somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

প্রিয়ার কালো চাহনি

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুনীলের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। তপ্ত রোদেলা হাওয়ায় হঠাৎ কাল বৈশাখীর মত। সবকিছু চূর্ণ বিচূর্ণ হতে হতেও হল না। ঝড় আবেশে ঝরা খণ্ড রেখে গেল। মনির কথা বলছি। মনি সুনীলের স্ত্রী। হঠাৎ প্যারালাইসড। সব বন্ধ। ধীরে ধীরে অনেক চেষ্টার ফসল মনি আজ উঠে দাঁড়িয়েছে। নড়বড়ে খুঁটির মত হেলেদুলে চলাচল। তবুও শুকরিয়া। আল্লাহর কাছে কিভাবে চাইলে এমনটা হয়Ñ ঠিক সেভাবেই চেয়েছে সুনীল। হঠাৎ অনেকটা ধকল গেল । মাস দুই হবে একটানা খাটুনি । সংসারে আর আছে কে ? শুধু এক ছেলে । গত বছর স্কুলে ভর্তি করেছিল শুভকে । ছ বছরের কচি ছেলে । মায়ের এমন দশায় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল । আর মা ছাড়া সুনীলের পক্ষে কি এত সম্ভব ? তবুও এক হাতে সামলেছে সুনীল । চারদিকে একেবারে ধন্যি পড়ে গেছে । এমন স্বামী ক’জনের জোটে । স্বয়ং বেহুলা হার মানত যদি কিনা বেঁচে থাকত । মনিও সন্তুষ্ট । যতটা না প্রকাশ করে অন্তরে ঠিক ততোধিক ভালবাসা রয়েছে সুনীলের প্রতি । এই এক দোষ মনির । প্রকাশ করতে জানে না ।


অফিস থেকে আজ অদৃশ্য এক সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছে সুনীল। বাসায় এসেই মনিকে বলল, বলত আমি কি এনেছি?
মনি বিহ্বল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে, কি এনেছো ?
তুমিই বল, এই যে আমার হাত খালি । তবুও তোমার জন্য কিছু এনেছি । বল কি ? সুনীল তাকিয়ে মনির দিকে ।
মনি একটু হেসে বলল, বাড়ি যাব ।
আকাশ থেকে পড়ল সুনীল । কিভাবে বুঝল! আজ তো আসলে এই খবরই সে এনেছে । অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ২০-২৫ দিনের, বাড়ি যাবার জন্য । তাড়াতাড়ি করে সে মনিকে জিজ্ঞাসা করল , কিভাবে বুঝলে ?
মনি শুধু চোখ টিপে হেসে গেল ।


হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেবার সময় ডাক্তার বলেছিল মাঝে মাঝে কোথাও বেড়াতে নেবেন । নতুন পরিবেশে মনও ভাল লাগবে , হাঁটতেও ভাল লাগবে । রোগীর জন্য স্থান পরিবর্তন খুব জরুরী । এক জায়গায় থাকলে একঘেঁয়েমী এসে যায়, তখন হাঁটা চলা ভাল লাগে না । এই ভেবেই সুনীল ঠিক করল বাড়ি গেলে কেমন হয় । বাপ মায়ের মুখ দেখবে এতে ওরও ভাল লাগবে ওর বাপ মায়েরও ভাল লাগবে । মনি বোধ হয় তাই শুনে এখনও মনে রেখেছে । হয়তো ওর মনটাও উতলা হয়েছিল বাড়ি যাবার জন্য । মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি । ওর তো আবার এই ্একটা রোগ- প্রকাশ করবে না । তাছাড়া টাকা পয়সার ঝামেলা গেছে অনেক । সবই তো জানে মনি । শুয়ে থেক্ওে সংসারের হিসেব রেখেছে ষোল আনা । এত বছরের এক ঘাটের সংসার । চাইলেই তো আর ঝেড়ে ফেলা যায় না ।





