দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রপক্ষেরা তল্লাশি চালানো শুরু করে নাৎসিদের দখল করা জায়গাগুলো। Extermination camp ছিল এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এখানে ইহুদিদের ধরে নিয়ে এসে গ্যাস চেম্বারের ভিতর ঢুকিয়ে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস পুরে মেরে ফেলা হত। মেরে ফেলার আগে তাদের উলঙ্গ করানো হত আর জামাকাঁপড়-জুতো একজায়গায় রাখা হত। যুদ্ধের পর মিত্রপক্ষরা সেইসব জায়গায় গিয়ে দেখল স্তূপের পর স্তূপ। তার মধ্যে অনেক ১৫-২০ ফিট উঁচু স্তূপে ছিল শুধু ছোটো ছোটো বাচ্চাদের জুতো- কাপড় । নিচে একটা ছবি দিলাম, ভাল করে দেখুন। ইতিহাস এটাকে জানে Holocaust বলে। মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে ১.১ কোটি মানুষের প্রাণ।
এইবার চলে আসি আরও আগে। যুদ্ধ শুরুর আগে। বর্তমান অস্ট্রিয়া, ১৯৩৮ সাল। ভিয়েনার অনেক বাড়ির গেটে গেটে রঙ করা। লোকজন ভীর করে দেখতো আর হাসিঠাট্টা করতো। বাড়িগুলোতে রঙ করে একটা কথাই লেখা হত Jüdin (মানে ইহুদি)। Holocaust এ যা হয়েছিল তৎকালীন তা জার্মানির নাগরিকদের একটা বড় অংশ সমর্থন করতো। আজও সমর্থকের অভাব নেই, তবে সেটা জার্মানে না; আমাদের বঙ্গদেশে
২০০১ এর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপে একটা রোগ বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। Islamophobia । মাত্র এক বছরের মধ্যে ধর্মীয় রেশ ধরে বৈষম্য, নিপীড়ন বেড়ে যায় প্রায় ৪ গুন। মিডিয়াগুলোও ছিল তিলকে তৈল বানাতে পটু। সরকার যা চেয়েছিল তার জন্য জনগণের সমর্থন পেতেও সমস্যা হয়নি। ফলশ্রুতিতে আসে যুদ্ধ। বাগদাদের বাতাসে তখন থেকেই বারুদের গন্ধ, আজও আকাশ ধূসর রঙ আর কংক্রিডের দেয়ালে রক্তের ছাপ।
হিটলার, বুশ, আওরঙ্গজেব, রাজা ফার্ডিন্যাল এরা কখনই একা ছিল না। তাদের সাথে ছিল উষ্ণ রক্তের বিশাল সমর্থক। যদি তাদের একটা বিতর্ক রুমে রাখা হয়, তারা দুইকান বন্ধ করে একই কথা বারবার বলবে। "অমুক জায়গায় আমাদের জাত ভাইয়ের প্রতি যা হয়েছে, তার থেকে আমরা হাজারগুন ভাল"। যুক্তি পাল্টাযুক্তির শেষ লাইন এটাই। কেউ স্পেন নিয়ে আসবে, কেউবা জার্মানি, কেউ জেরুজালেম দিয়ে আসবে, কেউবা দিল্লি। দামাস্কাস, রাখাইন রাজ্য, কেরেলা, প্যারিস,গ্রানাডা, বাবরি মসজিদ আরও অনেক নাম।
সমস্যার গোঁরা আসলে ভিন্ন। পৃথিবীর সব সমাজই ভিন্নমতের মানুষের সমন্বয়ে তৈরি। সমস্যা হচ্ছে আমাদের কৌতূহলি মন। আমরা ছোটোবেলা থেকে ভিন্নমতের মানুষের দেখি, আর ভাবি "এরা এমন কেন? " তাদের অস্তিত্বই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। ঘর থেকেও আমরা একই উত্তর পাই। দ্বিতীয় প্রশ্নটি করার স্পর্ধাও কখনো আসে না, আসতেও দেয়া হয় না। নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে সহানুভূতি দিয়ে চিন্তা করার মত বিলাসিতা ও সময় আমাদের সারাজীবনেও আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