somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : পর্দা ফাঁস!!

২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসখানেক হলো মলিনা দেবী ছেলে তমালের বিয়ে দিয়েছেন পাশের গ্রামের ওনার দূর সম্পর্কের বোনের ননদের মেয়ে পিউয়ের সাথে । পিউ ফর্সা না হলেও একটা আলগা শ্রী আছে । মাথায় মেঘের মত একঢাল মাজা পর্যন্ত ঘন কালো চুল । চোখগুলো টানাটানা সুন্দর ।

শাশুড়ি মলিনা দেবী একটু সেকেলে হলেও বৌমাকে ভালোবাসেন । পিউও নতুন পরিবেশে একটু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে । আগেকার মত গ্রামে আর ফাঁকা ফাঁকা বাড়ি নেই । মফস্বল হয়ে উঠেছে । খুব গা ঘেঁষে না হলেও কাছাকাছি বাড়ি । শুধু ওদের দু'টো বেডরুমের সামনেই রাঙা কাকিমারা থাকে । দুই ঘর থেকে ওবাড়ির বারান্দাটা স্পষ্ট দেখা যায় । মাঝে মাঝে মলিনা দেবী রাঙার সঙ্গে গল্পও করেন অবসরে ।

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পিউ নিজের ঘরে গিয়ে সবে ফ্যান চালিয়ে একটু বসেছে অমনি রাঙাকাকিমা বারান্দা থেকে জিজ্ঞেস করলেন , " হ্যাঁগা বৌমা, রান্না হলো ? তা কি রান্না করলে গা ? "

পিউ একটু সোজা হয়ে বসে --- " আমি রান্না করিনি কাকিমা , মা করেছেন , আমি একটু হাতে হাতে সাহায্য করে দিয়েছি । " দু'চার কথা বলে স্নান করবে বলে ঘর থেকে এসে ডাইনিং রুমে বসলো ।

দু'তিনদিন পর পিউ স্নান করে " আমার মতো সুখী কে আছে, আয় সখী আয় আমার কাছে " গান গাইতে গাইতে চুল আঁচড়াতে লাগলো।

রাঙা কাকিমা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলে " হ্যাঁগা , ও বৌমা ! তোমার চুলগুলো কি সুন্দর গো , কি তেল দাও চুলে , দেখে মনে জুড়ায় যায় । আমার মেয়েটাকেও মাখাতুম ।"

পিউ বললো, " টাটা নিহার তেল কাকিমা " ।বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো বিরক্তি সহকারে ।

জানলা খুলে রাখলেই এই হয়েছে এক সমস্যা । রাঙা কাকিমা দেখলেই হলো , হাজারটা প্রশ্ন ---- ।

রাতে তমালের বুকের ওপর মাথা দিয়ে পিউ আদুরে গলায় বলল, "কিগো শুনছো!একটা কথা বলবো রাখবে?"

তমাল পিউকে জড়িয়ে ধরে বললো, " কি কথা ডার্লিং , তোমার কথা তো আমাকে শুনতেই হবে সোনা ।"

পিউ , তমালের বুকের ওপর বিলি কাটতে কাটতে বললো, " বলছি কি আমাদের বাড়ির জানলা দরজাগুলোতে পর্দা দিলে কেমন হয় গো ! এই ঘরের জানলা খোলার উপায় নেই , সারাক্ষন রাঙাকাকিমা নজরদারী করে কি করছি"।

তমাল একটু ঢোক গিলে বললো, "সেতো বুঝলাম । কিন্তু জানোই তো , মা পর্দা দেওয়া পছন্দ করে না , দম বন্ধ হয়ে যায় নাকি " !

পিউ বললো " তুমি একটু বুঝিয়ে বলেই দেখো না প্লিজ" !

তমাল আরো নিবিড়ভাবে পিউকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ঠিক আছে, কালকে দেখছি কি করা যায় । এখন একটু ------" লাইটটা অফ করে দিলো ।

পরের দিন রবিবার । তমাল ব্রেকফাস্ট করতে করতে মাকে বললো, " মা বলছিলাম , আমাদের বাড়ির জানলা দরজাগুলোতে পর্দা দিলে কেমন হয় । এখন কি সুন্দর সুন্দর রেডিমেড পর্দা পাওয়া যায় ! দেখতেও সুন্দর লাগবে আর বাইরে থেকে ঘরের মধ্যেও কেউ দেখতে পাবে না "।

মলিনা দেবী শুনেই তরাং করে চেয়ার থেকে উঠে বললো, " না , না ওসব পর্দা ফর্দা দিতে হবে না । ঘর বদ্ধ হয়ে যাবে , আলো বাতাস খেলবে না । আমার দম বন্ধ হয়ে আসে । "