নেত্রকোনা শহর থেকে ঠিক পাঁচ মাইল ভিতরে পূর্বধলা থানা । সেখানের একটি গ্রামে মনিদের বাড়ি । বেশ নিটোল পরিবেশ । পুরো গ্রামের অব¯্থাই ভাল । পাকি¯তান আমল থেকে বড় বড় চাকরি করে এই গ্রামের মানুষ । তারও পূর্বের ইতিহাস আছে – যখন হজ্জ্ব করতে গাড়ি ঘোড়ার প্রচলন ছিল না তখন হেঁটে হজ্জ্ব করত এই বাড়ির মানুষ । খ্যাতির দখলটা অনেক বড় । মনি তো তাই খুব গর্ব করে, আমার বাড়ি । সুনীলের গর্বও কম নয় । শ্বশুর বাড়ি বলে কথা । তবে তার বাড়িও কম যায় না । বৃটিশ আমলের জমিদার ছিল তার বাপ দাদারা । এখন অবস্থা পড়ে এসেছে। এটাই স্বাভাবিক । প্রকৃতির পালাবদলে বদলে গেছে অনেক কিছু , বদলে গেছে গ্রামীণ জীবন , মানুষের হালচাল , রীতিনীতি । এগুলোকে থামিয়ে রাখা যায় না । সংস্কৃতির অতল তলে ঠিক পলির মত বয়ে চলে নদীর গতিপথ ধরে । কোথাও কোথাও থেমে থেমে গড়ে দেয় এক একটি জনপদ । হঠাৎ করে সুনীলের মেঘনার চরের কথা মনে পড়ল । সেখানে এক সময় ছিল পানির বিস্তৃত জলধারা । অথচ আজ চরে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে, থাকছে, খাচ্ছে দাচ্ছে । এই তো চলে যাচ্ছে জীবন । সুনীলের গ্রাম্য পরিবেশে বেশ কেটে যাচ্ছে দিনগুলি । কাব্য প্রতিভা যেন মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে। কবির কাব্যের সাথে জীবনের কাব্যের অনেক অমিল আছে। কবিতা তো কবিই লিখে. তাহলে কবির কাব্য আবার কি? নিছক ঘুড়ে বেড়াচ্ছে এসব প্রশ্ন। তবুও মনে হয় কবি যেন বানিয়ে বানিয়ে কবিতাকে অনেক রোমাঞ্চকর করে তোলে। আর এক ধরনের কবিতা আছে যা প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়ে কবির হাতে মুক্তি পায়। সেই হল প্রকৃত কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উনার সৃষ্টিতে পুরোটাই প্রকৃতির স্পন্দন। আমাকেও কি আজ প্রকৃতি পেয়ে বসল নাকি?

আজ ক্ষণিকের ত্বরে স্তব্ধ হয়ে
নির্বাক পৃথিবীতে করুণার পাত্র লয়ে
প্রস্ফুটিত চোখে অথচ অন্ধ মনে
বদ্ধ ঘরে কড়া নাড়াই ক্ষণে ক্ষণে
-------------------------------
---------------------------------
---------------------------
------------------------------------
মনের মাঝে ছেদন দেয় মনের দেয়াল
জীবনের সমস্ত কিছু হয়ে যায় আড়াল।।

