somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজন্য বর্গের প্রতি একজন হবু আরোগ্যশিল্পীর কিছু কথা.....

১৪ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোনটা রেখে অনেকক্ষণ ঝিম মেরে পড়ে রইলাম । কোন কিছু বলেই কামরুলকে শান্তনা দিতে না পারার অক্ষমতা আর অসহায়ত্ব আমাকে তীব্র ভ্রুকুটি করছে । কানে এখনো বাজছে ওর উচ্চারিত কথা গুলো । বোধহয় বাজতেই থাকবে, বাজতেই থাকবে ।

"ভাইয়া এখন আমার কী হবে ? আমারতো যাওয়ার কোন যায়গা রইলো না ! আমার সপ্নটা এভাবে মাটিতে মিশে গেলো ? আমি কী অপরাধ করেছিলাম ?"

কথাগুলো বলছে আর গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে ছেলেটা ।অসুস্থতার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে ও গোল্ডেন এ প্লাস পায়নি ও অথচ মেধার দিক থেকে তার জুড়ি মেলা ভার । আমিতো ভেবেই ছিলাম আগামী বছর এই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসেই ওকে র্যাগ দিবো ফাজলামো করে ! একই স্কুলের ছোটভাই বলেই ওর সাথে আমার হৃদ্যতা অনেকদিনের । অন্য কোনদিন যদি ও এভাবে কাঁদতো তাহলে আমি হয়তো বলতাম, "আরে বোকা ছেলে কাদছ কেনো ? তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো, এ বয়সে ছেলেদের চোখের পানি মানায় না !" কিংবা অন্য কোন শান্তনার কথা । কিন্তু আজ কিছু বলতে পারছি না ওকে । নিজেরই কেমন গলাটাতে কেমন জমাট বেঁধে আছে । কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছে খুব । ভাগ্যিস কথা হচ্ছে ফোনে । তা না হলে চোখের কোণে জল নিয়ে যে কী লজ্জায়ই না পড়তাম ওর কাছে !

এমন আরো দুটি ফোন এসেছিলো আজ । রাহাতের আর তানিয়ার আব্বুর । একই রকম হতাশা আর জমাট বাধা দুঃখ ওঁদের কন্ঠেও। মফস্ফলের কলেজ থেকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর তোলা যে কত কষ্ট এটা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে ।

কয়েক বছর আগের কথা । সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি । একেকটা পরীক্ষা শেষ হচ্ছে আর ।

বেড়ে যাচ্ছে উ্তকণ্ঠা । আমি কি পারবো, এতো মেধাবীদের ভীড়ে ? সেই ছোট্টবেলাতেই গলায় স্টেথো আর গায়ে এপ্রোন চড়ানোর যে সপ্ন দেখেছিলাম পরিবারের আক্ষাঙ্খার প্রতিফলণে; তা ধীরে ধীরে চলে আসছিলো অনেক কাছে । কিন্তু একই সাথে হৃদয়ের গহীণে ঠিকই আশংকার সুর । আমি কী আদৌ পারবো ?

বড় হয়েছি মধ্যবিত্ত পরিবারে। অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো । সারাদিন টিউটরের কাছে বসে ঘ্যানঘ্যান করে পড়া কিংবা প্রাকটিকালের নাম্বার বাড়াতে পরীক্ষার সেন্টারের কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার নাম করে অতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ করার সাধ কিংবা সাধ্য কোনটাই আমার ছিলো না । ভেবেছি যতোটুকুই পারি আমি যদি ঠিক ঠিক নিজেকে তুলে ধরতে পারি তাহলে অন্তত এ+ পেতে কোন সমস্যা আমার হবে না প্রাকটিকালের ২/৫ নম্বরের জন্য !

অবশেষে ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শহুরে ছেলেকে অনেক গোল্ডেন এ প্লাসকে টপকে এ ক্যাম্পাসে পৌছেছি ।এখন ভেবেও শিউরে উঠছি যদি এই সিদ্ধান্তটাই তখন হতো তবে কী আমিই কামরুলের সারিতে চলে যেতাম না ?


খুব কষ্ট লাগে একটা ছোট গিনিপিগের ওপর পরীক্ষা চালাতেও অনেক জ্ঞানার্জন করতে হয়, সেই যাতে এই ক্ষুদ্র প্রাণীটার কোন অমর্যাদা না হয়, সে যাতে অকারণে ধ্বংস না হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও অনেক যত্ন করে পরীক্ষা করা হয় । অথচ আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকেরা আমাদের ওর রাজ্যের পরীক্ষা চালান । যা মন চায় তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন তারা । আমাদের মতামতটুকু নেয়ার ফুরসত ও তাদের নাই ! তারা মানুষ গুলোকে রাস্তার নেড়ী কুকুরের মর্যাদা দেন বলেও তো মনে হয় না । একটা সিদ্ধান্ত হলো দেশের চিকিত্সাব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত প্রায় সব সদস্য এই সিদ্ধান্তের ভ্রান্তি নিশ্চিত করলেন অথচ মহামান্য রাজন্যবর্গ্যেরা পরামর্শের জন্য ছোটেন অন্যদের কাছে ।এই লেখাপড়ার পাহাড় ডিঙানো একজন অভিযাত্রীকের কী যোগ্যতা থাকা উচিত কিংবা কিভাবে নির্বাচন করলে ভালো হয় তাওতো তো পরামর্শ চাইলেন না কখনো । হায় কপাল আমাদের !

