১ম দিন
--------------
ঢাকায় পোস্টিং পেলাম বেশ ক'বছর পর। এফসিপিএস পার্ট ওয়ান হয়ে গেছে। হালকা লেখালেখি করতাম। ইন্টার্নীর সময় থেকেই প্রত্যেক বইমেলায় দুটো বা তিনটা করে বই বের হতো আমার। খুব জনপ্রিয় না হলেও খুব একটা খারাপ চলে নি। এখনো লিখি। ঢাকায় পোস্টিং পাবার পর বেশ কিছু অদ্ভুত মজার ঘটনা ঘটে যায় আমার জীবনে।
ডিউটির ফাঁকে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে কফি খাচ্ছিলাম। অনেক আগে থেকেই কাছেই একটা টেবিলে একদল ছেলেমেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। কথা কানে আসছিল। ইন্টার্নশিপ শুরু করতে যাচ্ছে, সবাই ভীষণ উত্তেজিত। কিছুক্ষণ বাদে গ্রুপ্টা উঠে চলে গেলো। গ্রুপের একটা মেয়ে মিনিটবাদেই ফিরে এলো। এসে আমার টেবিলের সামনে দাঁড়ালো এবং বলল, "আমি আপনার একজন ফ্যান। বসতে পারি?"
অপ্রস্তুত ছিলাম। অবাক হয়ে বললাম, "হ্যা, বসুন।" বলার সাথে সাথেই টুক করে বসে পড়ল। উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। আমি খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম। মেয়েটা বলল, "তুমি করে বলুন প্লিজ। আমি আপনার থেকে ছোট।"
কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বললাম, "আমার সবগুলো বই পড়েছ?"
"হুম, সব পড়েছি। একবার না, কয়েকবার করে পড়েছি।"
"ভালো লেগেছে?"
"খুবই, খুবই ভালো লেগেছে? কিন্তু সবগুলো গল্পের শেষটা হয় বিষণ্ণ নয়তবা কোন শেষই থাকে না।"
"ওপেন-এন্ডেড স্টোরি পাঠকের জন্য, শেষটা সে নিজের মনমতো করে গড়ে নেবে। আর বিষণ্ণতাই তো বাস্তব।"
"Pandora's boxএর মতো শুধু আশাই থাকে ওপেন-এন্ডেড স্টোরিতে।"
"যদি সুখের গল্পই লিখতাম তাহলে কি তোমার মনে দাগ কাটতো?"
মেয়েটি হাসল। কিছু কিছু মানুষের হাসি চেহারা বদলে দেয়। মেয়েটি সেই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে, হাসলে অন্যরকম লাগে, মায়াময় লাগে। বলল, "আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে।"
আবারো কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। মেয়েটিই আবার বলল বেশ অভিমানী সুরে, "আপনি এখনো আমার নামটি শুনতে চান নি।"
একটু হেসে বললাম, "ও হ্যা, তোমার নাম কি?"
"রজনী"
রজনী ওর ব্যাগ খুলে একটা নোটপ্যাড বের করে কলমসহ আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি আমার নামটা সাইন করলাম। রজনী বলে উঠলো, "শুধু নিজের নামটাই লিখলেন? আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখলেন না।"
তো লিখলাম- 'রজনীকে অনেক অনেক শুভকামনা।'
তারপর বললাম, "ভাবিনি, আমারো ফ্যান থাকতে পারে।"
"কেন? আগে কাউকে অটোগ্রাফ দেননি?"
"বইমেলায় দিয়েছিলাম।"
"আচ্ছা, আপনি কি সিঙ্গেল? আমি যতোদূর খবর পেয়েছি- আপনি এখনো বিয়ে করেন নি।"
আবারো বিব্রত হলাম। মেয়েটি আমাকে মিনিটে মিনিটে বিব্রত করছিলো।
রজনী আবার বলল, "আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি?"
ভক্তসঙ্গ কার না ভালো লাগে? সত্যি বলতে আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম না, কিন্তু বিব্রত হচ্ছিলাম।
রজনী আবার বলল, " পাত্রী হিসেবে আমি কেমন?"
"ভালোই। Actually তোমার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।"
"তো জিজ্ঞেস করুন।"
"কি জিজ্ঞেস করবো?"
"আচ্ছা, জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমিই বলছি, আমার বাবা সরকারি অফিসার। মা স্কুলটিচার। বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এবার বিয়ের সিরিয়ালে আমি। আর কিছু?"
"না থাক।"
"আপনার কফি তো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।"
ঠান্ডা কফিই একচুমুকে খেয়ে ফেললাম। বললাম, "তুমি কিছু খাও?"