“কি লিখছেন ভাইয়া?” প্রশ্ন ভেসে আসে সম্মুখ থেকে। সুনীল মাথা উঁচু করে দেখে শ্যাম বর্ণের একটি মেয়ে। চেহারায় করুণার ধারা। ঠোঁট ও নাকের মাঝে ব্যবধান কম। চোখের ক্ষীণ ভ্রুজোড়া তার পুরো মুখের অবয়বটিকে এক করে মাথা হতে কেশ নেমে এসেছে ঘাড় বেয়ে বক্ষ অধরে। একটু হাসি। তারপর আবার জিজ্ঞাসা, “কি করেন ভাইয়া?”
-লিখছি। তুমি কে?
- আমি আপনার বোন। আমি মনি আপাদের পাশের পাড়ায় থাকি । হাস্যচোখে বলল ।
- তাই নাকি ? তা তোমায় তো আগে দেখেছি বলে মনে হয় না ।
- আমি কিন্তু আপনাকে দেখেছি । আপনি যখন বিয়ে করেন তখন থেকে চিনি আপনাকে ।
- বা ঃ বাহ্ । তা শালিকা এতদিন আড়ালে ছিল কেন ?
- আড়ালে তো থাকিনি জামাইবাবু । আমি তখন ছোট ছিলাম, তাই মনে ধরেনি । এখন কিন্তু আপনি আমায় ভুলতে পারবেন না । এক ঝলক হাসি দেয় মেয়েটি ।
সুনীলের হাসি পায় । বলে এখন বুঝি অনেক বড় হয়েছো ? তা বিয়ে শাদী কিছু করেছো ?
মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে বলে , বিয়ের কপাল তো আমার কবেই পুড়েছে । এক জনমে আর কয়টি বিয়ে হবে ?
সুনীল বুঝতে পারে না । বলল মানে ?
তুমি আমার জামাইবাবু থাকতে আবার বিয়ে কি ?
সুনীল একটু বিব্রতের হাসি হাসে ।
মেয়েটি তড়িঘড়ি করে বলে , ভাইয়া আজ আসি ।
এই বলে দৌড়ে চলে গেল ।

বেশ দুষ্ট । মেয়েটির হাসির রেশ , কথার চলন শক্তি এখনও সুনীলের মনে ধরে আছে । কেমন অদ্ভুতভাবে এল আবার চলেও গেল । কাল বৈশাখীর ঝড়ো মেঘের মত হঠাৎ এল , হঠাৎ গেল । কাল বৈশাখী বলা বোধ হয় সাজেনি । কারণ হাস্য বদন মেয়েকে কি কাল বৈশাখী বলা যায় ? শরতের মেঘ বলা যেতে পারে । কিন্তু সেতো আকাশে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে থাকে । কি আশ্চর্য মেয়েটির ক্ষমতা আছে । সেই কখন থেকে শুধু তাকেই ভেবে চলছি । অদৃশ্য মোহ । মনি! মনি কোথায় ? হয়তো ঘুড়তে বেড়িয়েছে । অনেকদিন পরে আসা । তারপর সদ্য এতবড় একটা অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ । সব মিলিয়ে মনির বোধ হয় ভালই লাগছে । ঘুড়–ক । প্রাণ খুলে হাসুক, দেখুক , প্রকৃতিতে মিশে যাক । “ কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা ”- রবীন্দ্রনাথের কথা । সবাই আসলে তাই । হারিয়ে যেতে কারও মানা নেই । যে ঘর বাধে সেই বাধে , যে হারায় সে হারায় । উত্তাল সমুদ্র স্রোতে আমরা সবাই একা । ফুঁসে ্ওঠা সাগরের স্রোতে কেউ ভেসে যাই আর কেউ তীরে আছড়ে পড়ি । প্রকৃতির খেলা । একা থাকার কষ্ট বুঝি মানুষ কে চিমড়ে খেত । তাই বুঝি বিয়ে পরিবারের প্রচলন ঘটাল ।



এই যে একটানা ডেকে চলছে কোকিলটি । সে কেন ডাকছে? আমরা কি ভেবেছি? কত সুখ, কত কথা, কত হাসি হেসে যায় মানব-মানবীর মূর্ত ছায়ায় বসন্ত হাওয়ায়। কোকিলের ডাকে সে প্রাণে আরও যেন ঝংকার ছড়ায়।

“আজিকে তোমার মধুর আকুতি শুনেছি সন্ধ্যা প্রভাতে
বসন্ত লীলায় ভেসেছি মোরা এক হয়ে সখাতে
বুঝিনি কি’বা কণ্ঠে তোমার কি সুর বাজে
সে কি পাওয়ার নাকি না পাওয়ার রাগে?”

বেশ তো লিখেছেন কবি কোকিলের প্রতি স্নেহ রেখে। আমরা ক’জনে ভাবি আসলে কোকিল কি সুখে ডাকে নাকি দুঃখে ডাকে?