" আহা, তা কেন ! আসলে জানলা খোলা থাকলেই রাঙা কাকিমাদের বারান্দা থেকে সব দেখা যায় । ঠিক আছে তাহলে অন্তত আমার ঘরের জানলাগুলোতে দেই । " তমাল বলে উঠলো ।

পিউ চুপ করে রান্নাঘরের দরজা ধরে শুনছে । শাশুড়ি রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলে উঠলো, " ও, একমাস বিয়ে হতে না হতেই আমার তোমার শিখিয়েছো ছেলেটাকে ! "

তমাল বলে উঠলো, " প্লিজ মা, একটু বোঝার চেষ্টা করো । আগে বাড়ির পাশে বাড়ি ছিল না , কিন্তু এখন তো সব গায়ে গায়ে বাড়ি , একটু ফ্রী ভাবে ঘরে ওঠাবসা যায় না "।

মলিনা দেবী একটু নরম হয়ে বলল, " ঠিক আছে। তোমাদের ঘরটাতেই শুধু দাও , আর কোথাও দেবে না " ।

পিউয়ের তাতেই শান্তি । তমাল পরের দিন খুব সুন্দর সুন্দর পর্দা এনে দিলো ।

মলিনাদেবীর হাই সুগার , তাই মিষ্টি খাওয়া বারণ । কিন্তু খুব ভালোবাসেন । তমালও মায়ের সুগার ধরা পড়ার পর থেকে প্রয়োজন না হলে মিষ্টি আনে না , মা যদি খায় সেই ভয়ে । মলিনাদেবীও ছেলেকে সাহস পান না বলতে । নিজেও বোঝেন , সুগার বাড়লে নিজের ক্ষতি ।

বেশ কয়েকদিন বাদে তমাল ওর শ্বশুর শাশুড়ি আসবে বলে বেশ কয়েকরকম মিষ্টি এনে রেখেছে আগেই । ছুটির দিন দুপুরবেলায় তমাল আর পিউ নিজেদের ঘরে একটু শুয়েছে । মলিনা দেবী ফ্রিজ খুলে প্লেটে দু'টো মিষ্টি নিয়ে ঘরে খাটে গিয়ে বসেছে একটু আয়েশ করে খাবে বলে ।

বারান্দা থেকে অমনি রাঙা কাকিমা বলে উঠলো, " ও দিদি ! তুমি মিষ্টি খাচ্ছো ! তোমার না সুগার ! খেওনা গো দিদি , জানি খেতে সবার ইচ্ছে করে কিন্তু কি করবে বলো , শরীরটা তো বুঝতে হবে " ।

মলিনাদেবী একটু লজ্জা পেয়ে বললেন, " না গো , এটা সুগার ফ্রী মিষ্টি । ছেলে আমার জন্য আলাদা করে এনেছে। " বলেই ডাইনিং রুমে তাড়াতাড়ি চলে এলো । ওখানে বসেই মিষ্টিগুলো খেয়ে নিলো তাড়াতাড়ি । ছেলে দেখতে পেলেই চেঁচাবে সেই ভয়ে । রাগও হচ্ছে মনে মনে ওই রাঙার ওপর । সারাক্ষন কি চোখ দিয়ে বসে থাকতে হয় এদিকে , কিছু করার জো নেই ।

সন্ধ্যার পর পিউয়ের মা বাবা এলেন । হৈ হৈ করে কেটে গেলো দু'দিন । ওরা চলে গেলেন । পরদিন তমালও অফিস বেরিয়ে গেলো । শাশুড়ি বৌমা দু'জনে টিফিন নিয়ে বসেছে । মলিনা দেবী একটু আমতা আমতা করে বললো, " বৌমা , তোমার ঘরের জানলায় যেমন পর্দা দিয়েছো , আমার ঘরের জন্যও একটু এনে দিতে বলো তমালকে ।"

পিউকে রাঙা কাকিমা কোন ফাঁকে ঠিক বলে দিয়েছে । পিউ বুঝতে না দিয়ে মুচকি হেসে বললো, " কেন মা হঠাৎ পর্দা দেবে ? তোমার তো দম বন্ধ হয়ে যায় । "

মলিনাদেবী রুটি চিবোতে চিবোতে বললেন, "যা দিনকাল পড়েছে , কাছাকাছি বাড়ি হয়ে সব ফাঁস হয়ে যাচ্ছে , নিজের ঘরে বসে কিছু করার জো নেই গো ----- যাচ্ছেতাই "।

পিউ রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে , হাসতে হাসতে বললো, " ঠিক আছে মা , কালকেই সব জানলায় পর্দা লাগিয়ে দেবো । তাহলে আর ঘরের কিছু বাইরে ফাঁস হবে না "।

(শর্মিষ্ঠা দিদি বললেন B:-) =p~ )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×