আজ তমার হলুদ সন্ধ্যা লিখা একটা ককসিট লাভ আকারে ঝুলানো। গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান, প্রচণ্ড শব্দে গান বাজছে। মুরুব্বী, শিশু,যুবক- যুবতি সহ অনেক মানুষ উপস্থিত। যুবকরা সবাই এক কালার হলুদ পাঞ্জাবী আর যুবতীরা সবাই হলুদ শাড়ী পরেছে। তমার খালাতো বোন জুই ও তার বোনের বিয়ের জন্য বেড়াতে এসেছে।কিছু ছেলে পটানোর চেষ্টা করছিল তাকে, কেউ কেউ মোবাইল নাম্বার চাইল আবার কেউ কেউ নাম্বার ছোট ছোট কাগজে করে নাম্বার লিখে নিয়ে এসেছে।এসব কিছু সব সে অনেক উপভোগ করছে। কেউ কেউ তলে তলে নাম্বার আদান করছে।এসব থেকে তার মনোযোগ চলে গেল অন্য দিকে,সে অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করছে একটা ছেলে এক কোনায় বসে একদৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে আছে,একটু আগে যেভাবে দেখেছিল এখন ও একই ভাবে তাকিয়ে আছে।চোখের পলক একবার ও ফেলে নি। সে ও হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আছে,বাইরের লোক হওয়ার কথা না,কিন্তু সে এভাবে বসে আছে কেন? উচ্চশব্দে কোথাও গান বাজলে এমনিতেই গানের তালে তালে পা মাথা নড়ে কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে এক চুল নড়ছে না।তমা একটা শরবতের গ্লাস নিয়ে পরিচিত হতে গেল।
:- হাই।
-হ্যালো,( নিরাসক্ত গলায়)
:-আমি জুই,তমা আপুর খালতো বোন।আপনি?
-আমি কে আপনার না জানলে ও চলবে।
:- বিরক্ত হচ্ছেন কেন? আপনি কি তমা আপুর বন্ধু?
-হ্যা, শুধু বন্ধু না বয়ফ্রেন্ড ছিলাম।
:-বয়ফ্রেন্ড ছিলেন!!! বয়ফ্রেন্ড হয়ে গালফ্রেন্ড এর গায়ে হলুদে? আপনি গিনিজ বুকে নাম লেখাবেন দেখছি। জুস খাবেন?
- থ্যাংকস, আমি জুস খাবো না।
:-প্লিজ, নিন না। আপনি বোধহয় আসার পর থেকেই কিছু খাননি।
- আমি কিছু খাই না।
:-'কিছু খান না, মানে?'
- মানে কিছুই খাই না। হাওয়া খেয়ে বাঁচি। হাহাহা...
------------------------------------
জুই বুঝতে পারলো বেচারার গালফ্রেন্ড এর বিয়ে তাই হইতো মন খারাপ। কিন্তু নিজের গালফ্রেন্ড এর গায়ে হলুদে ও যে কেউ আসে এটা সে সিনেমাতে হোক আর বাস্তবেই হোক প্রথম দেখেছে। তারা কি কোন বদ মতলব আছে? তমা আপু কে এখান থেকে পালিয়ে নিয়ে যাবে।তার কি এ বিষয়টা সবাইকে গিয়ে বলা উচিত? এখন সবাই অনুষ্ঠানে ব্যস্ত, বিরক্ত করার দরকার নেই।সে কি ছেলেটাকে কথায় ব্যাস্ত রাখবে?
-: আপনার নাম টা তো বললেন না!
- আমার নাম রাকিব,রাকিব হাসান।প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম।
-: পড়তেন মানে? এখন কি লেখাপড়া ছেড়ে দিসেন? আচ্ছা থাক এসব কথা পড়ে বলেন, আপনার আর তমা আপুর প্রেম নিয়ে কিছু বলুন।
- এসব এখন বলে আর কি হবে!!তমা আমাকে কথা দিয়েছিল আমার সাথে সারাজীবন থাকবে।দুজনে মিলে মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো সারাজীবন সংসার করব। কিন্তু সে তার কথা রাখে নি , সে আরেকজন কে বিয়ে করছে। আরেকজন কি বলব সে তার চামড়া টাকার কাছে বিক্রি করছে।
-:আপনি এখনো তাকে ভালবাসেন। আপনার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।
-----------------------------------
ডিনারের জন্য বুফের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই যার যার মতো নিচ্ছে, খাচ্ছে।জুই য়ের ছেলেটার প্রতি একটা মায়া জন্মেছে।ছেলেটা এখনো সেই জায়গায় বসে আছে,আগের মতো। মনে হয় কিছু খায় নি এখনো।জুই কিছু খাবার প্লেটে করে রাকিবের জন্য নিয়ে গেল।
-: আপনার জন্য।
- আমার জন্য? আমি কি আপনাকে বলেছি? আপনাকে বলেছি না আমি কিছু খায় না।
-: কখনই কিছু খান না? তাহলে বেচে আছেন কি করে?
- কে বলল আমি বেচে আছি।
-: জুই য়ের মনে হলো প্রচণ্ড হতাশায় মনে হয় সে এসব আজগবি কথা বলছে ছেলেটি।সে মনে মনে চিন্তা করছে তমা আপুকে কথা গুলো জানানো উচিত।
------------------------------
জুই দেখলো লোকজনের আনাগোনা হলুদের স্টেজ থেকে কমেছে, অনুষ্ঠান মনে হয় শেষ । তমার রুমে জুই ডুকলো। কেউ নেই কথাগুলো এখনই বলা উচিৎ তার
-:আপু তুমি কি এই বিয়েতে খুশি? নাকি পরিবারের চাপে করতেছো?
- ;তুই হঠাত এই কথা বলতেছিস?
- : রাকিব ভাই, তোমার বয়ফ্রেন্ড এসেছিল।বয়ফ্রেন্ড বলছি কেন,সে তো এখন এক্স হয়ে পড়েছে।
- কি বলছিস এসব, পাগল হয়ে গেলি নাকি?
- পাগল হব কেন? পাগল তো তুমি হয়েছো। যাকে ভালবেসেছো তাকে বিয়ে না করে, চামড়া বিক্রি করতেছো।
- তুই ভুল বুঝছিস। তুই যার কথা বলছিস সে ৬ মাস আগে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিল। যার কারনে আমি ২ মাস মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম
-তাহলে আমি কার সাথে এতক্ষন কথা বলেছিলাম!!!!!
তমা আর কোন কথা না শুনে দৌড়ে বাহিরে গিয়ে দেখলো সে জায়গায় কেউ নেই।তমা তাকে একটা ছবি দেখিয়ে বলল এ ছেলে কিনা? রাত হলে ছেলেটার চেহেরা সে স্পষ্ট দেখেছিল, হ্যা এই সে ছেলে।তমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল।সে কি বিয়েটা করবে?তা নিয়ে দ্বিধায় আছে। আর জুই য়ের চোখ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে ঐ চেয়ারটার দিকে।
---- ----- - -; সমাপ্ত------------------
ব্লগার ভাই বোনেরা আপনারা অবশ্যই ভালো বা খারাপ মন্তব্য করবেন প্লিজ।আপনারা মন্তব্য না করলে নতুন ব্লগার রা লিখতে উৎসাহ পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