ধীরে ধীরে সময় কমে আসছে। হাতে আছে আর কয়েকটি দিন। কিভাবে সময় চলে যায়। এবার আর অন্য কোথাও যাওয়া হল না। মনিকে নজরে রাখতে হয়েছে। আমার চেয়ে অবশ্য ঐ মেয়েটিই বেশি সময় দিয়েছে। ধরে ধরে এখানে ওখানে নিয়ে গেছে। এখন মনি অনেক সুস্থ। কিন্তু পুরোপুরি নির্ভরশীল। একজন মানুষ ওর সাথে থাকা চাই। সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিতে পারে এমন একজন। ঐ মেয়েটি! ঋতু যার নাম।





ঋতু সঙ্গে এসেছে। বছরের সময়ের পালাক্রমে সকল ঋতুতেই ঋতু সঙ্গী হবে বলে আশাবাদী। সূর্যের মত পৃথিবীর একভাগে আলো দেবার পাত্রী সে নয়। সে হতে পারে ক্ষুদ্র কিš্তু ল্যাম্পের মত প্রজ্জ্বলিত হয়ে আলো দিয়ে রাখে সারাক্ষণ। সুনীল অনেকটা স্বস্তি পেয়েছে, সংসারের কাজ থেকে অবমুক্তি। সকল দায়িত্ব হাতে নিয়েছে ঋতু। সুনীলই বলেছে, “মনি ওকে সব বুঝিয়ে দাও। তুমি শুধু শুয়ে থাকবে ও সুস্থ হবে। আর কোন চিন্তা যেন তোমার না থাকে।” ঋতুও খুব খুশি বড় সংসারের বড় দায়িত্ব। এতদিনের জীর্ণ ঘরের জীর্ণ দ্বারের রুদ্ধ বসবাসে সে অতীষ্ঠ ছিল। আজ সে পেয়েছে । সময়ের প্রতি মূহর্তকে কাজে লাগিয়ে সুনিপুন হাতে এগিয়ে চলেছে সে ও তার কৃত্রিম সংসার । মনির মনে ঘুণপোকার মত একটু একটু করে কষ্ট দানা বাঁধছে । এতদিনের সংসারের মায়া , মোহ সব ত্যাগ ? আমি কি এতটাই অচলা ? সুনীল কি আমাকে এতটাই নিষ্ক্রিয় ভাবে ? যখন ঋতু ছিল না তখন আমি কি বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সুনীলকে সাহায্য করিনি ? সংসার তো তখনও চলেছে । হ্যাঁ , সুনীলের একটু কষ্ট হয়েছে । আজকাল সুনীলটাও যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে ।


ঋতু ! ঋতু !! ঋতু !!! বলে চিৎকার করে ঘরে ঢোকে সুনীল । ঋতু এসে সামনে দাঁড়ায় । আজ সে শাড়ি পড়েছে । নীল শাড়ি । খুব সুন্দর লাগছে । শরীরের লালিত্য আভা যেন ফুটে উঠেছে নীলাভ বেহেস্তী ছোঁয়ায় । শাড়ির আড়ালে শরীরের ভাজ যেন স্পষ্ট । ফুঁসে ওঠা ঠোঁট ও তীব্র কটাক্ষের চাহনিতে সুনীল আজ পর্যদস্ত । ঘন নিঃশ্বাসের ঠান্ডা চোখে ঋতু বলল , কি দেখছো জামাইবাবু ?
- প্রিয়ার চাহনি ও আমার শালিকা ।
- প্রিয়াই যদি হব তবে আর শালিকা কেন ?
- শালিকা কি প্রিয়া হতে নেই ?
- না ।
- আচ্ছা ঠিক আছে । তো আজ আমার প্রিয়ার এমন রূপের বহ্নি শিখা কোথেকে জ্বলল ?
- তোমা হতে হে প্রিয় ।
- তাই ! তবে কাছে এস । বলে অধির আগ্রহে হাত বাড়িয়ে দেয় সুনীল ।

