নাহিদ প্রচণ্ড ক্লান্ত। ঢাকার সবগুলো হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ক্লিনিক চষে ফেলেছে, ঢাকার বাইরে খোঁজ নিচ্ছে। তাও মিলছেনা।
নাহিদ নীলাকে সবসময় বলতো, রাস্তায় চলারসময় ফোনে কথা না বলতে। নীলা বলতো, “সবার ফোন না ধরে থাকতে পারি। তোমার ফোন কি নাধরে থাকতে পারি? বলো।”
“কেন? রাগ হলে তো ধরার কথা ভুলেই যাও।”
“রাগ না, অভিমান।”
“অভিমান?”
“হুম। জানো, ‘অভিমান’ শব্দের কোন ইংলিশ হয়না?”
“কেন? অভিমান কি শুধু এই উপমহাদেশের মেয়েদেরই থাকে নাকি?”
“জানি না, হয়ত, মানুষ রাগ যে কারো উপর করতে পারে, কিন্তু অভিমান করে শুধু ভালবাসার মানুষের সাথে।”
“তাই?”
“হুম। নয়ত কি?”
নাহিদ ভাবছে। ঘুমুতে পারছে না, বিছানায় এপাশওপাশ করছে। নীলা প্রায়ই বলত, “তোমাকে কলেজে সবসময় খালি দৌড়াতে দেখতাম। খালি “সন্ধানী সন্ধানী” করতে। ভাবতাম, ডক্টর হবার পরে একটু কমবে। না, তা না। ভাবলাম, আমার সাথে এফেয়ারের পর কিছুটা কমবে। তাও না। সন্ধানীকে এখন আমার সতীন মনে হয়।”
“হুম। খুবই স্বাভাবিক। সন্ধানী আমার প্রথমপ্রেম। তোমার তো হিংসে হবেই। মেয়েরা যে কিনা হিংসে করতে শুধু মানুষকে না স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও ছাড়ে না।”
“কেন ছাড়বে?আহা, কেন ছাড়বে- বলো। এমনিই তুমি ব্যস্ত, আমিও ব্যস্ত। তোমার খুব কম সময়ই আমাকে দিতে পারো। সন্ধানীর পিছে যে সময়টুকু ব্যয় কর, তার ১০% তো আমাকে দিতে পারো। আর তুমি এখন কমিটির উপদেষ্টামাত্র।”
“তো কি? সন্ধানীয়ান আজীবন সন্ধানীয়ান।”
“হয়েছে, হয়েছে,আর বলতে হবে না।”
“কতোজনের রক্ত যোগাড় করে দিয়েছে নাহিদ। আজ নিজের মানুষের রক্ত পাচ্ছে না। কিছুদিন আগে রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার জন্য অনেক ডোনার রক্ত দিয়ে ফেলেছে। এখন AB-ve কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না নাহিদ। নাহিদকে নীলা প্রায়ই বলতো, “এতজনকে রক্ত যোগাড় করে দাও। আমার কিছু হলে আমার জন্য ব্লাড ম্যানেজ করতে পারবে তো?”
নাহিদ বলতো, “কোন ব্যাপার? আমি এক ডাক দিলে ১০-১২ব্যাগ ব্লাড হাজির হয়ে যাবে।”
“ওহ তাই?”
“হুম অবশ্যই।”
নাহিদের ঘুম আসছে না। অপেক্ষা করছে, যদি কোন ফোন আসে। বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। নীলা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। শুধুমাত্র নাহিদের জন্যই সহ্য করে। অসংখ্যবার বলা সত্ত্বেও সিগারেট ছাড়ে নি নাহিদ। নীলা বলত, “তোমাকে কেউ এক প্যাকসিগারেট দিলে তো আমার কথা ভুলেই যাবে।”
“যাব হয়ত। তুমি কি খুব ইম্পরট্যান্ট কেউ?”
নীলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো নাহিদের দিকে, বলতো, “তাহলে কি আমি?” ওর চোখ টলটল করতো। আর নাহিদ ভাবতো, মেয়েরা always কেঁদে জিততে চায়। নীলার চোখ টলটল দেখলেই মেজাজটা বিগড়ে যেত নাহিদের।
ইন্টারশীপ শেষের পর মেয়েটার সাথে প্রেম হয়েছে। খুব বেশিদিন নয়, মাসখানেক। কিন্তু অল্পদিনেই কেমন যেন মায়ায় জড়িয়ে গেছে। মায়া জিনিসটা বড্ড ভয়াবহ। একবার মায়ায় জড়িয়ে পড়লে বের হওয়া যায় না। নাহিদ ভীষণ ভালো ছবি আঁকে। আর্টিস্টদের প্রতি নারীজাতির বরাবর ভীষণ টান। নীলার অনুরোধে নীলার স্কেচ করেছিল নাহিদ। নীলা ওর বার্থ ডে গিফট সেটা চেয়েছিল। এতো ব্যস্ততার মধ্যে ছবি আঁকার সময় কই? নাহিদ ভেবেছিল, শাড়ি বা জুয়েলার্সের উপর দিয়ে পাড় পাবে, কিন্তু নীলা চেপে ধরেছিল। বেশি রোমান্টিক মেয়েদের সাথে প্রেম করার হাজারটা ঝামেলা, তাদের হাজারটা বায়না। বায়না করার ব্যাপারটা বিরক্তিকর হলেও খারাপ লাগতো না, কেমন যেন ‘অধিকার অধিকার’ অনুভব। নাহিদের বান্ধবী মীরা ভীষণ উপভোগ করতো নাহিদ-নীলার খুনশুটি। কীর্তনের সাথে ব্রেক-আপের পর মীরা প্রায়ই বলতো, “কারো প্রেমেপড়ি না আমি, কারো ‘প্রেমে’র প্রেমে পড়ি। অবহেলায় অবজ্ঞায় অনুভূতি জর্জরিত।”
নাহিদ চারটা সিগারেট শেষ করল। রাত ৩টা। বৃষ্টি পড়ছে। নীলা বলত, “জানো, আমার না মুভির হিরো-হিরোইনদের মত তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার শখ।”
“ঐ স্বপ্নই দ্যাখো। আমার তো খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই যে তোমার সাথে বৃষ্টিটিতে ভিজতে যাব, তাই না?”
নীলা মুখ গোমড়াকরে বলেছিল, “আর্টিস্টরা অনেক রোমান্টিক হয়, জানতাম। তুমি এমন কেন?”
“Ditch করলেই পারো।”
“সেটা যে পারবো না ভালো করেই জানো।”
“কেন? পরশুরাতেই তো ব্রেক-আপ করেছিলে।”
“সকালে ফোনটাও আমি করেছিলাম। সারাটা রাত ঘুম হয় নি, কেঁদেছি।”
বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি নাহিদের নীলার সাথে। এবার নীলা চোখ খোলার পর প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিনই ভিজবে নাহিদ ওর সাথে। নাহিদ বারান্দার গ্রিলের মধ্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে স্পর্শ করল, টুপটুপ করে করে কয়েক ফোঁটা পড়ল ওর হাতে।
নীলার সাথে প্রেম হবার ৩দিনের মাথায় একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল একসাথে। হঠাৎ নীলা বলল, “আপনি কি বলুন তো?”
“কেন? কি করলাম?”
“সব কি বলে বোঝাতে হবে নাকি?”
নাহিদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল। নীলা বলল, “আমরা পাশাপাশি কতক্ষণ হাঁটছি, বলুনতো?”
“হবে আধাঘন্টা।”
“আপনি কি বলদ না বেক্কল?”
“অ্যা?!”
“এতক্ষন ধরে পাশাপাশি হাঁটছি, আপনি আমার হাতটা একবারো ধরতে চাইলেন না।” নীলা নাহিদের হাত ধরল।
“Oh sorry” বলল নাহিদ। কিছুক্ষণ পর বলল, “সাহস হচ্ছিল না।”
“কেন?”
“জানি না। যদি চড়-টড় মেরে বসো...”
নীলা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকাল নাহিদের দিকে, তারপর বলল, “জোঁক চেনেন?”
“হুম”
“একবার যখন আপনার হাত ধরেছি, আর কিন্তু ছাড়ছি না। জোঁকের মত লেগে থাকব।” নাহিদ মুচকি হাসল।
রাত চারটার দিকে একটা ফোন এলো।
“হ্যালো, Dr. Nahidআছেন?”
“হুম, বলছি”
“শুনলাম, আপনি AB-ve রক্ত খুঁজছেন?”
“হুম। আছে আপনার কাছে?”