"আপনি খাওয়াতে চেয়েছেন-এতেই আমি খুশি। একটু আগেই তো ফ্রেন্ডদের সাথে খাওয়াদাওয়া করলাম।" তারপর বলল, "দেখুন, ভক্ত হিসেবে আমি অনেক ভালো। আপনার মান-সম্মানের কেয়ার করি, নইলে সিন-ক্রিয়েট তো করতেই পারতাম, তাই না?"
"সিন ক্রিয়েট?!"
"হুম। ভক্তরা কতো কি করে? কখনো জাপ্টে ধরে, আরো কতো কি... খেলার মাঠে ভক্তরা 'Marry Me' লিখে বসে থাকে। আমি ওসব কিছুই করি নি?"
মনে মনে ভাবলাম- সেগুলোও কি করার ইচ্ছে আছে নাকি এই মেয়ের। ভয়াবহ...
তারপর হঠাৎ গ্লাসের মধ্য থেকে টিস্যুপেপার বের করে লিখল 'Marry me'। মুচকি হেসে আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো। বিব্রত হলেও বেশ মজাও পাচ্ছিলাম। বললাম, "আমার তো গার্লফ্রেন্ডও থাকতে পারে, তাই না? তুমি তো জানো না।"
"তো কি হয়েছে? আপনার চার নম্বর কেন চারশ নম্বর ওয়াইফ হতেও আমার আপত্তি নেই।"
এই মেয়ে বলে কি!!!
বললাম, "এসব মুখেই বলা যায়। বাস্তবে কোন মেয়েই সতীন সহ্য করতে পারে না।"
"আপনি তো ভালো মানুষ। সেজন্যই আপনাকে ভালো লাগে। ভালো মানুষেরা একটাই বিয়ে করে।"
"তাহলে তো আমার গার্লফ্রেন্ডকেই করবো, তাই না?"
রজনীকে এবার বেশ আহত মনে হল।
বললাম, "তুমি কি জানো তুমি আমার থেকে অনেক ছোট?"
"ন'বছর"
"আজকাল বয়সের এত ব্যবধানে কেউ বিয়ে করে না।"
"আপনি আসলেই কিছু জানেন না। জানেন, সোফিয়া লরেনের হাজব্যান্ড উনার থেকে ১২বছরের বড়?"
"সোফিয়া লরেন এ জেনারেশনের নয়।"
"আচ্ছা, আমি বের করে আপনাকে জানাবো।"
"আচ্ছা, ততোদিনে আমার উপর থেকে তোমার মোহটাও কেটে যাবে।"
"মোহ? আপনি 'মোহ' বলছেন কেন? কতদিন ধরে অপেক্ষা করলে প্রমাণ হবে যে আমার ইমোশন শুধু মোহ নয়?"
"বলতে পারছি না।"
"যাই হোক। আমি কি আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?"
হতবাক হয়ে গেলাম। রজনী আবার বলল, "আমি কি আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?"
আমি আশেপাশে তাকিয়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। রজনী হ্যান্ডশেক করলো ঠিকই। কিন্তু তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে আমার মাথার তিন-চারটে চুল টেনে ছিঁড়লো। বললাম, "এটা কি হলো?"
রজনী আরেকটি টিস্যুপেপার বের করে চুলগুলোকে মুড়িয়ে পার্সে ঢুকিয়ে রাখল। বলল, "আপনার চুল ছিঁড়লাম। আজ উঠি।"
দাঁড়িয়ে বলল, "আপনি হয়তো আমাকে বেহায়া ভাবছেন?"
"না না, তা কেন ভাববো?"
"আমি জানি, আপনি ভাবছেন। আমি আসলে আপনাকে অনেক পছন্দ করি তো। ভালো থাকবেন। বাই।"বলে বের হয়ে গেল।
কবি হলে বলতাম-ঝটিকার মতো এসেছিলো, ঝটিকার মতোই গেলো। ক্ষণিকের জন্য এসেও দীর্ঘস্থায়ী ইফেক্ট রেখে গেলো, ঠিক ঝড়ের মতো। সারাটা দিন ঐ মেয়েটির কর্মকাণ্ডই মনে পড়ছিল। হাসছিলাম ওর কথা ভেবেই।
দিনকতকবাদে বন্ধু আমজাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। মেয়েটির কথা বললাম। আমজাদ বলল, "বস, তোর তো হয়েই গেলো।"
"আরে না। মেয়েটার মাথায় সিরিয়াস ক্রেক আছে রে।"
"উহু, পাঙ্খারমণীরা এমনই হয়।"
"হয়তো"
"তুই মেয়েটাকে মিস করছিস।"
"মিস করছি বললে ভুল হবে। মেয়েটির বিশেষ একটা ক্ষমতা আছে। তা হলো- সে মিনিটে মিনিটে আমাকে অবাক করছিল। I enjoyed that part."
