হিমুর ক্রিকেট খেলা দেখা ( পর্ব-১)
উৎসর্গ- হুমায়ূন স্যার �
- - - - -
আমার নাম হিমালয়। ডাক নাম হিমু।আমার অবস্থান এখন কলাবাগান এলাকায়। এলাকার নাম কলাবাগান কিন্তু কোন কলাবাগান চোখে পড়ছে না।এমন আরো অনেক জায়গা আছে যেগুলোর নামের সাথে জায়গার কোন মিল নেই যেমন হাতিরঝিল।
.
.
সেদিন মাজেদা খালার বাসায় গিয়েছিলাম, আমাকে ৫০০ টাকা দিল। মাঝে মাঝেই দেয়,মা- বাবা হীন দেখেই হয়তো ওনার দয়া হয়।বাদলের রুমে গিয়ে দেখি সে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান এর ক্রিকেট খেলা দেখছে।সে কি প্রশংসা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের।আমার তেমন একটা খেলা দেখা হয় না তবুও ক্রিকেটের নিয়ম গুলো জানি।কারণ মহাপুরুষদের সবকিছু জানতে হয়।ক্রিকেট ই একমাত্র খেলা যেখানে বাংলাদেশের পুরো ৪৮ কোটি মানুষকে একসাথে করে, একসাথে কথা বলতে বাধ্য করে। ৪৮ কোটি কেন বললাম বুঝলেন না?
২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের ৩ প্রধান একই স্টেডিয়ামে খেলা দেখে ছিল।আর বাংলাদেশ কোন ম্যাচ জিতলেই টিভি, পত্রিকায় ব্রেকিং নিউজ এসে পরে, ওমুক দলের সাথে এত উইকেটে বা এত রানে জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বি এন পি চেয়ারপার্সন এর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।আমাদের ৩ প্রধান ই সবসময় দাবী করে তাদের সাথে ১৬ কোটি মানুষ আছে, সূতরাং ১৬*৩=৪৮।
.
.
কলাবাগান থেকে মিরপুরের দুরত্ব প্রায় ৭ কিঃমিঃ।বাসে গেলে ৩০ মিনিট লাগবে ট্রাফিক সহ ১ ঘন্টা। কেন জানি আজকে খেলা দেখতে ইচ্ছা করছে আজকে নাকি বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড এর খেলা।খেলা শুরু হবে আরো ১.৩০ ঘন্টা পরে।হাতে টাকা ও আছে ৫০০। খালার দেওয়া ৫০০ টাকা এখনো খরচ হয় নি।সবার টাকা থাকে পকেটে আর আমার হাতে।আমার পরনে রুপার দেওয়া বিখ্যাত পকেটহীন হলুদ পাঞ্জাবী।৫০০ টাকা দিয়ে কেমন গ্যালারী পাবো?
.
.
লোকাল বাস দিয়ে কলাবাগান থেকে মিরপুর যাচ্ছি।কিছুক্ষন পরপর থামিয়ে যাত্রী নিচ্ছে যদিও বাসে দাড়ানোর জায়গা নেই।সিট তো দূরের কথা।আমি একটু আরামেই দাঁড়িয়ে আছি। আমার আশেপাশের যাত্রীরা আমার থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখছে।নিরাপদ দুরত্ব রাখার কারনটা কি? আমাকে কি চোর, পকেটমারদের মতো দেখাচ্ছে? একজন কে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে নাক শিটকাচ্ছে!!বুঝলাম আসল কারনটা কি!
আমার পাঞ্জাবী টা গত ১০ দিন ধরে ধোয়া হয় না।আমার এই বিখ্যাত পকেটহীন গন্ধযুক্ত পাঞ্জাবীর কারনেই আরামে দাড়িয়ে থাকতে পারছি।
বাসের হেলপার সবার কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে।আমার কাছে এসে বলল, 'মামা কয় যাইবেন'
' মিরপুর যাবো ভাগিনা'
' ২৫ টাকা দেন '
৫০০ টাকার নতুন নোট টা এগিয়ে দিলাম তার দিকে।সে বিরক্তির ভংগিতে বললো, 'ভাংতি দেন'
' পকেট ই নাই, ভাংতি কোথায় পাবো?'
' ভাংতি নাই তো লোকাল বাসে উঠছেন কেন? নামেন বাস থাইকা'
'চলন্ত বাস থেকে কিভাবে নামব?'
হেলপার চিৎকার দিয়ে বলল,' ওস্তাদ গাড়ি থামবে পাগল নামবে।'
অপমান করে কেন গাড়ি থেকে নামানো হলো সেটা বুঝতে পেরেছি ভালো করেই।মানুষের গায়ের গন্ধ, মুখের গন্ধের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। চাকরির ইন্টারভিউ, প্রেমিক প্রেমিকার ডেট,ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্ক।
বিনা পয়সায় অনেক দূর চলে এসেছি। বাকি পথটা ও বিনা পয়সায় পাড়ি দিতে পারলে ভালোই হতো।
.
চলবে????
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৯