা ৯৬)। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে অর্থের জোর আর আইনের ফোকর দিয়ে এ ধরনের রঙচঙা প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন দিব্যি ব্যবসা করে চলেছে। আমরা অধিকাংশই হয়ত চোখ বন্ধ করে গলা উঁচু করে সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে প্রস্তুত। ঐ পথ মাড়াবার আগে অধমের কয়টি প্রশ্ন ছিল, যেসব শিল্পী-কলাকুশলী জেনে-শুনে এ ধরনের প্রতারণমূলক বিজ্ঞাপন নির্মাণ করছেন, তারা কীভাবে এর দায় এড়াবেন? এমনকি আমরা যারা সবকিছু জেনেও এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলছি না, বরং ঐসব পণ্য কিনে সেই প্রতারণাকে পুষ্ট করে যাচ্ছি, তবে আমাদের দায়মুক্তি কোথায়? পাপী আর পাপীর রসদদাতার মাঝে কোন তফাৎ আছে কি?
নিজের, নিজের পরিবার বা রুটি-রুজিতে আঘাত না আসা পর্যন্ত আমাদের বোধোদয় ঘুমিয়ে থাকে। সমাজ বা দেশচিন্তা আমাদের তাড়িত করে না। তত্ত্ব বা বিশ্লেষণধর্মী বিষয়বস্তুর চেয়ে ভাসা ভাসা (surface) উপাদানই আমাদের মনোবৃত্তি চালনার আসন পায়। বিবেকের এ পঙ্গুত্ব আর অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিকতার শেকড় অনুসন্ধানে সমাজবিজ্ঞানীরা হয়ত অনেক কথাই বলবেন। এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক মাত্র দুটো বিষয়ে এখানে আলোচনা ফাঁদতে চায়। প্রথমত. রাজনীতি। চলতি সময়ে ‘রাজনীতি’ শব্দখানার সঙ্গে ‘অপ’ প্রত্যয়ের এতটাই নিবিড় সম্পর্ক যে, রাজনীতি বলতে অপরাজনীতিকেই নির্দেশ করে। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য বিরাজনীতিকরণের মূল অনুঘটক এই অপরাজনীতি। আগে যেখানে রাজনীতির মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াতেন তিতুমীর, দুদু মিয়া, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ পুরোধা ব্যক্তিবর্গ, সেখানে আজ কালো বিড়ালদের আধিপত্য। তাই গণতন্ত্রের মূল সুর ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’ সমূলে উত্পাটিত, সেখানে শোভা পায়, ‘অর্থই সকল ক্ষমতার উত্স’। সেই অর্থের বর্ণ আবার ঘোরতর কৃষ্ণ। রাজনীতি এখন খয়ের খাঁদের শরীর বেয়ে অর্থশালীদের মুকুট হয়েছে। যদিও দুই শ্রেণীর উদ্দেশ্যই এক, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি। অবস্থানগত কারণে চামচা শ্রেণী নেতার দরবারে বিনা প্রশ্নে আত্মমগজ নিবেদন করে পাতি নেতার স্বীকৃতি পায়। অন্যদিকে বিত্তশালীরা এই পথে পুঁজি বিনিয়োগ করে পাপের লাইসেন্স পায়। স্বভাবতই এই রাজনীতির প্রতি সাধারণের মাঝে তৈরি হয়েছে চরম অনাস্থা। এই আত্মকেন্দ্রিকতার যুগেও জাতীয় আর স্থানীয় ইস্যুতে আমজনতার মাথা ব্যথার কমতি নেই। কিন্তু সেই মাথা ব্যথাকে সামষ্টিক আকৃতি দেয়ার মতো আস্থাভাজন সুরাজনীতির বড় অভাব। এ আস্থাহীনতায় জ্বালানি দিয়ে যাচ্ছে আমাদের পাঠ্যক্রম, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা; যেখানে সৎ উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষা না দিয়ে, দেয়া হয় দামি ‘করপোরেট চাকর’ হওয়ার শিক্ষা। রাজনীতির জুজু দেখিয়ে মেধাবীদের বানানো হয় ক্যারিয়ারিস্ট। তাতে যৎকঞ্চিৎ যা মানবিক উপাদান থাকে, তার লক্ষ্য নির্ধারিত হয় সার্টিফিকেট। তাই গলাধকৃত গুরুদত্তের শেষ আশ্রয় হয় পরীক্ষার খাতা। ফলে রাজনীতির আঙিনা থাকছে মেধাশূন্য। যার দরুণ যত্রতত্র খুন, গণধর্ষণ, গুম, অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৈরী হচ্ছে না ঐক্যবদ্ধ বজ্রকন্ঠ। যেটা হচ্ছে, সেটাকে এক অর্থে সাম্প্রদায়িকতা বলা চলে। যেমন— শিক্ষক আর সাংবাদিক সম্প্রদায় যার যার পেশার নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তেলের মূল্য বৃদ্ধি বা দেশের খনিজ সম্পদ পাচারের মতো জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলনে তাদের দেখা পাওয়া ভার।