"মেয়েটির ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস কিছু তো রাখতে পারতি।"
"ধুর। পাগল একটা মেয়ে। এদের সাথে সময় কাটানো মজার, সংসার করা না।"
"সংসার করার মানে হল দীর্ঘ সময় কাটানো, বুঝলি? আমার কি মনে হয়, জানিস?"
"কি?"
"মেয়েটিই তোকে খুঁজে বের করবে।"
"তাহলে তো ভালোই।"
"বিয়ে করবি?"
হাসলাম। বললাম, "বিয়ে করা আর কুতকুত খেলা এক জিনিস না।"
২য় দিন
----------------
মাঝে মাঝেই সেই কফিশপে যেতাম। ভাবতাম হয়ত আবার বিস্মিত হবো আজ। বিস্মিত হবার আশায় নিয়মিত যাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু বিস্ময়ের কিছুই ঘটলো না, মেয়েটির সাথে দেখা হবার পর তিনমাস কেটে গেল, কিন্তু দেখা পেলাম না। মানুষ অবাক হতে ভীষণ পছন্দ করে, কিন্তু এতোটা পছন্দ করে-এই ধারণা ছিল না। সদ্য ছ্যাকা খাওয়া আমজাদের মন ভালো করতে বের হলাম। পথহারা পথিকের মত ঘুরতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে ক্ষুধার্ত হওয়াটা খুবি স্বাভাবিক। খেতে যখন হবেই, ভালো কিছুই খাব। কাছাকাছি আরেকটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে বসে পড়লাম। খাবারের অর্ডার দিলাম। এমনসময় রেস্টুরেন্টের আয়নায় দেখলাম, একটি মেয়ে ঢুকছে। আরে, সেইই মেয়ে, কিন্তু একা কেন? তার মানে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। কথাটা চিন্তা করতেই একটা শূন্যতা অনুভব করলাম। হয়ত কয়েকটা হার্টবিটও ড্রপ হল। আমজাদের দিকে তাকিয়ে বললাম, “দোস্ত, ছ্যাকা বোধহয় আমিও খেলাম।”
“মজা লস?”
“আরে না। সিরিয়াস। তুই আমার পিছনে দ্যাখ।”
“হুম, দেখলাম। একটা মেয়ে। চিনি না।”
“সেই মেয়ে?”
“কোন মেয়ে?”
“ধুর। তুই আমার কোন কথাই কখনো গুরুত্ব দিয়ে শুনিস না।”
“এই মেয়ে তোকে কবে ছ্যাকা দিল?”
“উফ, ছ্যাকা দেয় নি। তুই বোস।”
আমি উঠলাম। পিছনে ফিরলাম। মেয়েটি আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। আরে পালাচ্ছে কেন? ভালবাসার মানুষকে দেখলে কেউ ভাগে? অদ্ভুত তো! পাখি, তুমি যাবে কোথায়? আমিও বের হলাম আমজাদ বেচারাকে রেখে। বেচারার পকেটে টাকা আছে কিনা সেটাও ভাবলাম না। মেয়েটি হাঁটার গতি বাড়িয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরে বসলাম। বললাম, “ভাগছো কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক?”
রজনী অবাক হয়ে তাকালো। তারপর বিরক্তি নিয়ে বলল, “হাত ছাড়ুন?”
“কেন?”
“আপনি তো ভীষণ বেয়াদব।”
“তুমি যখন তোমার থেকে আট বছরের বড় একজনকে নির্দ্বিধায় বিয়ের প্রস্তাব দাও, তখন আদব কোথায় থাকে?”
রজনী লাল হয়ে গেল। গম্ভীরভঙ্গীতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার হাতের দিকে। বলল, “থিক আছে। ভালো। আপনি কি জানেন, পৌরাণিক যুগে মেয়েদের হাত ধরলে সেটা বিয়ের সমান ধরা হতো। এজন্যই বিয়ের আরেক নাম পাণিগ্রহণ, ‘পাণি’ মানে হাত। হাত যখন ধরেছেন, ছাড়তে কিন্তু দেবো না।”
এই মেয়ে বলে কি? সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলাম। বললাম, “কতো Female patientএরই তো হাত ধরলাম। সবাইকে কি বিয়ে করতে হবে নাকি?”
“Doctor-patient Relationship অন্যজিনিস। আমি আপনার patient নই।”
“তুমি mentally stable নও, তাই আমার patient। এখন বলো, ভাগছিলে কেনো?”
