বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা চলাকালীন সময়ে বিশ্বের এক নাম্বার অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের স্ত্রী ইভ টিজিং এর স্বীকার হয়েছেন। খবরে প্রকাশ , বিসিবি এবং সাকিব পরে যুবকদের উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়।
বাংলাদেশে নানা সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশ। তারমধ্যে ইভ টিজিং একটি যার চুড়ান্ত রুপ হচ্ছে ধর্ষণ। এই ইভ টিজিং এর স্বীকার হয়ে অনেক জীবন অকালে ঝরে গেছে, অনেক স্বপ্ন হারিয়ে গেছে।
কিন্তু শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের মত একটি জায়গায় দেশের অন্যতম সেরা এক ব্যক্তির স্ত্রী এইরকম ইভ টিজিং এর স্বীকার আমাদের মানষিক দৈন্যতাকেই প্রকাশ করে।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের সমাজের কতিপয় শিক্ষিত পাপী যারা নিজেদের অনলাইন একটিভিস্ট বলে পরিচয় দেন, তারা এই ব্যাপারটিকে নিন্দা না করে বরং এটা শিশিরের দোষ এই কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমাদের একজন তথাকতি ইসলামি স্কালার তাঁর পেইজের মাধ্যমে সারাক্ষনই এটা নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন।
তারা বলছেন, শিশিরের পোশাক অশালীন, তাই তাকে ইভ টিজিং করা যেতেই পারে। সেই সাথে তারা শিশিরের বিভিন্ন পারিবারিক প্রোগ্রামের ছবি দিয়ে এটা প্রমাণ করার ট্রাই করা হচ্ছে যে, শিশির একটা নষ্টা-ভ্রষ্টা নারী।
কিন্তু ব্যাপারগুলিকে আসলেই তাই। চলুন একটু ভেবে দেখি।
♟♟♟♟
প্রথম কথাঃ
উপরের যে ছবিটি দেখছেন, তা থেকে এটা শিউর যে যখন আপনি একজন নারীর অস্তিত দেখবেন, তখন আপনি সে কি পোশাক পড়েছে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে পারবেন না।
কোরআন শরীফেও আল্লাহ্ তালা বলেন যে,
“মুমিনদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটাই তাদের জন্যে উত্তম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবহিত”। (২৪,সুরা নূরঃ ৩০)
কিংবা অন্য একটি হাদিসের থেকে কোট করা যায়,হযরত বুরাইদা ইবনে আল-হাসিব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছেঃ রাসুল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেনঃ
“হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়”। (সুনানে আবু দাঊদ, হাদীসঃ ২১৪৯/ অধ্যায়-১২, হাদীস-১০৪)
উপরের রেফারেন্স থেকে এই ব্যাপারটি শিউর যে ইসলামের দোহাই দিয়ে কিংবা স্বল্প পোশাকের দোহাই দিয়ে আপনি আর যাই করেন, জেহাদি জোশে ইভ টিজিং করতে পারেন না। আপনাকে সবার আগে যা করতে হবে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করতে হবে।
♟♟♟♟
দ্বিতীয় কথাঃ
ইসলাম বলে, আপনি যদি কারো একটি দোষ লুকিয়ে রাখেন তবে হাশরের দিন আল্লাহও আপনার দোষ লুকিয়ে রাখবেন। কিন্তু আপনি যখন মেয়েটি পারিবারিক প্রোগ্রামে কি কি করছেন, তা খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ে আসছেন তখন তা গীবতের পর্যায়ে পরে যাচ্ছে।
গীবত সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)
আপনি আর যাই করেন, এইসব ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে প্রকাশ করে ইভ টিজিংকে বৈধতা দিতে পারেন না।
♟♟♟♟
তৃতীয় কথাঃ