“হুম। আছে। আমি ডোনেট করব।”
“কিন্তু আমার যে বেশ কয়েক ব্যাগ ব্লাড লাগবে।”
“আমার কয়েকজনআত্মীয়ের ব্লাডও AB-ve। উনাদের ঢাকায় আসতে বলেছি।”
“Many many thanks.” হাঁফ ছাড়ল নাহিদ।
ব্লাড ডোনেশনের পর মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে নিয়ে ক্যান্টিনে বসল নাহিদ। লোকটির নাম গাদ্দাফি শিকদার। নাহিদ বলল, “I don’t know how to thank you.”
“আমাকে হয়ত আপনি চিনতে পারছেন না।”
“মানে?”
“আমার ওয়াইফের রক্তের জন্য অনেকবার এসেছিলাম আপনার কাছে। Actually I’m grateful to you.”
“ও আচ্ছা, উনি এখন কেমন আছেন?”
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “She’s no more. Leukemia. অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি বাঁচাতে। শুধু পেরেছিলাম ওর কিছুটা সময় বাড়াতে। ওর সময়ই আমার স্মৃতি।”
অনেকক্ষণ গল্প করল নাহিদ ঐ ভদ্রলোকের সাথে। বড্ড ভালবাসতেন লোকটি নিজের স্ত্রীকে।
নীলার অবস্থাএখন বেশ ভালো। যেকোনো সময় জ্ঞান ফিরতে পারে। নাহিদ নীলার হাত নিজের হাতের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। নাহিদ নীলাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমার ব্লাড গ্রুপ কি?”
“AB-ve”
“হুম, rare blood group.”
“হুম, আমি মেয়ে rare, আমার ব্লাড গ্রুপ তো rare হবেই। আমার ভালবাসার মানুষও rare, আমার ভালবাসাও rare।”
নীলা চোখ মেলল।নাহিদের দিকে তাকাল।
নাহিদ বলল, “কি ভেবেছিলে? Will I let you ditch me soeasily?”
নীলা মৃদু হাসল,সেই স্বর্গীয় হাসি। নাহিদ বলল,“আমাদের একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা এখনো বাকি।”
“টিবিয়া-ফিবুলা ফ্রেকচার। মাসখানেক তো বিছানায় পড়ে থাকতে হবে।”
“আমি অপেক্ষা করব।”
নাহিদ প্রচণ্ড ক্লান্ত। ঢাকার সবগুলো হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ক্লিনিক চষে ফেলেছে, ঢাকার বাইরে খোঁজ নিচ্ছে। তাও মিলছেনা।
নাহিদ নীলাকে সবসময় বলতো, রাস্তায় চলারসময় ফোনে কথা না বলতে। নীলা বলতো, “সবার ফোন না ধরে থাকতে পারি। তোমার ফোন কি নাধরে থাকতে পারি? বলো।”
“কেন? রাগ হলে তো ধরার কথা ভুলেই যাও।”
“রাগ না, অভিমান।”
“অভিমান?”
“হুম। জানো, ‘অভিমান’ শব্দের কোন ইংলিশ হয়না?”
“কেন? অভিমান কি শুধু এই উপমহাদেশের মেয়েদেরই থাকে নাকি?”
“জানি না, হয়ত, মানুষ রাগ যে কারো উপর করতে পারে, কিন্তু অভিমান করে শুধু ভালবাসার মানুষের সাথে।”
“তাই?”
“হুম। নয়ত কি?”
নাহিদ ভাবছে। ঘুমুতে পারছে না, বিছানায় এপাশওপাশ করছে। নীলা প্রায়ই বলত, “তোমাকে কলেজে সবসময় খালি দৌড়াতে দেখতাম। খালি “সন্ধানী সন্ধানী” করতে। ভাবতাম, ডক্টর হবার পরে একটু কমবে। না, তা না। ভাবলাম, আমার সাথে এফেয়ারের পর কিছুটা কমবে। তাও না। সন্ধানীকে এখন আমার সতীন মনে হয়।”
“হুম। খুবই স্বাভাবিক। সন্ধানী আমার প্রথমপ্রেম। তোমার তো হিংসে হবেই। মেয়েরা যে কিনা হিংসে করতে শুধু মানুষকে না স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও ছাড়ে না।”
“কেন ছাড়বে?আহা, কেন ছাড়বে- বলো। এমনিই তুমি ব্যস্ত, আমিও ব্যস্ত। তোমার খুব কম সময়ই আমাকে দিতে পারো। সন্ধানীর পিছে যে সময়টুকু ব্যয় কর, তার ১০% তো আমাকে দিতে পারো। আর তুমি এখন কমিটির উপদেষ্টামাত্র।”
“তো কি? সন্ধানীয়ান আজীবন সন্ধানীয়ান।”
“হয়েছে, হয়েছে,আর বলতে হবে না।”
“কতোজনের রক্ত যোগাড় করে দিয়েছে নাহিদ। আজ নিজের মানুষের রক্ত পাচ্ছে না। কিছুদিন আগে রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার জন্য অনেক ডোনার রক্ত দিয়ে ফেলেছে। এখন AB-ve কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না নাহিদ। নাহিদকে নীলা প্রায়ই বলতো, “এতজনকে রক্ত যোগাড় করে দাও। আমার কিছু হলে আমার জন্য ব্লাড ম্যানেজ করতে পারবে তো?”