“সাহস ছিল না। তাই।”
“মানে?”
“ভয় ছিল, হয়ত আমাকে দেখে তুচ্ছহাসি হাসবেন। আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। সেজন্য...”
“আমাকে সেরকম মনে হয়?”
“জানি না। কারো লেখা পড়ে তো তাকে বোঝা যায় না।”
কিচ্ছুক্ষণ পর বললাম, “আমি বিয়ে করব।”
“কবে?”
“উমম, ডেট ফিক্সড হয় নি।”
“পাত্রী ফিক্সড হয়ে গেছে?”
“না, খুঁজছি।”
রজনী মৃদু হাসল। বলল, “এখনো পান নি?”
“বাদ দাও। তুমি ঐ কফিশপে আর যাও নি?”
“গিয়েছিলাম, আপনাকে দেখে আর ঢুকিনি।”
“আরে, আমি তোমার জন্যই নিয়মিত যেতাম।”
“মানে?”
“মানে হল- লেখকরা ভক্ত অনেক পছন্দ করে।”
উত্তর শুনে রজনীকে হতাশ দেখালো। বলল, “ও”।
“কারো জন্য অপেক্ষা করছিলে? Someone special?”
“হুম।”
“কে? জানতে পারি?”
“আপনাকে কেন বলবো?”
“না বলতে ইচ্ছে করলে বলো না। Just curious। যেই মেয়েটি আমার ৪০০তম বউ হতেও রাজি ছিল, তাকে বশ করল এমন কে হতে পারে?”
“কেন? বশীকরণ বিদ্যে কি শুধু আপনারই জানা আছে? অন্য কারো থাকতে পারে না?” বলে তাকাল। তারপর নিজেই বলল, “ফ্রেন্ডদের জন্য ওয়েট করছিলাম ওদের ট্রিট দেব বলে। আজকে আমার বার্থ ডে।”
“ও। হ্যাপি বার্থ ডে। আগে জানলে অবশ্যই গিফট নিয়ে আসতাম। অবশ্য আমার সাথে দেখা হওয়াটাই কি বড় গিফট নয়?”
এবার রজনী এক ভুরু উঁচু করে তাকালো। পাশ দিয়ে একটা পথশিশু গোলাপফুল হাতে হেঁটে যাচ্ছিলো। আমি ডাকলাম, “এই বাবু, ফুল নিবো।”
রজনীকে বেশ পুলকিত মনে হল, তবে সে খুশি চেপে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টাও করছিলো। বললাম, “তোমার ২৫তম বার্থ ডে?”
রজনী মাথা নাড়ল। গুনে গুনে ২৫টা গোলাপ কিনে দিলাম রজনীর হাতে। বললাম, “হ্যাপি বার্থ ডে।”
“থ্যাঙ্ক ইউ। আপনার কাছে থেকে গোলাপ পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।”
“তোমার Address বা cell number দাও।”
“কেন?”
“যদি কাউকে না পাই, তোমার কথা ভেবে দেখবো।”
রজনী মুখ বাঁকা করে বলল, “দিব না আপনাকে নাম্বার।”
“OK. As you wish.”
আমার একটা কার্ড বের করে ধরিয়ে দিলাম ওর হাতে।
৩য় দিন
--------------
মেয়েটির হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, মেয়েটি যোগাযোগ করবে। একমাস কেটে গেল। মেয়েটির দেখা পেলাম না। রজনী কি কার্ডটা ফেলে দিয়েছে? না, তা করবে কেন? হয়ত হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েটিকে তাহলে কোথায় পাব? ভাবতে ভাবতে চায়ের স্টলে বসলাম। চায়ের স্টলটায় তখন গান বাজছে-
‘কি জাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে?...’
গানটা শুনেই মেজাজটা বিগড়ে গেল। চা না খেয়েই উঠে পড়লাম। এমন সময় আমজাদের ফোন এলো।
“হ্যালো”
“ঐ বদ, তোর না আজ আমার আর মুঈদের সাথে বের হবার কথা?”
“ও, আচ্ছা, কখন?”
“তোর কি কিছুই মনে থাকে না আজকাল?”
“Sorry, দোস্ত।”
মুঈদ শেরওয়ানি কেনার জন্য সব কাজিনদের নিয়ে অলরেডি কয়েকবার বের হয়েছে। এখন পর্যন্ত একটাও পছন্দ করতে পারে নি। আজ একটা রফাদফা করতেই হবে। মুঈদ তোর পছন্দকে অনেক importance দেয়। তাড়াতাড়ি আয়। আজকের দিন তোকে ফ্রী রাখতে বলেছিলাম, সেটা মনে আছে?”