সাত কিংবা আটটা গুন্ডা যখন ইভ টিজিং করলো, আপনি যখন এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেন না, তখন কিন্তু আপনি নিজেই একটি পাপ করলেন।
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন :
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো অপকর্ম দেখে তা হলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে, তা দিন না পারে তা হলে মুখ দিয়ে প্রতিহত করবে, আর তাও যদি না পারে তা হলে অন্তত মনে মনে ঘৃণা করবে। এটা হলো ঈমানের দুর্বলতম স্তর’ [মুসলিম শরিফ]।
কাজেই আপনি যে ঈমানী জোরে শিশিরকে গালাগালি করতে গেছেন, আপনার সেই ঈমানটিই কিন্তু পোকায় খেয়ে ফেলেছে।
♟♟♟♟
চতুর্থ কথাঃ
কিছুদিন আগেও আইপিএল ফাইনাল প্রোগ্রামে ইউসুফ পাঠান তাঁর স্ত্রীকে বোকরা পরিয়ে নিয়ে এসেছে কিন্তু সাকিব কেন একজন মুসলমান হিসেবে এটা করেনি তা নিয়ে তাঁর বংশ উদ্ধার করেছেন।
মানুষ তাঁর কর্ম অনুযায়ী আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবে। সৎকর্ম করার জন্য আমরা উপদেশ দিতে পারি কিন্তু কারো বংশ উদ্ধারের অধিকার আমাদের নেই।
বিদায় হজ্বের ভাষনে আমার নবী (সা) বলেন,
“ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। এতদ্বিষয়ে সীমা লঙ্ঘনের কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। মনে রেখো! তোমাদের সবাইকেই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। তাঁর কাছে এসব কথার জবাবদিহি করতে হবে।
♟♟♟♟
শেষের আগেঃ
মর্ডান ভাইয়েরা মেয়েদের ইনবক্সে লুলামি, নামাজের সময় ফেইসবুকে ইসলাম সেবা, শিশির নিন্দা বাদ দিয়ে ভাইজানরা নিজের পরিবারকে আগে ঠিক করেন। আপনার বোন কিংবা মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কিংবা কি করছে তাঁর খবর রাখুন। হিজাবী গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরার আগে একবার ভাবুন।
প্রিয় একটিভিস্ট দাদারা,
জানি সাকিব অনেক বড় সেলিব্রেটি, তাকে খুচাইলে হিট বাড়ে। কিন্তু ভাই মনে রাখতে হবে, সব ব্যাপার নিয়ে খুচাইতে হয় না। আর খুচাইলেও বেশি খুচাইতে হয় না, কারন বেশি খুচাইলে গা হয়ে যায়। সাকিবের মত মানুষ সব সময় জন্ম নেয় না। সব দেশে জন্ম নেয় না। বাংলাদেশকে অল্প যে কয়েকজন মানুষ বিশ্বে পরিচিত করেছে, সাকিব তাদের অন্যতম। আমরা কি মানীর মান দিতে জানব না? অকৃতজ্ঞ বাংলাদেশী হয়েই থাকব।
♟♟♟♟
শেষ কথাঃ
ইসলাম একটি সুন্দর, শ্বাশত ও পরিপুর্ণ জীবন-ব্যবস্থা। কিন্তু আজকে ইসলামের পিছনে অনেক ফেউ লেগে আছে। তাই তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিবেন না। একজন মুখতার মাই কিন্তু আমাদের কারনেই সমাজে সৃষ্টি হয়।
সব শেষে একটী ছবি।
এই বাঁধনকেও সেইম দোহাই দিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা ২০০০ সালে থার্টি ফার্স্টের রাতে এই অবস্থা করেছিলো । তাঁর পোশাক উগ্র। মানলাম তাঁর পোশাক উগ্র ছিলো, কিন্তু তাদের এই উগ্রতা কি বাঁধনের পোশাকের উগ্রতা থেকে খারাপ না ভালো?
এই ছবিটি দেখে কি বিবেক জাগে না?? নিজেকে কি এই পশুদের মাঝে দেখতে ইচ্ছা করে?
ভাবুন একবার আপনার বোন এই অবস্থায় আছে, তখন??
ভাই প্লিজ এইবার ক্ষমা করেন, থামেন। সাকিবকে শান্তিতে খেলেতে দেন। তাঁর বউ নিয়ে সে থাকুক। তাদের জীবন, তাদের পাপ-পুন্যের হিসাব তারা দিবে আপনি না। আপনার দ্বায়িত্ব আপনি অনেক পালন করেছেন।
ধন্যবাদ।