মনোলীনা,
আমি শত বছর হলো ঘুমাইনা,
কি এক অদ্ভুত রোগে ধরেছে,
আমার এখন সন্ধ্যা রাত্রিতে অস্হিরতা পেয়ে বসে প্রতিদিন।
সূর্য হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় নেমে পড়ি,
হাটতে হাটতে নিয়ন বাতি আর চাঁদের আলোতে মাখামাখি হয়ে যাই।
চৌরাস্তার মোড়ে অনেক মানুষের সাথে ক্যানভাসারদের লেকচার শুনি মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন ।
রাস্তার মানুষকে স্বপ্ন দেখায় তারা খুব সস্তায়,
মাঝে মাঝে ম্যাজিক দেখায় ,
সেই আশায় দাড়িয়ে থাকি।
পুলিশের ভয়ে হঠাৎ পালিয়ে যেতেও দেখি তাদের,
তখন তাদের স্বপ্নও পালিয়ে যায় তাদের রেখে।
তারপর হাটতে হাটতে চলে আসি অফিস পাড়ায়।
মতিঝিলের জীবন্ত অফিসগুলো মরে গেছে ততক্ষনে পূর্নজন্মের অপেক্ষায়।
শাপলা চত্বরে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকি কিছু গায়েবী জলের আশায়।
রাত যতো বাড়তে থাকে-
মানুষের চোখে মুখে ভর করে অচেনা নেশা,
ঘরে ফেরা নেশাতুর মানুষ দেখতে দেখতে আমারও চোখে মুখে ঘোর লেগে যায়।
কোনো কোনোদিন চলে আসি কমলাপুর রেল ষ্টেশনে,
রেলগাড়ির আসা যাওয়া দেখি মধ্য রাত্রি পর্যন্ত।
এক চেনা ঘোরের মধ্যে ডুবে যাই কখন বুঝতেও পারি না।
গভীর রাত্রিতে হাটতে হাটতে
দক্ষিন কমলাপুরের আশি নং
বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকি কিছুক্ষন।
নাইট গার্ড প্রতিদিন আমাকে দেখতে দেখতে পরিচিত হয়ে গেছে,
পাগল মনে করে দুরে সরে থাকে।
তেতালার পুরো ঘর অন্ধকার।
বাড়ীর সবাই গভীর ঘুমে,
তুমিও হয়তো কারো শরীরের সাথে
শরীর মেখে স্বপ্ন দেখছো।
মনোলীনা,
শত বছর ধরে সারারাত পুরো মায়াহীন ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াই টোকাইয়ের মতো।
শুধু ‘তোমাকে আমাকে’ খুঁজি জায়গায় জায়গায়,।
তারপর একসময় দক্ষিন কমলাপুরের আশি নং বাসার সামনেই চলে আসি
শুধু তোমার অন্ধকার ঘর দেখতে।
ক্যানভাসারদের মতো ম্যাজিক দেখাতে পারি নাই তোমাকে,
তাই খুব ভোরে আমার স্বপ্নটা
সেই বাড়ীর দরজায় রেখে পালিয়ে আসি শত বছর ধরে ।
মনোলীনা,
আমি বোধহয় সন্ধ্যা রাত্রির
এই ‘ঘোর লাগা অস্হিরতায়’
একদিন মরে যাবো
না ঘুমোতে ঘুমোতে।
————————-
রশিদ হারুন
২৮/০৯/২০১৯