somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : তিলেখচ্চর !

২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'তিলেখচ্চর' ঠিক ওর উপযুক্ত বিশেষণ নয়, তিলেখচ্চরের সুপারলেটিভ ডিগ্রী
যদি কিছু থাকে তবে সেটাই ছিলো প্রদীপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তুখোড় মেধার
অধিকারী প্রদীপ ছিলো আমার স্কুলের সহপাঠী। কলেজেও দুবছর একসাথে পড়েছি।
তারপর ও মেডিক্যাল পড়তে যাওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আবার যোগাযোগ
হোলো আমি কোলকাতায় এসে একটা আস্তানা কিনে একটু গুছিয়ে বসার পর। তা সে
প্রায় বছর পঁচিশেক আগের কথা। আমার বাড়ি থেকে দুটো বাস স্টপ পরেই ওর
চেম্বার। আরও দু জায়গায় চেম্বারে বসে। জমাটি প্র্যাকটিস। দেখা করলাম
একদিন, বাড়িতেও গেছিলাম এক রবিবারে। সুখের সংসার।
একদিন বিকেলে ওর কাছে যেতে হোলো ফ্ল্যাটের এক মাসিমাকে নিয়ে। মাসিমা
অবিবাহিত ছোট ছেলের সঙ্গে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। খুবই মিশুকে
ভালো মানুষ ছিলেন উনি। খাস বাঙাল ভাষায় সর্বদা কথা বলতেন। খুব ভালো
রান্না জানতেন। আমার স্ত্রীকে উনি অনেক রান্না শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরবার পর ফ্ল্যাটের দারোয়ান আমাকে বললো মাসিমার
কাছে একটু যেতে। গিয়ে দেখি উনি সমানে হেঁচকি তুলছেন দুপুর থেকে। কিছুতেই
থামছেনা। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে, খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। ওনার ছেলে ক'দিনের
জন্য কোথাও ট্যুরে গেছে। আমিই ওনাকে নিয়ে প্রদীপের কাছে গেলাম। চেম্বারে
অনেক রুগীর ভিড়, কিন্তু আমি বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে এক পেশেন্ট বেরোবার
পরে ওনাকে নিয়ে প্রদীপের চেম্বারে ঢুকলাম।
সব শুনে প্রদীপ জিজ্ঞাসা করলো - "তোর আপন মাসিমা?"
- "না, ফ্ল্যাটতুতো মাসিমা।"
- "ঠিক আছে। মাসিমা আপনি ওই বেডে একটু শুয়ে পরুন।"
মিনিট দুয়েক বুকে পিঠে চোঙ্গা লাগিয়ে আর পেট টিপে একটু দেখে ও গম্ভীর
ভাবে বললো - "মাসিমা, আপনিতো দেখছি দু মাসের গর্ভবতী।" এই বলে ও আমার
দিকে আড়চোখে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা টেনে দিয়ে কোথায়
চলে গেলো।
আমি হতভম্ব ! মাসিমারও কথাটা হৃদয়ঙ্গম করতে দু চার সেকেন্ড সময় লাগলো।
তারপর তিড়িং করে উঠে বেডে বসলেন আর ....
- "কি কইলি তুই আবাগির ব্যাটা, বেজন্মার জাত? আমি গভ্যবতী? আমি
গব্ববতী হইলে তুইও গব্ববতী, তোর বাপও গব্ববতী। আমার তিন কুড়ির উপরে বয়স,
আমার বড় মাইয়ার ঘরের নাতনির বাচ্চা হইবো দুই মাস বাদে আর তুই কস কিনা আমি
গব্ববতী!! আমার সোয়ামী গত হইছে সাত বচ্ছর, আমি সাত্বিক বেধবা বামনী, তিনবেলা পূজাপাঠ না কইরা আমি জলস্পস্য পয্যন্ত করিনা আর তুই কস কিনা আমি
গভ্যবতী!!!"
আমি প্রমাদ গুনলাম। মাসিমা হেঁচকি তোলা দুরস্থান, শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার কথা পর্যন্ত ভুলে গেছেন, অনর্গল লাভাস্রোত নির্গত হচ্ছে জ্বালামুখ দিয়ে,
চোখমুখ লাল। প্রদীপই বা এটা কি ডায়াগনোসিস করলো? গেলোই বা কোথায়?
মাসিমাকে বলতে গেলাম - "মাসিমা একটু শান্ত হন, দেখুন..."
বন্দুকের নল এবার আমার দিকে ঘুরলো। - "তুই চুপ কর ছ্যামড়া। এইডা কোন
কুলাঙ্গারের কাছে আমার লইয়া আইছস? কৈর থন ডাগদারী শিখছে এই উজবুগে?
জম্মের আগেই এইডারে গভ্যপাত করায় নাই ক্যান হ্যার বাপ মায়ে?"
বেগতিক দেখে আমি বাইরে গিয়ে দেখি প্রদীপ পরের পেশেন্টের সিম্পটম লিখছে ভিজিটরস রুমে বসে। আমি কাছে গিয়ে বললাম - "প্রদীপ এটা তুই কি বললি বলতো?"
মুখ না তুলে লিখতে লিখতেই প্রদীপ জিজ্ঞাসা করলো - "এখনো কি উনি হেঁচকি তুলছেন?"
আমি সত্যি কথাই বললাম - "না, হেঁচকি দূরে থাক, তোর চোদ্দ গুষ্টি ছাড়া উনি
আর কিছুই তুলছেন না এখন।"
- "তাইলে তুই ওনাকে নিয়ে ওপাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাড়ি চলে যা। আমাকে যেন
দেখতে না পায়।"
( সংগৃহীত )
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×