কিছুদিন আগে কিছু মুরুব্বীদের সাথে কথা বলার সময় 'ব্যক্তিগত অপ্রয়োজনীয় মনস্তাত্বিক অনমনীয়তা' বোঝাতে গিয়ে 'ইগো' শব্দটা ব্যবহার করে চরম একটা ঝাড়ি খেয়েছিলাম । তাই এসব শব্দের ব্যবহারে এখন আমি অনেক সচেতন । তবে আমার কাছে এটি খুবই কষ্টের যে কিছু মানুষ তাদের অতি বায়বীয় কিছু সিদ্ধান্ত কোন একপথে উদগীরণ করে দিলো আর হাজার হাজার মেধাবীদের উজ্জল ভবিষ্যত মুহুর্তেই দপ করে নিভে গেলো । অথচ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানানো হলো কিন্তু আপনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে রইলেন ।

যে মেয়েটাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে সে লজ্জায় সংকোচে লাল হয়ে যায় কোনমতে নামটা বলেই দৌড়ে পালায়, সেই মেয়েটাই কতটা আহত হলে, কতটা আশাভঙ্গ হলে প্রেসক্লাবের সামনে রাজপথ অবরোধ করে, হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে পুনরায় পরীক্ষা চালু করার স্লোগান দেয়; মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনি কী ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারছেন ? তার বাবার হয়তো অতটা টাকা নেই যতটা টাকা থাকলে কয়েক লাখ টাকা দিয়ে একটা বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়বে । কিন্তু তাই বলে কী তার মেধার কোন মূল্যই নেই ? তার সপ্নের দাম কানা কড়িও নেই ? আপনি বললেন তোমাদের পরীক্ষা নেই, এখন যাও ঘোরাঘুরি করো সিনেমা দেখো কক্সবাজার যাও ফূর্তি করো ! হা হতোম্মি !! সারাটা জীবন তো পরীক্ষার ভয় থেকে বাঁচতে স্রষ্টার কাছে কতো মিনতি করেছি ! অথচ দেখুন কেবলমাত্র নিজেকে সবচেয়ে সেরা মেধাবী ও সবচেয়ে যোগ্য প্রমাণ করে এই সীমাবদ্ধতার দেশে অল্প কয়েকটি আসন থেকে একটাকে নিজের করে নিতে ওরাই পরীক্ষা দিতে চাইছে ! ফাঁকিবাজী কোন

পদ্ধতিতে আপনার কাছে আসন ভিক্ষা চাইছে না ? দিন না তাদেরকে তাদের সুযোগটা ফিরিয়ে, ওরা কষ্ট করে হলেও নিজের ভবিষ্যতটা নিজের হাতেই গড়ুক ! প্রদীপ্ত হোক দেশ গড়ার শপথে ।

আপনি ওদের সিনেমা দেখতে বলেছেন ঘুরতে যেতে বলেছেন নির্দ্বিধায় বলতে পারি এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই এই হাওয়ায় পয়সা উড়ানোর সার্মথ্য নেই । মেডিকেলে হলো না ! ঠিক আছে, তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবে কিংবা গাটের পয়সা খরচ করে ভর্তি হয় যাবে কোন একটা প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে ! এতটা সহজ নয় ।নিরীহ ভারবাহীর মতো আবার ছুটবে ওরা পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে, বুয়েটের ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ।ওখানকার প্রশাসন তো আর আপনাদের মতো উদারতা দেখায় নি ! ওখানে তো ভর্তি পরীক্ষা ঠিকই দিটে হবে । কিন্তু সেই পরীক্ষা গুলোর জন্য যে প্রস্তুতি নিতে যে সময় প্রয়োজন তা কী এখন আর আছে ওদের হাতে ?

তার চেয়ে বরং আপনি যদি বলেন অনেককে আপনার ঐ প্রটোকল যুক্ত গাড়ির বহরের নিচে বুক পেতে দিতে তাহলেও হয়তো এটা তাদের জন্য তুলনামূলক সহজ। যদি হতাশায় দুঃখে আপনার সামনেই ওরা শুরু হয় আত্মহত্যার মিছিল তাতেও আপনার কী ! ওতো আপনার মেয়ে নয়, আপনার বোন নয় ভাই নয় ! কিন্তু আমি আমার ভাইবোনকে হারানোর কষ্ট কিভাবে ভুলবো ?

বলতে পারেন মাননীয় মন্ত্রী ??
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×