somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য: ভবিষ্যত বাণী

০৯ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে। ভবিষ্যতে ঘটবে এমন একটা ঘটনা কেউ তুরুকের কানে খনা গলায় বলে দিচ্ছে। পরে দেখা যাচ্ছে সেটা সত্যিই ঘটছে।
এই যেমন কয়েক দিন আগে কানে কানে কেউ বলল, "কাঁল আঁক্কেল সেঁলামি দিঁতে হঁবে।"
তার পরের দিন আক্কেল দাঁতের এমন ব্যথা উঠল যে সত্যিই আক্কেল সেলামি দিতে হল ডেন্টিস্টকে!
.
রাতে খাচ্ছে এমন সময় তুরুক শুনতে পেল, "কাঁল সঁন্ধেবেলায় ভূঁমিকম্প হঁবে।"
ভূমিকম্প! তুরুক খাওয়া থামিয়ে বাবা-মাকে বলল, "কাল সন্ধেবেলায় তোমরা ঘরে থেকো।"
মা বলল, "কেন রে? কাল কী হবে সন্ধেবেলায়?"
তুরুক বলবে না বলবে না করে বলেই দিল, "কাল সন্ধেবেলায় ভূমিকম্প হতে পারে। তবে কাউকে কিছু বোলো না।"
.
তুরুকের বাবা যথেষ্ঠ ধনী। নানান ব্যবসা। তুরুক কিছু না করে সারাদিন বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, এটা খুবই অপছন্দ তাঁর। কিন্তু ছেলে বড় আদরের, তাই মুখে কিছুই বলতে পারেন না।
.
পরদিন সন্ধেবেলায় তাদের বাড়িতে এলেন এক দুসর্ম্পকের মামা। তাঁর বিশাল চেহারা। চা খেয়ে উঠতে গিয়ে দড়াম করে পড়লেন। ঘরে যেন ভূমিকম্প হল। তুরুক, তুরুকের বাবা সবাই মিলে তাঁকে বহুকষ্টে তুললেন। তারপর হাঁফাতে হাঁফাতে তুরুকের বাবা বললেন, "ঠিকই বলেছিলি তুরুক। ভূমিকম্পই হল বটে!"
.
তুরুকের খুড়তুতো দাদা-বউদি তাদের বাড়িতে বেড়াতে এলেন।
মা গুপ্ত কথা ফাঁস করে দিল, "তুরুক এখন আগে থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারে।"
এইসময় তুরুকের কানে ভেসে এল সেই খনা স্বর, "তোঁর এঁই দাঁদা-বঁউদির নাঁম ইঁতিহাঁসে লেঁখা থাঁকবে।"
তুরুক বলল, "আচ্ছা রাঙাদা আজ একটা কথা বলি, তোমাদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। ব্যাস কীভাবে, কেন এর বেশি আর কিছু বলব না।"
দাদা-বউদি যথারীতি লাফিয়ে উঠলেন।
তাঁদের এক মাত্র ছেলে মিতুল এখন নামী স্কুলে কেজিতে পড়ছে। নিশ্চই সে বিশাল কিছু হবে আর বাবা-মা হিসেবে তাঁদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। খুব খুশি হয়ে তাঁরা চলে গেলেন।
.
দুদিন পরেই বউদির ফোন। তুরুককে বললেন, "তোর ভবিষ্যদ্বাণী একদম পারফেক্ট। আজ মিতুল ওর হিস্ট্রিবুকে আমাদের নাম লিখেছে। স্কুলে টিচারের কাছে খুব বকা খেয়েছে। আমিও ক-ঘা দিয়েছি। তারপর মনে পড়ল, তুইই তো বলেছিলি ইতিহাসে আমাদের নাম লেখা থাকবে।"
.
এইভাবেই এক একটা ভবিষ্যতের কথা তার কানে কেউ বলে দেয়।
তুরুকের প্রেমিকা তিস্তা এসব শুনে বলে, "এসব তোমার মনের ভুল। নিজেই ভাবো এইসব, আর নিজেই শুনতে পাও।"
মা বাবাকে বলে, "ওর ঘাড়ে ভূত চাপেনি তো?"
বাবা বলেন, "চাপলে চাপবে। তাতে খারাপ তো কিছু হয়নি!"
.
পরদিন রাত্রে তুরুকের কানে আবার সেই খনা কন্ঠ বলে উঠল, "কাঁল তোঁর বাঁবা পঁটল তুঁলবে।"
চমকে উঠল তুরুক। কাল বাবা মারা যাবে? তার বাবা!
ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল তুরুকের। কিন্তু এ কথা তো বাবাকে বলা যাবে না! মাকেও না। তাহলে কী করবে সে? অ্যাক্সিডেন্ট ছাড়া আর কীভাবে বাবার মৃত্যু হতে পারে! সে রকম অসুখ বিসুখ বাবার নেই। সুগার নেই প্রেসার নেই। একমাত্র দুর্ঘটনাতেই হুট করে মৃত্যু সম্ভব। তাই কাল বাবার বাইরে যাওয়া আটকাতে হবে।
.
রাতে খাবার টেবিলেই বাবাকে বলল, "বাবা তুমি কাল বেরিয়ো না।"
বাবা খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে বলল, "কেন? আমার কাল প্রচুর কাজ আছে।"
মা বললেন, "তুরুক যখন বলছে নিশ্চই কোনও কারণ আছে। দরকার নেই কাল বেরোনোর।"
বাবা রাজি হলেন।
.
সারাটা দিন দমবন্ধ করে কাটল তুরুকের। এই ভবিষ্যদবাণীটা যেন ভুল হয়।
কিন্তু ঠিক বিকেলবেলায় মিলে গেল ভবিষ্যদ্বাণী।
.
বিকেলে তুরুক দেখল বাবা হাতে করে চারটে পটল নিয়ে হাজির। বললেন, "তোর মায়ের লাগানো গাছের পটল। তুলে নিয়ে এলাম। আজ ভাজা খাব।"
তুরুক হাঁ করে তাকিয়ে রইল!

(বাসু দা লিখলেন)

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×