ঋতু ধীর পায়ে , মৃদু হেসে , মৃদু লাজে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । নির্জন সন্ধ্যা । সমস্ত বেলাভূমি পড়ে এসেছে । পাখিরা নীড়ে ফিরে গেছে । সমস্ত জীবকূল ফিরে যাবার পানে ব্যস্ত । হঠাৎ কিছু পাখির প্রচন্ড কিচির মিচির ভেসে আসছে । তারাও ফিরে যাবে । এ ক্ষণ যেন শুধু ফিরে যাবার ও ফিরে আসার । ঋতুও ফিরে যাচ্ছে তার কল্পনার প্রিয়ের সান্যিধ্য সমীপে । এ যেন স্বর্গের পথে শীতল বালুকায় ছড়িয়ে থাকা পুষ্পের ওপর দিয়ে ছুটে যাওয়া কোন ক্ষণ । আমি পেয়েছি , আমি পেয়েছি, বলে বন্ধ চোখে সুনীলের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে । সুনীল ঋতুর বন্ধ চোখে হাত রেখে বলে , বলতো আমি কি এনেছি ?
ঋতু বন্ধ চোখেই বলে , কি ?
সুনীল বলল , চোখ খোল । দেখ আমার হাত খালি । তবুও খুব খুশির একটা কিছু এনেছি । বলতো কি ?
ঋতু মাথা নাড়িয়ে বলল , জানি না । তুমিই বল –-
সুনীল বলল , আজ আমার প্রমোশন হয়েছে ।
ঋতু বলল , তাই ।
হুম , তাই !! সুনীল হাসল । হেসে বলল , খবরটা তোমার মনি আপাকে দিয়ে দাও গে ।


ঋতু যথাসময়ে মনিকে খবরটা দিল । মনি যেন ক্রমে নি®প্রাণ থেকে আরও নি®প্রাণ হয়ে এল । অথচ এত তারই খুশীর খবর। কিন্তু খুশি তো মুখ ফুটে বের হয়না। অন্তরে যদি মৃত আতœা ঘুড়ে বেড়ায় তবে সে খুশি হবে কি করে? খবর তো সুনীলেরই দেবার কথা। অথচ ঋতুই জানল কি করে? নিশ্চই সুনীলের মুখে। আর আমি কিনা ঋতুর মুখে!! আজ আমি এতটাই অবহেলিত! এতটাই মূল্য কমে গেছে সংসারে? সংসার কি ভাঁজ পরা পত্রকে ঝরিয়ে ফেলে? আমিও কি আজ ঝড়ে যাবার প্রাক্কালে এসে উপস্থিত হয়েছি? শরীরটাও যেন আবার ক্রমশ খারাপ হয়ে আসছে। পায়ে জোর কমে আসছে। সুনীল কি সে খবর রাখে? বড় বেশী ক্লান্ত লাগে। বিশেষ করে সময় হিসেব করতে করতে এখন যেন আর সময় ফুরোয় না। দুঃসময়! খুব খারাপ সময়!! মনি ঘুমিয়ে পড়ে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত গভীর। সুনীল মনির ঘরে আসে। ঘরের বাতি বন্ধ। বোধ হয় শুভই বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। সুনীল এসে বাতিটি জ্বালাল। শুভ মনির এক পাশে শুয়ে আছে। লাইটের আলোয় মনির ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে চাইল। একটু হাসি দিল। বিষন্নতায় মাখামাখি হয়ে সে হাসি আবার মিলিয়ে গেল। বলল, তোমার প্রমোশন হয়েছে, আমায় বললে না যে লক্ষীটি। সুনীল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।
বলল, সরি।
মনি হাত নেড়ে বলল, এখানে বস।
সুনীল তার পাশে বসল।
মনি বলল, আমি জানতাম তুমি আসবে। আমি সময়ের প্রহর গুনছিলাম কখন তুমি আসবে। কিন্তু গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তুমি এলে। আচ্ছা সুনীল সময় এত দীর্ঘ কেন? এ সময় কি কখনও ফুরোয় না?
সুনীল মনির মুখে হাত দিয়ে বলে, চুপ কর। এত কথা বলে না। “জানো সুনীল আমি কখনই তোমার সাথে বেশি কথা বলতে পারিনি। কিন্তু আজ আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু পারছি না । শরীরটাক তো আর নাড়াতে পারিনা । তাই শুধু কথা বলতে ই্েচ্ছ করে । কিন্তু তাও যেন বন্ধ হয়ে আসছে । ” বলতে বলতে মনির চোখে জল এসে যায় । সুনীল মনির মুখে হাত রেখে বলে , ‘প্লীজ শান্ত হও । প্লীজ । তুমি স্স্থু হও তারপর যত খুশি কথা বল । ’
মনি একটু হাসে । ‘ আর সুস্থ ।’ আবার একটু দীর্ঘশ্বাস । তারপর বলল , আমার শরীরটা খুব একটা ভাল না । কখন কি হয় জানি না । তুমি শুভকে দেখে রেখো ।
‘ ছি ঃ মনি । এসব কথা বলে না । তোমার কিছু হবে না । ’ বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সুনীল ।