নাহিদ বলতো, “কোন ব্যাপার? আমি এক ডাক দিলে ১০-১২ব্যাগ ব্লাড হাজির হয়ে যাবে।”
“ওহ তাই?”
“হুম অবশ্যই।”
নাহিদের ঘুম আসছে না। অপেক্ষা করছে, যদি কোন ফোন আসে। বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। নীলা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। শুধুমাত্র নাহিদের জন্যই সহ্য করে। অসংখ্যবার বলা সত্ত্বেও সিগারেট ছাড়ে নি নাহিদ। নীলা বলত, “তোমাকে কেউ এক প্যাকসিগারেট দিলে তো আমার কথা ভুলেই যাবে।”
“যাব হয়ত। তুমি কি খুব ইম্পরট্যান্ট কেউ?”
নীলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো নাহিদের দিকে, বলতো, “তাহলে কি আমি?” ওর চোখ টলটল করতো। আর নাহিদ ভাবতো, মেয়েরা always কেঁদে জিততে চায়। নীলার চোখ টলটল দেখলেই মেজাজটা বিগড়ে যেত নাহিদের।
ইন্টারশীপ শেষের পর মেয়েটার সাথে প্রেম হয়েছে। খুব বেশিদিন নয়, মাসখানেক। কিন্তু অল্পদিনেই কেমন যেন মায়ায় জড়িয়ে গেছে। মায়া জিনিসটা বড্ড ভয়াবহ। একবার মায়ায় জড়িয়ে পড়লে বের হওয়া যায় না। নাহিদ ভীষণ ভালো ছবি আঁকে। আর্টিস্টদের প্রতি নারীজাতির বরাবর ভীষণ টান। নীলার অনুরোধে নীলার স্কেচ করেছিল নাহিদ। নীলা ওর বার্থ ডে গিফট সেটা চেয়েছিল। এতো ব্যস্ততার মধ্যে ছবি আঁকার সময় কই? নাহিদ ভেবেছিল, শাড়ি বা জুয়েলার্সের উপর দিয়ে পাড় পাবে, কিন্তু নীলা চেপে ধরেছিল। বেশি রোমান্টিক মেয়েদের সাথে প্রেম করার হাজারটা ঝামেলা, তাদের হাজারটা বায়না। বায়না করার ব্যাপারটা বিরক্তিকর হলেও খারাপ লাগতো না, কেমন যেন ‘অধিকার অধিকার’ অনুভব। নাহিদের বান্ধবী মীরা ভীষণ উপভোগ করতো নাহিদ-নীলার খুনশুটি। কীর্তনের সাথে ব্রেক-আপের পর মীরা প্রায়ই বলতো, “কারো প্রেমেপড়ি না আমি, কারো ‘প্রেমে’র প্রেমে পড়ি। অবহেলায় অবজ্ঞায় অনুভূতি জর্জরিত।”
নাহিদ চারটা সিগারেট শেষ করল। রাত ৩টা। বৃষ্টি পড়ছে। নীলা বলত, “জানো, আমার না মুভির হিরো-হিরোইনদের মত তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার শখ।”
“ঐ স্বপ্নই দ্যাখো। আমার তো খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই যে তোমার সাথে বৃষ্টিটিতে ভিজতে যাব, তাই না?”
নীলা মুখ গোমড়াকরে বলেছিল, “আর্টিস্টরা অনেক রোমান্টিক হয়, জানতাম। তুমি এমন কেন?”