“ও, আচ্ছা, ব্যাপার না, ফ্রী করে নিচ্ছি।”
“সেটাও করস নাই। তুই মর।”
আমজাদ ফোন কেটে দিল। আমজাদের কাজিন মুঈদ অনেক ফ্যাশনসচেতন। হাজারটা মেয়ে তার পিছনে ঘুরলেও কাউকেই পাত্তা দিত না। কচি বয়সে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। সেই মেয়েটিকে মনের কথা জানাতে অনেকসময় নিলেও ব্যর্থ হয় নি। এজন্য নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে করেন নিজেকে। আমজাদ অনেক বিরহে পড়ে গেছে। ছোট ছোট ভাইবোনেরা সব বিয়ে করে ফেলছে। তার গার্লফ্রেন্ড আরেকজনকে বিয়ে করবে, বিয়ের কার্ডও পেয়ে গেছে।
আমি সরাসরি মার্কেটে গেলাম। আমজাদ ও মুঈদ অপেক্ষা করছে। অনেকগুলো দোকান ঘুরলাম। মুঈদের কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। বলে বসলাম, “তোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে মনে হয় এই পৃথিবীতে তুই একাই করছিস।”
মুঈদ ব্যাঙ্গ হাসি দিয়ে বলল, “তোমার যেহেতু এখনো করো নি, কি আর বুঝবা? দ্যাখো ভাইয়া, বিয়ে জীবনে একবারি হয়। And I should look handsome by my princess Anika.”
কথাটা শোনার পর আমি ও আমজাদ দুজনেই মুখে তালা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, বিয়ে একটা করতে হবে দেখছি। শুধু শেরওয়ানি কিনতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন কাজে সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না। বৌভাতে on timeএ পৌঁছালাম। আমজাদ দৌড়ের উপর ছিল। বর এসে গেছে। কনে পার্লার থেকে এখনো আসে নি। আমজাদ আমাকে দেখলেই কোন কাজ লাগিয়ে দেবে। দর্শকের একটা সারিতে গিয়ে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। দর্শকের সারিতে চোখ পড়তেই খেয়াল করলাম। আরে সেই মেয়েটি। Coincidence again, পাশের সিট ফাঁকা। গিয়ে বসে পড়লাম পাশের সিটে। রজনী শাড়ী পরে এসেছে। ফিরে তাকাল আমার দিকে। বলল, “কেমন আছেন?”
“ভালো। তুমি?”
“না ফিরেই উত্তর দিলাম।”
“ভালো।”
“কনেপক্ষ না বরপক্ষ?”
“বরপক্ষ। আপনি?”
“আমিও। বর কি হয়?”
“ভাইয়া, আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।”
একটু অবাক হলাম। বললাম, “তো বর তোমার ক্লোজ কেউ না?”
“উহু, অতোটা না।”
“তবে শাড়ী পরে এসেছো যে?”
“শাড়ী পরার অজুহাত পেয়ে গেলাম, তাই।”
“ও”
“বর আপনার কি হয়?”
“ফ্রেন্ডের কাজিন। আমার খুব আদরের ছোট ভাই।”
“ও”
“এতো ভারি মেক-আপ করেছো কেন? বিয়ে তো তোমার না।”
রজনী চোখ তুলে তাকাল। বলল, “বিয়েবাড়িতে সবাই এমন মেক-আপ করেই আসে।”
“তোমার মুখ থেকে যেকোনো সময় পাউডারের চল্টা খুলে পড়বে।”
রজনী এবার পার্স থেকে ছোট আয়না বের করে দেখল নিজের মুখ।
বললাম, “আমার কার্ডটা কি হারিয়ে ফেলেছ না ফেলে দিয়েছ?”
রজনী আয়না পার্সে রেখে বলল, “কোনটাই নয়।”
“তাহলে?”
“রেখে দিয়েছি।”
“Contact করলে না কেন?”
“ইচ্ছে হয় নি। তাই...”
“কেন?”
“জানি না”
“অবশ্যই জানো”
“Signal পাই নি।”
“কিসের signal?”
“Signal of soul. মনে থেকে সাড়া পায় নি। আমার প্রথম দিনের আচরণে আপনি কি ভেবেছেন-জানি না। আপনার আকস্মিক সাক্ষাতে excited হয়ে গেছিলাম। তাই ওরকম অদ্ভুত আচরণ করেছি। Sorry.”