তারপর একের পর এক কথা বলেই চলেছে মনি । প্রথম বিয়ের দিন থেকে যত ঘটনা সব খুঁিটয়ে খঁটিয়ে সে সুনীলকে শোনাচ্ছে । “ সুনীল শোন , আমি আসলে তোমাকে খুব ভালবাসি । তাই তোমার কোন কিছুতেই বাঁধা দেই না । কিন্তু আমার ভালবাসা তোমার কাছে প্রকাশও করতে পারিনি কখনো । আমি জানি তুমিও আমাকে ভালবাস । কিন্তু তুমি আমার মাথা ছুঁয়ে বল ,তুমি ঋতু কে ভালবাস ? তুমি ঋতুকে বিয়ে কর । অন্তত আমি জানি ঋতু শুভকে ভালবাসে । শুভর জন্য হলেও তাকে বিয়ে কর । ”

সমস্ত আকাশ ভেঙে পড়ে সুনীলের মাথায় । রাত্রির কালো আঁধারের সমস্ত কালিমা যেন আজ লেপ্টে দিয়েছে সুনীলের মুখে । মনি চিরকালই এমন । সব জানে সব বোঝে অথচ প্রকাশ করে না । আজ যখন জানালো তখন সুনীলের নিরুত্তর থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । তবুও সে মুখ তুলে তাকালো মনির দিকে । দেখে মনি চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।

কি হয়েছে তোমার ? কি হয়েছে ? মনি ! মনি ! সুনীল আর্তস্বরে চিৎকার করে।
মনি একটু হাসল । তারপর সুনীলের হাতটি ধরল । বলল , “ সময় বুঝি শেষ হয়ে এসেছে । ফুরিয়ে গেছে সময়।” তারপর হাতটি ক্রমশ শিথিল হয়ে এল । ছেড়ে দিল সুনীলের হাত। সমস্ত দেহটি শীতল হয়ে এল । সুনীল পাগলের মত হয়ে গেল । কি করবে ? মনির হাত দুটি ধরে দেখল , নাড়ীর স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে । হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল সুনীল । সুনীলের কান্নায় শুভর ঘুম ভেঙে গেল । সেও বুঝতে পারল তার মা আর নেই । এভাবেই রাত পোহাল ।






বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেল । সকালবেলা সুনীল ঋতুকে জিজ্ঞাসা করল , ঋতু তুমি তোমার আপাকে ধরে রাখতে পারলে না ?
ঋতু বলল , তুমি পারনি তাই আমিও পারি নি ।
সুনীল ঋতুর দিকে ফিরে তাকাল । বলল , বেশ । ভুল আমরই । শুভকে ধরে রাখতে পারবে ?
ঋতু উত্তর দিল , পারব ।

------------০---------------
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×