এবারে সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কয়টি কথা বলি। সাধারণ অর্থে, সরকার বলতে আমরা জাতীয় সরকারকে বুঝি। তাই আমাদের যত আবদার সব কেন্দ্রে আসীন সরকারপ্রধানের কাছে। অতি কেন্দ্রীভূত এই সরকারব্যবস্থার কারণে জনগণ সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের প্রজা ভাবতে শুরু করেছে। একদিনের গণতন্ত্রে অংশ নিয়ে ১৮২৬ (৩৬৫*৫+১) দিনের ইজারা কোন একটি দলকে দিয়ে তারা নিজেদের দায়মুক্ত ভাবে। এটাই আমজনতার প্রজাসুলভ মানসিকতার পরিচায়ক। সরকারের সাথে এই বিচ্ছিন্নতা দেশের প্রতি কোন দায়বোধ জনমানুষের মনে জন্মাতে দেয় না। আমরা জানি, স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের বাস। তাই স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর 'সরকার' থাকা বাঞ্চনীয়। এমনকি আমাদের সংবিধানও এর স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ নং অনুচ্ছেদে যে স্থানীয় শাসন ও স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ আছে, তা গণতন্ত্রের মূল আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। গণতন্ত্র বলতে ক্ষমতার প্রবাহ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রমূখিনতাকে বোঝায়। অথচ সংবিধান মতে, বিদ্যমান সরকার কাঠামোতে কেন্দ্রের প্রশাসনিক বিভাগের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে শাসন পরিচালনার জন্য 'স্থানীয় সরকার' নামক এজেন্ট তৈরী করে ক্ষমতার বিভাজন (De-concentration of Power) করা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ করা হয়নি। ফলে ক্ষমতার লাগাম থেকে যায় জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। অন্যদিকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় প্রয়োজন গণতান্ত্রিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of Democratic Power)। সেজন্য বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে থাকা উচিত দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থা, তথা কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে 'গণতান্ত্রিক স্বশাসিত স্থানীয় সরকার বা স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সরকার'। এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে স্থানীয় কার্যাবলীতে স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিক হয়ে উঠব। পরবর্তীতে জাতীয় বিষয়ে তারা অংশ নেয়ার প্রেরণা পাবে। এভাবে স্থানীয় জনগণ সরকারের অংশ হয়ে পড়বে এবং ক্রমান্বয়ে সরকারের ওপর প্রভাব খাটাতে পারবে। এছাড়া স্থানীয় মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে স্থানীয় যাবতীয় অব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সুরাহা যেমনি সম্ভব, তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারের ভারও লাঘব হবে।
আমরা প্রায়শঃ একটি ভুল করি, স্থানীয় যাবতীয় সমস্যার জন্য আমরা জাতীয় সংসদ সদস্যকে দায়ী করি। আদতে তার মূল কাজ জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু আমাদের ত্রুটিপূর্ণ সরকার ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে সংসদ সদস্যের কাঁধে স্থানীয় সমস্যার দায় চাপিয়ে দেয়া হয়। ফলে একাধারে তিনি জাতীয় এবং স্থানীয়! স্থানীয় পর্যায়ে নামমাত্র নির্বচিত প্রতিনিধি বসিয়ে সরকার মশাই গণতন্ত্রের ক্রেডিট নিতে চান। ফলে কেবল নির্বাচনকেই গণতন্ত্রের আত্মা বিচার করায় গণতন্ত্র গণধর্ষণের শিকার হয়। স্বার্থবাদী শ্রেণী নিজেদের ক্ষমতার লোভ ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক সরকার কাঠামো গড়বে, এমনটা কল্পনা না করাই ভালো। তাই ক্ষমতার লাগাম জনগণের অধিকারে আনতে সবাইকে স্ব স্ব স্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। "গণতন্ত্র কেউ কাউকে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়"। বলে রাখা ভালো, শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেই দেশ বেহেশত হবে না। কিন্তু গণতন্ত্রের পথ যে সুগম হবে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ গণতন্ত্র একটি চর্চার বিষয়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ, প্রতিবেশি দেশ ভারত।