“তোমার সেদিনকার আচরণ অদ্ভুত হলেও খারাপ লাগেনি, মজা পেয়েছিলাম।”
রজনী শুকনোভাবে হাসল। বলল, “বুঝতে পেরেছিলাম, মজা পেয়েছেন। কিন্তু আপনার মজা পাবার জন্য এমন করি নি। আপনি ভেবেছিলেন, আমি আপনার পিছে লেগে থাকব। কিন্তু আমার সাথে সেটা যায় না। আমি আপনাকে ভীষণ পছন্দ করি, এটা সত্যি। কিন্তু সেজন্য... আসলে এসব ক্ষেত্রে Fateকে মানি।”
“Fate?”
“হুম, Fate. যদি দুটো মানুষের আত্মা বা মনের মধ্যে কোন connection থাকে, fate তাদের এক করবেই।”
“রজনী, লাইফটা মুভি না যে fate-dependent হতে হবে।”
“এক একজনের থিওরি অফ লাইফ এক একরকম।”
এমন সময় মধ্যবয়সী এক মহিলা রজনীকে ডাক দিল। রজনী বলল, “আমার মা”। আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম, “রজনী”।
রজনী ঘুরে তাকাল। বললাম, “এরপর থেকে মেক-আপটা একটু কম করো।”
রজনী অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় লোকজন বলতে লাগলো, “কনে এসেছে।”
আমি স্টেজের দিকে গেলাম। মুঈদের কনে আনিকাকে দেখে বুঝতে পারলাম, উপস্থিত সকল পুরুষের বুকে এখন ব্যথা উঠেছে। ভালোই বুঝলাম, শেরওয়ানি কেনার সময় মুঈদ কেন বলছিল, “I should look handsome by my princess Anika.” পিচ্চি পোলা কিভাবে এই মেয়েকে পটিয়েছে- ভাবতেই অবাক লাগলো। Childhood crush বলে কথা।
৪র্থ দিন
-----------
কিছুদিন পর মুঈদের কাছে থেকে রজনীর সব details জানলাম। মুঈদ আরো বলল, “Good option, ভাই”
মুঈদ বলল, “কোন গিফট নিয়ে গিয়ে প্রোপোজ করতে পারো, ভাইয়া।”
“কি গিফট?”
“উম, বড় সাইজের টেডি বিয়ার”
“হুম”
“টেডি বিয়ার মেয়েরা accept না করে পারে না। একটা কাহিনী বলি। আমার এক ফ্রেন্ড এক মেয়েকে লাইক করতো। কিন্তু মেয়েটা পাত্তা দিত না। পরে অনেক আয়োজন করে মেয়েটাকে প্রোপোজের ডিসিশন নিল। অনেকগুলো ফুল, বেলুন ও গাম্বুস সাইজের টেডি বিয়ার নিয়ে গিয়ে প্রোপোজ করল। মেয়েটা as usual refuse করল। কিন্তু বলল, “আমি টেডি বিয়ারটা as a friend রেখে দিলাম, থ্যাংকস।”
শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেল। বললাম, “ধুর, এইটা কিছু হলো?”
রজনীর হোস্টেলের ঠিকানা নিয়ে টেডি ও ফুল নিয়ে গেলাম। হোস্টেলের দারোয়ানকে বললাম ডেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। কিছুক্ষণ পর হোস্টেলের দারোয়ান এসে বলল, “আপা হোস্টেলে নাই। মনে হয়, বাড়ি গেছে।”
হতভম্ব হয়ে গেলাম। বড় টেডি ও ফুল নিয়ে ব্যাক করলাম। রাস্তায় সব লোক হা করে তাকিয়েছিল। নিজেকে পুরোই বেকুব মনে হচ্ছিল। কিছু টোকাই আশপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছিল। ফুলগুলো ওদের হাতে দিলাম। টেডি নিয়ে ঘরে ফিরলাম। আমজাদকে ফোন দিলাম। আমজাদ বলল, “তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, তুই মর”
মনের অবস্থা খারাপ হলেই ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া একটা রুটিন। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই এক এক জায়গায়, কাছাকাছি শুধুমাত্র আমজাদ। আমজাদের সাথেই বের হলাম। বললাম, “দোস্ত, হতাশ লাগে রে।”
“এক কাজ কর।”
“কি?”
“শোন, তোর প্রেম করার আর বয়স নাই-এটা কি বুঝস?”
“হুম, বুঝি।”
“তো তুই বিয়ের প্রোপ্রোজাল দে।”
“তোর কি মনে হয়, আমি টেডি নিয়ে প্রেমের প্রোপোজাল দিতাম?”
“তুই যে বলদ, এটা কয়বার প্রমাণ দিতে চাস?”
“ক্যান?”
“বিয়ের প্রোপোজাল দিবি ফ্যামিলি থেকে ফ্যামিলিতে। বুঝলি?”