“Ditch করলেই পারো।”
“সেটা যে পারবো না ভালো করেই জানো।”
“কেন? পরশুরাতেই তো ব্রেক-আপ করেছিলে।”
“সকালে ফোনটাও আমি করেছিলাম। সারাটা রাত ঘুম হয় নি, কেঁদেছি।”
বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি নাহিদের নীলার সাথে। এবার নীলা চোখ খোলার পর প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিনই ভিজবে নাহিদ ওর সাথে। নাহিদ বারান্দার গ্রিলের মধ্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে স্পর্শ করল, টুপটুপ করে করে কয়েক ফোঁটা পড়ল ওর হাতে।
নীলার সাথে প্রেম হবার ৩দিনের মাথায় একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল একসাথে। হঠাৎ নীলা বলল, “আপনি কি বলুন তো?”
“কেন? কি করলাম?”
“সব কি বলে বোঝাতে হবে নাকি?”
নাহিদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল। নীলা বলল, “আমরা পাশাপাশি কতক্ষণ হাঁটছি, বলুনতো?”
“হবে আধাঘন্টা।”
“আপনি কি বলদ না বেক্কল?”
“অ্যা?!”
“এতক্ষন ধরে পাশাপাশি হাঁটছি, আপনি আমার হাতটা একবারো ধরতে চাইলেন না।” নীলা নাহিদের হাত ধরল।
“Oh sorry” বলল নাহিদ। কিছুক্ষণ পর বলল, “সাহস হচ্ছিল না।”
“কেন?”
“জানি না। যদি চড়-টড় মেরে বসো...”
নীলা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকাল নাহিদের দিকে, তারপর বলল, “জোঁক চেনেন?”
“হুম”
“একবার যখন আপনার হাত ধরেছি, আর কিন্তু ছাড়ছি না। জোঁকের মত লেগে থাকব।” নাহিদ মুচকি হাসল।
রাত চারটার দিকে একটা ফোন এলো।
“হ্যালো, Dr. Nahidআছেন?”
“হুম, বলছি”
“শুনলাম, আপনি AB-ve রক্ত খুঁজছেন?”
“হুম। আছে আপনার কাছে?”
“হুম। আছে। আমি ডোনেট করব।”
“কিন্তু আমার যে বেশ কয়েক ব্যাগ ব্লাড লাগবে।”
“আমার কয়েকজনআত্মীয়ের ব্লাডও AB-ve। উনাদের ঢাকায় আসতে বলেছি।”
“Many many thanks.” হাঁফ ছাড়ল নাহিদ।
ব্লাড ডোনেশনের পর মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে নিয়ে ক্যান্টিনে বসল নাহিদ। লোকটির নাম গাদ্দাফি শিকদার। নাহিদ বলল, “I don’t know how to thank you.”
“আমাকে হয়ত আপনি চিনতে পারছেন না।”
“মানে?”
“আমার ওয়াইফের রক্তের জন্য অনেকবার এসেছিলাম আপনার কাছে। Actually I’m grateful to you.”
“ও আচ্ছা, উনি এখন কেমন আছেন?”
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “She’s no more. Leukemia. অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি বাঁচাতে। শুধু পেরেছিলাম ওর কিছুটা সময় বাড়াতে। ওর সময়ই আমার স্মৃতি।”
অনেকক্ষণ গল্প করল নাহিদ ঐ ভদ্রলোকের সাথে। বড্ড ভালবাসতেন লোকটি নিজের স্ত্রীকে।
নীলার অবস্থাএখন বেশ ভালো। যেকোনো সময় জ্ঞান ফিরতে পারে। নাহিদ নীলার হাত নিজের হাতের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। নাহিদ নীলাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমার ব্লাড গ্রুপ কি?”
“AB-ve”
“হুম, rare blood group.”
“হুম, আমি মেয়ে rare, আমার ব্লাড গ্রুপ তো rare হবেই। আমার ভালবাসার মানুষও rare, আমার ভালবাসাও rare।”
নীলা চোখ মেলল।নাহিদের দিকে তাকাল।
নাহিদ বলল, “কি ভেবেছিলে? Will I let you ditch me soeasily?”
নীলা মৃদু হাসল,সেই স্বর্গীয় হাসি। নাহিদ বলল,“আমাদের একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা এখনো বাকি।”
“টিবিয়া-ফিবুলা ফ্রেকচার। মাসখানেক তো বিছানায় পড়ে থাকতে হবে।”
“আমি অপেক্ষা করব।”
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৫৯