somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : পরেশদার পরোটা

২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


.
সকাল ছটায় টোটোয় করে স্টেশন চত্বরে পৌঁছাল পরেশ। টোটো থেকে চটপট নামিয়ে ফেলল মালগুলো। দুটো বড় হাঁড়ি, একটা ড্রাম, গোটা দুয়েক বালতি, হাতা, প্লাস্টিকের টুল ইত্যাদি। তাতে আছে ছশো পরোটা, আলুর দম, শশা-পেঁয়াজ কুঁচি, কাগজের প্লেট...
স্টেশন চত্বরেই একটা শেডের নীচে জিনিসগুলো সাজিয়ে নিল। আধ ঘন্টা লাগল সব গোছাতে। ততক্ষণে খদ্দেরের লাইন লেগে গেল।
মাল শেষ না হওয়া অবধি সে এখানেই দাঁড়িয়ে বিক্রি করবে। টুল একটা আছে কিন্তু বসা হয় না। এই এলাকায় পরেশের পরোটা আর আলুর-দমের বিশাল খ্যাতি। ঘন্টা চারেকেই শেষ হয়ে যায় বেশির ভাগ দিন। খুব বৃষ্টিবাদলায় স্টেশনে লোকজন কম থাকলে একটু বেশি সময় লাগে। সেও কালেভদ্রে।
প্রতিদিন ভালই লাভ হয়। বছর পনেরোর বিজনেস। প্রথমে এত চলত না। পরেশের মনে আছে প্রথম প্রথম পঞ্চাশটা পরোটাও বিক্রি হত না। আস্তে আস্তে ব্যবসা জমতে শুরু করল। তার পরোটা আর আলুর-দমের স্বাদ লোকে পছন্দ করতে লাগল। দেখতে দেখতে এখন পরোটার সংখ্যা ছশোতে দাঁড়িয়েছে। এক একদিন অতি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সামান্য দেরি করে এলেই খদ্দের পায় না। রেগুলারের খদ্দের রাগ করে বলে, "পরেশদা মাল বাড়াও। কত দূর থেকে তোমার পরোটা খেতে আসি, না খেয়েই ফিরব?"
কিন্তু বাড়াও বললেই হল নাকি! এত পরোটা বেলা, ভাজা, সে কী কম হ্যাপার কাজ! লোকে আর কী বুঝবে!
আর কটা বছর এভাবে চালাতে পারলে বাড়িটা হয়ে যাবে। জায়গা কেনা হয়েছে। অনেকটা জায়গা। এখন খুব কষ্ট করে থাকতে হয়। ছোট্ট দু কামরার ঘর। মা, বউ আর সে। ঘরের বারান্দা হল রসুইঘর। বড় বড় হাঁড়ি, কড়া, চাকি-বেলনা, তেলের টিন, ময়দার বস্তা, আলুর বস্তা ইত্যাদি মিলে বারান্দাটা দখল করে নিয়েছে।
.
আজ স্টেশন চত্বর একটু ফাঁকা। কীসের যেন ছুটি আজ। তাই অফিসের ডেলি প্যাসেঞ্জার কম। তাতেও পরেশের পরোটার বিক্রিতে কোনও কমতি নেই। ঘন্টা খানেকেই দুশো পরোটা উঠে গেল। এক প্লেট মানে দুটো বড় পরোটা, আলুর দম আর দু-টুকরো শশা পেঁয়াজ। সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা তো আছেই। অবশ্য দুশোর মধ্যে আশিটার মতো পার্সেল।
এই সময় ক্যামেরা ট্যামেরা নিয়ে একজন ফুড ভ্লগার হাজির হল। এই হয়েছে এখন এক জ্বালা। গাদাই ভ্লগার। অবশ্য এদের জন্যই তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এরাই তাকে ভাইরাল করে দিয়েছে। রোজ কত সুন্দর সুন্দর ছেলে-মেয়ে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। পরোটা খায় তারপর পরেশের সঙ্গে সেলফি তোলে, ভিডিও করে। সেই সব ছবি-ভিডিও আবার ফেসবুকে পোস্ট করে!
তাই আর নোংরা অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না পরেশ। ফিটফাট থাকতে হয়। মাঝে মাঝেই নতুন জামা-প্যান্ট কিনতে হয়। সেলুনে গিয়ে ফেসিয়াল-টেসিয়াল করতে হয়। গায়ে ডিও লাগাতে হয়।
সেদিন নতুন জামার একটা প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকতেই তার মা বলল, "এই সেদিনই তো একটা জামা কিনলি? আবার? কখনো বউমার জন্য তো একটা শাড়ি আনতে দেখি না?"
মাথা গরম হয়ে গেল পরেশের। এই গবেট মেয়েগুলো বিজনেসের কিছুই বোঝে না!
.
ভ্লগার বলল, "আপনি তো রীতিমতো সেলিব্রিটি মশাই! সারা বাংলায় আপনার পরোটার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে!"
পরেশ হেসে বলল, "লোকে নামটাই দেখে, এর পেছনে খাটুনিটা দেখে না। আমার কোনো কাজের লোক নেই। নিজের হাতেই যত্ন করে সব বানাই! কতদিন ভাল করে ঘুমাইনি, জানেন?"
ভ্লগার বলল, "সারা রাত জেগে রেডি করতে হয় নাকি?"
পরেশ বলল, "নাহলে রোজ এই সকাল ছটায় গরম পরোটা, আলুর দম, স্যালাড নিয়ে হাজির হই কী করে, বলেন?"
ভ্লগার ঘাড় নেড়ে বলল, "তা ঠিক।"
ভ্লগার পরোটা আলুর-দম খেয়ে ফিদা হয়ে গেল! বলল, "আপনার হাতে জাদু আছে! আহা কী অসাম টেস্ট! এই জন্যই এত নাম! কুর্নিশ আপনাকে..."
তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, "আজ আপনাদের দেখাব পরেশদার হাত, যে হাত দিয়ে প্রতিদিন ছশো সাতশো পরোটা বেলা হয়, ভাজা হয়, দেখুন দেখুন সেই হাত! সবাই পরেশদার তুলতুলে পরোটা আর সুস্বাদু আলুর দম দেখায় আর আমি দেখাচ্ছি সেই পরোটা আর আলুর দম যে হাত দিয়ে তৈরি হয় সেই হাত, এক রন্ধনশিল্পীর হাত। দেখুন আর লাইক দিন, শেয়ার করুন!"

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল পরেশের। বাথরুম যেতে হবে। বারান্দায় তখন তার ছেষট্টি বছরের বৃদ্ধা মা পরোটা ভাজছে, আর তার বউ বেলে দিচ্ছে। ওদিকে আর এক উনুনে আলুর দম হচ্ছে।
বাথরুমে যেতে যেতে পরেশ বলল, "দেখো না আর শ-দুয়েক পরোটা বাড়ানো যায় কি না?"
রাত জাগা পরিশ্রান্ত মা হেসে বলল, "ঠিক আছে রে, রাত দুটোয় শুরু করি, কাল থেকে নাহয় একটাতেই লেগে পড়ব, কীরে বউ পারবি তো?"
পরেশের বউ ঘাড় নেড়ে বলল, "পারব মা।"

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×