“ও, আচ্ছা।”
“যদি রাজি না হয়, insult হবে দোস্ত।”
“হলে হবে। Why should you care?”
“Right, right.”
প্রোপোজাল পাঠাবো পাঠাবো করছি। কিন্তু হঠাৎ সব বন্ধুবান্ধবদের ফোন আসা শুরু করল, বিশেষ করে বিবাহিতদের। ফোনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম। মৌসুমি ফোন করে বলল, “শুনলাম, তুই নাকি বিয়ে করছিস?”
“কে বলছে?”
“আমজাদ।”
“আমার খবর নিচ্ছিস এখন? নিজে তো এক বাচ্চার মাও হয়ে গেছিস। স্বামী-সংসার দ্যাখ। আমার খোঁজ নেওয়া লাগবেনা।”
“বললেই হল? এই শোন, মেয়ে কে? কি করে? কিভাবে পেলি? পটলো কিভাবে?...”
“মা, আমাকে মাফ কর।”
আমজাদ তো আমাকে বিয়ের আগেই বাবা বানিয়ে ছাড়বে-মনে হল।
ফোন ধরতে ধরতে দিন শেষ হবার পথে। মার ফোন আসলো। ভাবলাম, as usual কি খেলাম, কেমন আছি- জানতে চাইবে। তা না, ফোন ধরতেই শুনলাম, “বেয়াদ্দব পোলা, তুই কি পেটের ছেলে?”
“মা, কি-”
“চুপ থাক”
“মা, কি-”
“চুপ, কোন কথা বলবি না। আমরা তোকে কোন কাজ কক্ষনো বাঁধা দিসি? তুই এটা কিভাবে করলি, বাবা?” ওপাশে মা কাঁদছে।
“মা, শোনো-”
“চুপ, বান্দর। গোপনে বিয়ে করলি, একটু জানালিও না।”
“মা, আহা, শোনো”
“মানুষের বাচ্চা এমন হয়?”
“মা, আমি বিয়ে করিনি।”
“অ্যা, সত্যি বাবা?”
“হুম, সত্যি”
“কি শুনলাম?”
“গুজব, গুজব। তোমাকে কে বলেছে?”
“তোর এক বান্ধবী ফোনে জিজ্ঞেস করছিল।”
“ও, আচ্ছা, মা, চিন্তা করো না, তোমাকে না জানিয়ে কিছু করব না।”
একটা unknown নাম্বার স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। ধরলাম,“হ্যালো”।
“হ্যালো, শুনলাম, তুই নাকি বিয়ে করছিস?”
“না, একটা মেয়েকে ভালো লেগেছে।”
“হুম, খুব ভালো, তোর মনের জগত থেকে তাহলে আমি মুক্তি পেলাম?”
“হুম, সে তো কবেই পেয়েছিস?”
“ভালো থাকিস।”বলে কেটে দিলো। এই নাম্বারটাও ওর নাম্বার না। হঠাৎ হঠাৎ সব অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করে হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়া হ্রিদয়-হরণীটি। Irregularly irregular...”
কখনো কারো জন্য কিছু থেমে থাকে না। হয়ত বা বিষণ্ণতা গ্রাস করে কিছু সময়ের জন্য।
আমজাদের ফোন সকাল থেকেই ট্রাই করছি। বদটা ফোন ধরছে না। ইচ্ছে করেই যে গুজব রটিয়েছে- বেশ বোঝা যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে বিরক্ত লাগলেও হঠাৎ নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। ‘হঠাৎ’ ব্যাপারটাকে ভয় লাগলেও ভালবাসি। হঠাৎ কারো হারিয়ে যাওয়া যেমন কষ্টের, হঠাৎ কারো আবির্ভাবও অন্যরকম আনন্দের। নিজের ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন ‘হঠাৎ’ নামটা রাখবো।
আমজাদের ফোন এলো। ওপাশে থেকে বলল, “কি? কেমন লাগে?” বলেই ফোন কেটে দিল। কিছুক্ষণ পর আবার একটি unknown নাম্বার থেকে ফোন এল। বললাম, “হ্যালো”
“হ্যালো, ভালো আছেন?”
“হু, কে বলছেন প্লিজ?”
“আমি রজনী।”
“ও”
“জ্বি”
“ও, তা কি মনে করে?”
“শুনলাম, আপনি নাকি বিয়ে করছেন মানে আপনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
“অ্যা! ও, হ্যা, কেন তোমাকে বললাম না যে পাত্রী খুঁজছি।”
“এত অল্পদিনেই পাত্রী পেয়ে গেলেন মনমতো?”
