ছবিঃনেট
স্বাস্থ্য সেবার সাথে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত।দেশে করোনা মহামারী প্রথম সনাক্ত হবার শুরু থেকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে চলছিলাম।কিন্তু গত মাসের শেষ এর দিকে এক প্রতিবেশী নানার করোনা সংক্রমণের কারনে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে যাতায়াত করার কিছুদিন পর হালকা জর জর অনুভব করি।এ জরটি আমার পূর্বের অভিজ্ঞতার সকল জরের চেয় আলাদা ছিল।কারন এই জর কখনো ছেড়ে যায়নি।২ দিন দেখলাম, জর যখন ভাল হচ্ছিলনা তখন করোনা সংক্রমণ এর পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।গত ৩ তারিখ স্যাম্পল দেয়ার পর রাতে আমাকে মেসেজে জানিয়ে দেয়া হল আমার কোভিড পজিটিভ।
এর মাঝে আমি,আমার স্ত্রী ও আমার আদরের ছোট রাজকন্যা সহ একই সাথে এ কয়দিন কাটিয়েছি।তাদের কথা ভেবে খুব ভয় হল।আমার পজিটিভ আসার পর তাদের সকলেরই পরীক্ষা করালাম। আল্লাহর রহমতে আমার ছোট মেয়েটির নেগেটিভ আসলেও আমার স্ত্রীর পজিটিভ আসে।
খুব বেকায়দায় পরে যাই কারন আমার বাচ্চার বয়স মাত্র ৭ মাস।এদিকে আমি পৃথকভাবে থাকছি।আমার শাশুড়ী আমাদের বাসায় ছিলেন এবিং তিনি আলাদা রুমে থাকায় উনিও কোভিড নেগেটিভ ছিলেন।
আমার মেয়ের খুব কষ্টের সময় গুলো শুরু হল।মা পাশের রুম থেকে এসে মাঝে মাঝে বাবুখে খাওয়াতে লাগল।আমিতো এর পর থেকে বাচ্চাকে ছুয়েও দেখিনি।
সমস্যা বলতে শুধুমাত্র হালকা কাশি,গলাব্যথা আর ঠান্ডাটাই ছিল।৩ দিন পর কোন জর ছিলনা।এই দিকে আমার স্ত্রীর ১ দিন শুধুমাত্র জর ছিল সেই সাথে হালকা কাশি।আমার গন্ধ হারিয়ে গেলেও তার হারায়নি।
আমরা এক সাথে যখন ছিলাম তখনো মাস্ক পরবো কিনা ভাবছিলাম।যদিও মাস্ক পরিনি।
আমরা সব কিছুই গরম খেতাম এমনকি গরম পানি দিয়ে গোসল পর্যন্ত করেছি।আমার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় তার মা এন৯৫ নামক স্পেশাল মাস্ক ব্যবহার করতো। এই ব্যাপারটা আসলেই অনেক কষ্টকর ছিল।
ঔষধ হিসেবে আমরা জিংক, সিভিট,কাশির সিরাপ,মন্টিলুকাস ১০,প্যারাসিটামল খেয়েছি।
আমার শাশুড়ি এ সময়টাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
আমি সর্বদা মানসিক ভাবে সতেজ থাকার জন্য সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম এড়িয়ে চলেছি।কারন প্রতিদিনের সংক্রমণ ও মৃত্যুর খব দেখে খুব ভয় কাজ করতো।এই দিন গুলো অনেক বই পড়া ও আল্লাহির ইবাদতের ভিতর দিয়ে গেছে।
এ সময়টায় নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা সেই সাথে আমার ব্যবহৃত সকল জিনিস খুব ভালোভাবে পরিচ্ছন রাখার উপর জোর দিয়েছি।
খাবার হিসেবে মন যা চাইছে তাই তবে প্রোটিন ও শাক সবজির পরিমাণ বেশি ছিল।
ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল অধীক খেয়েছি।এটা সকলেরই খাওয়া জরুরি।
সব ঠিকমত চললেও আমার স্ত্রীর সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ এক দুপুরে তার শ্বাসকষ্ট হয়।আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।সাথে সাথে আমার এক বন্ধুকে ফোন দিলে সে বলে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকার কথা। যাক উপুর হয়ে শুয়ে থেকে দুপুরে স্বাভাবিক হলেও সন্ধ্যায় আবারও দেখা দেয়।তখন আবারও উপুর হয়ে থেকে স্বাভাবিক হয়। শ্বাসকষ্ট অনেক কষ্টকর একটা ঘটনা।
এটা দেখার পর আর আর রিস্ক নিতে চাইনি।জরুরি এম্বুলেন্স নাম্বার,পালস অক্সিমিটার কিনে রাখি।
অবশ্য এর পরে আর কখনো এমন হয়নি এটাই সবচেয় খুশির খবর।
সংক্রমণের ৭ দিন পর আমরা স্যাম্পল দেই। আল্লাহর রহমতে আমার নেগেটিভ চলে আসে কিন্তু আমার স্ত্রী তখনো পজিটিভ।আমি ডা. এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আলাদা থাকার জন্য।
এরপর আমার স্ত্রীর সংক্রমণের ১১ দিন পর পুনরায় তার স্যাম্পল দেই ও এর পরদিন নেগেটিভ এর মেসেজ আসে।
কোভিড একটা ভীতিকর রোগের নাম।কখন কার অবস্থা খারাপ হবে কেউ বলতে পারিনা।সকলের সচেতনতা জরুরি। আমার ভ্যাক্সিন নেয়া স্বত্তেও আমি করোনার হাত থেকে রেহাই পাইনি।সুতরাং কেউ ভ্যাক্সিন দেয়ার পর অবহেলায় মাস্ক ব্যবহা বাদ দিবেননা।আসুন আমরা আরও সচেতন হই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:০৭