দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।
১৭ মার্চ ২০১২। স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৩৫ মিনিট। বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিট।
এটিসি টাওয়ারের অনুমতি না পাওয়ার এমিরেটস এর ফ্লাইট দুবাই এর আকাশে প্রায় ৩৫ মিনিট চক্কর খাওয়ার পর রানওয়ে স্পর্শ করল। ট্রানজিট ৮ ঘন্টা। ইমিগ্রেশন পার হয়ে ঘুম ঘুম চোখে এমিরেটস এর হেলপ ডেস্কের খোঁজে এগোলাম। উদ্দেশ্য ফুড কুপন সংগ্রহ করে কিছু খেয়ে নিয়ে একটা ঘুম দেয়া। কুপনের পেছনে ৩টা ফুড কোর্টের নাম লেখা। কাছের ফুডকোর্টে ঢুকে খাবার নিয়ে কোনার একটা টেবিল দখল করলাম। ইতিমধ্যে আসার পথে এয়ারপোর্টের ইনফো সেন্টার থেকে ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কের আইডি আর পাসওয়ার্ড নিয়ে এসেছি। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে ল্যাপটপ অন করলাম। নেটওয়ার্কে যুক্ত না হয়েই খাবারের দিকে মনোসংযোগ করলাম। এ সময় আমার পাশের টেবিলে দুজন ইনডিয়ান এসে বসল। একজন মনে হয় শিখ (হরভজন সিং এর মত পাগড়ি মাথায়)। দুজনের বয়সই ৩০ এর কাছাকাছি। বেশ চড়া স্বরে নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। আমি কোন পাত্তা না দিয়ে আবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলাম।
চিকেন বার্গারে বিশাল কামড় বসিয়েছি এমন সময় কান খাড়া হয়ে গেল আমার। ইনডিয়ার একটা কথা কানে গেছে। ইনডিয়ান কিংবা পাকিস্তানীরা বাংলাদেশকে "বাঙালাদেশ" বা ওই জাতীয় কেমন যেন একটা উচ্চারণ করে। এই উচ্চারনই আমার মনোযোগ আকর্ষনের কারন। যাহোক বাংলাদেশ কে নিয়ে দুজন ইনডিয়ানের এত আগ্রহ জানার জন্য কান পাতলাম। যা শুনলাম নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলাম না!! বাংলাদেশ নাকি আজ ইনডিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে!!!
খাওয়া-দাওয়া লাঠে উঠল আমার। তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ খুলেই সামুতে আর ক্রিকইনফোতে ঢুকলাম। আরে তাইতো!!
দেশেই শচীনের শততম সেঞ্চুরী দেখে এসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত খেলা দেখতে পারিনি। ভেবেছিলাম ৩০০-৩৫০ রান হবে এবং বাংলাদেশ মোটামুটি এক-দেড়শ রানে হারবে। খেলার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। বিদেশে বসে দেশের জয়ের খবর শুনে যে কি আনন্দ লাগল তা বোঝানো মুশকিল। ইনডিয়ান দুইটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিলাম নিজের অজান্তেই। তারাও আমার দিকে চেয়ে হাসল। মনে হয় আমাকেও ইনডিয়ান ভেবেছে। হাসি দিয়ে তাদের দুঃখের সাথী (!) হলাম।
আমরা বাঙালিরা বিদেশে বা এয়ারপোর্টে অনেক সময় নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করি। অথচ আজ মনে হচ্ছে যেচে গিয়ে কাউকে বলি, আমি বাংলাদেশি এবং আমরা আজ ইনডিয়াকে হারিয়ে দিয়েছি!! এ আনন্দ রাখি কোথায়!