“হুম, পেয়ে গেছি। এটা জানার জন্যই ফোন করেছো? না অন্য কিছু?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “জ্বি, জানার জন্যই ফোন করেছি।”
“আর কোন উদ্দেশ্য নেই?”
“না। আর কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে?”
“আমার বিয়ে ভাঙ্গার”
“অ্যা, আমি কেন আপনার বিয়ে ভাঙতে যাবো?”
“You know better than me.”
কিছুক্ষণ থেমে বলল, “আচ্ছা, ভালো থাকবেন।”
“ভালো থাকবো মানে? এক্ষুনি রাখছো যে- কিন্তু আমার কথা তো শেষ হয় নি।”
“জ্বি বলেন।”
“আমার best fan সম্পর্কে তো কিছুই জানা হল না। একটু জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। “Someone Special” মুভিটা দেখেছো?”
“না”
“মেয়েরা এই ধরনের মুভি পছন্দ করে। এই মুভিতে একজন baseball player জানতে পারে তার আয়ু মাত্র ২মাস। জীবন অর্থহীন মনে হয় তার কাছে। বারে গিয়ে জীবনে ১মবার মদ খায়, খেয়েই টাল হয়ে পড়ে। সেই বারের waitress থাকে লোকটির পাড়ার একটি মেয়ে, যে ১১বছর বয়স থেকে লোকটিকে পছন্দ করত। মেয়েটি তখন লোকটিকে একটি বাক্সে ভরে, সেই বাক্সটি কাঁধে করে নিয়ে রেখে আসে কাছের একটি হোটেলে। মেয়েটি অনেক কথা বলবে, ভেবেছিল। কিন্তু কিছুই বলতে পারে নি। তারপর আরো অনেক কাহিনী আছে।“
“এই মুভিটির কথাই কেন শোনালেন?”
“জানি না, ইচ্ছে হল।”
“আপনি চাইছেন, আপনি পোড়মাতাল হয়ে পড়ে থাকলে আমি আপনাকে বাক্সতে ভরে তুলে সযত্নে রেখে আসব?”
“সেটা কখন বললাম?”
“তাহলে আপনার এই গল্পটি বলার উদ্দেশ্য কি?”
“সব কিছু-র উদ্দেশ্য থাকে না। বলতে ইচ্ছে হল, বললাম।”
“আপনার কথা শেষ হয়েছে?”
“আরেকটা গল্প বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। শুনবে?”
“হুম”
“একটা মেয়ে...”
এবং ...
বছরদুএক পর। শাড়ি কিনছিলাম আমার সহধর্মিণীর জন্য আমাদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে। সাদা রঙের একটা শাড়ি পছন্দ করলাম। আমজাদ আমার পছন্দ দেখে বলল, "কুতকুত খেলাই তোকে মানায়, সংসার করা না। বউকে সাদা শাড়ি দিতে চাস, বেকুব?"
এরপর আমজাদের পছন্দ করা লালচে খয়েরী রঙের শাড়ি কিনলাম। কাজশেষে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বিকেলে সেলিব্রেট করলাম দিনটি। খাবার বাইরে থেকে আনতেই বাধ্য হয়েছি গিন্নীর হাত বিশেষ ভালো না হওয়ায়। লাল খয়েরী শাড়িতে বেশ মানিয়েছে, ওর পছন্দও হয়েছে। সবাই চলে যাবার পর বলল, "তোমার জন্য আরো কিছু আছে।"
"কি?"
ও ছোট একটা কাঠের বাক্স দিলো আমার হাঁটে। খুলে দেখি টিস্যুপেপারে মোড়া কিছু একটা। টিস্যুটার ভাঁজ খুলতেই দেখি কয়েকটা চুল। মৃদু হাসলাম। বললাম, "তোমাকেও কিছু দেখাতে পারি।"
ও ভুরু নাচালো। আমি মানিব্যাগ খুলে তার থেকে ছোট একটা খাম বের করে দিলাম ওর হাতে। ও খাম থেকে একটা টিস্যুপেপার বের করলো, হাতে লেখা 'Marry Me'। ওর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, আনন্দ চেপে রাখার চেষ্টা আর কি। অভিমানী ভঙ্গিতে বলল, "লেখাটার me অংশে পানি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে।"
ওর গাল আলতো করে টিপে বললাম, "তুমি তো ঘরে রেখে দিয়েছিলে। আমি সবসময় যক্ষের ধনের মতো সাথে নিয়ে নিয়ে ঘুরছি, আলাদা হতে দেই নি। কিন্তু বৃষ্টির উপর কি আমার হাত আছে, বলো?"
----------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:২৭