দেশে শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমলেও আশানুরূপ কমেনি মাতৃমৃত্যুর হার।
ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিপিডি) সাম্প্রতিক এক সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে এখনো প্রতি বছর প্রসবজনিত কারণে ১২ হাজার নারী মারা যায়। বিশ্বে এ সংখ্যা হচ্ছে পাঁচ লাখ।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রকল্প পরিচালক ডা. মাখদুমা নার্গিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অল্প বয়সে বিয়ে ও ঘন ঘন সন্তান জন্মদানের কারণে মেয়েদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এবং এর ফলে মারাত্মক অসুস্থতার কারণে মাতৃমৃত্যুর মতো বেদনাদায়ক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়।"
পরিবারে মেয়েরা অবহেলার শিকার হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "শৈশব থেকে তারা রক্তশূন্যতাসহ নানা রোগের জটিলতায় ভোগে। এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসাও নেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টিও এতে কাজ করে।"
মাখদুমা জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেয়েদের গর্ভধারণের বয়স ২০ বছর ধরা হয়ে থাকে। সন্তান ধারনের জন্য শরীরের গঠন ও সুস্থতা তখনই উপযুক্ত হয়ে থাকে।
"সন্তান গর্ভে ধারণ করতে হলে একজন মায়ের শরীরে যেসব উপাদান থাকা দরকার, তা এই বয়সের নিচে হলে থাকে না। এ কারণে বাল্য বিয়ে মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে", বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুমৃত্যুর হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাতৃমৃত্যুর হার না কমার কারণের মধ্যে রয়েছে, অল্প বয়সে বিয়ে, অদক্ষ দাইয়ের হাতে প্রসব, অপুষ্টি, উপযুক্ত চিকিৎসা না নেওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া নানা কুসংস্কারের কারণে গর্ভবতী মায়েদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নিয়ন্ত্রণ ও নির্যাতন চালানোর ফলে মায়েদের একটি অংশ অকাল মৃত্যুর শিকার হয়।
ঢাকা ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. আফসানা করিম বলেন, "এখন প্রচার মাধ্যমের কারণে সচেতন হলেও মেয়েরা কুসংস্কার ও পর্দা প্রথার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না। বিশেষ করে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবেষণা করে- এটা আমরা লক্ষ্য দেখেছি।
বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "দরিদ্র ঘরের মেয়েরা অব্যবস্থার কারণেও ক্লিনিকে যেতে পারে পারে না।"
কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক চালু হলে মেয়েদের চিকিৎসা বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা প্রকাশ করে আফসানা বলেন, "তখন অবস্থার উন্নতি হতে পারে।"
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্তান ধারণ বিষয়টিকে নারীর ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে পরিবারে তার প্রতি বিশেষ যতœ ও নিয়মিত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এটা অমানবিক।
তাদের মতে, সন্তান গর্ভে আসার মুহূর্ত থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে সুস্থ শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব এবং মায়ের স্বাস্থ্য নিয়েও কোনো চিন্তা করতে হয় না।
উৎস্যঃ বিডিনিউজ২৪.কম